ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

আড়ালেই রয়ে যায় নারীদের জীবনযুদ্ধের গল্প

  • আপডেট সময় : ১০:৪৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

লাকী আক্তার : প্রতিটি নারী তার প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিনিয়ত কোন না কোনোভাব সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই সংগ্রাম উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত এমন কি সহায় সম্বলহীন নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। নি¤œবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বিয়ের পর বেশি অত্যাচারিত ও নিগৃহীত হন। কেউ শারীরিক, কেউ আবার নানাভাবে মানসিক নির‌্যাতনের শিকার হয়ে দিন কাটান। এদের বেশিরভাগ নির‌্যাতিত হয় যৌতুকের দাবিতে।
স্বাধীনতার ৫০বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে, অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো যৌতুকের দাবিতে আমাদের সমাজে নারীকে গলায় ফাঁস দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।আইন অঙ্গণের একজন মানুষ হিসেবে এমন অনেক ঘটনা দেখতে পেয়েছি। কিছু কিছু মর্মান্তিক ঘটনা শুনে শিউরে উঠেছি। আর ভেবেছি এমন পাষ- পুরুষদের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো কবে?
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা শিকার হন ইভটিজিংয়ের। অনেক মেয়েকে এজন্য জীবনও দিতে হয়েছে। অথচ দেশে ইভটিজিং বন্ধে আছে আইন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কড়াকড়ি আছে। নানা কর্মসূচিও পালন করা হয় ইভটিজিং প্রতিরোধে। কিন্তু কোনোভাবেই থামছে না এই ঘৃণ্য কাজ।
আমাদের সমাজে বড় নির‌্যাতনের শিকার হতে হয় গৃহকর্মীদের। সেলিব্রেটি হতে শুরু করে সমাজের বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধি অনেকের বাসায় গৃহকর্মীদের শারীরিকভাবে নির‌্যাতনের ঘটনা শোনা যায়। কোথাও এমনভাব নির‌্যাতন করা হয় যাতে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যায় মেয়েটি।
ঢাকার একটি যৌথ পরিবারে কাজ করা একজন গৃহকর্মীরর সঙ্গে পরিচয়সূত্রে কথা বলে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারলাম। ছোট বেলায় তার মা-বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে এই বাড়িতে থাকে। ২০-২২ বছর বয়সী মেয়েটি সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করেন। কিন্তু কাজে একটু ব্যাঘাত ঘটলেই শুরু হয় শারীরিক নির‌্যাতন। এখানেই শেষ নয়, বাসায় ভালো ভালো রান্না হলেও মেয়েটিকে খাবার দেয়া হয় পরিমাণে কম। তাও আবার আগের দিনের বাসী খাবার মেলে তার ভাগ্যে। ভাবা যায়- মানুষ কেমন পাষান হলে এমন কাজ করতে পারে? অথচ এত কষ্টের মধ্যেও মেয়েটির মুখে হাসি লেগেই থাকে।
কথার ফাঁকে জানতে চেয়েছিলাম এত কষ্টের পরও এখানে কেন থাকছে? বললো- ‘আমার তো কেউ নেই। এখন বড় হয়ে গেছি। কই যামু।’ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম আর ভাবলাম- মেয়েটি তার ইজ্জত ও সম্মানের কথা চিন্তা করে এত কষ্ট নীরবে সহ্য করছে বছরের পর বছর। অথচ চাইলে এই পরিবারটি মেয়েটিকে স্নেহ দিয়ে সন্তানের মতো করে রাখতে পারে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে স্বামী পরিত্যক্তা ছিন্নমূল একজন নারীর জীবন সংগ্রামের গল্পটা আরো নির্মম। সম্প্রতি টেলিভিশনের খবরে দেখলাম বাবা সন্তানের খোঁজ না নিলেও ওই মমতাময়ী মা তার শিশু সন্তানকে ঠিকই আগলে রেখেছেন বুকে। রাস্তায় দিন কাটানো এই মা সন্তানের পা রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন ফুটপাতের গ্রিলের সঙ্গে। কী খেয়ে দিন কাটাবেন সে জন্য সন্তানকে এভাবে রেখে এদিক-ওদিক ছোঁটেন এই সংগ্রামী মা। এভাবেই হয়তো তার দিন কেটে যাবে। একদিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পারি জমাবেন। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর?
এবার আসি নারী দিবসের প্রসঙ্গে। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ৮ মার্চ কত অনারম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। কিন্তু জীবনযুদ্ধে থাকা নারীদের এমন ঘটনাগুলো অনেকটা আড়ালেই রয়ে যায়।

তবুও পুরুষশাসিত এই সমাজের মানুষগুলো এই দিবসটির মর্ম কতটা অনুধাবন করবেন সেটাই ভাবনার বিষয়। তবুও নারীদের মুক্তির অপেক্ষায় থাকতে চাই। প্রত্যাশা করি যোগ্যতা অনুযায়ী নারীরা সামাজিক মর‌্যাদা পাবেন। বন্ধ হবে নির‌্যাতন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আড়ালেই রয়ে যায় নারীদের জীবনযুদ্ধের গল্প

আপডেট সময় : ১০:৪৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মার্চ ২০২২

লাকী আক্তার : প্রতিটি নারী তার প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিনিয়ত কোন না কোনোভাব সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই সংগ্রাম উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত এমন কি সহায় সম্বলহীন নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। নি¤œবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বিয়ের পর বেশি অত্যাচারিত ও নিগৃহীত হন। কেউ শারীরিক, কেউ আবার নানাভাবে মানসিক নির‌্যাতনের শিকার হয়ে দিন কাটান। এদের বেশিরভাগ নির‌্যাতিত হয় যৌতুকের দাবিতে।
স্বাধীনতার ৫০বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে, অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো যৌতুকের দাবিতে আমাদের সমাজে নারীকে গলায় ফাঁস দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।আইন অঙ্গণের একজন মানুষ হিসেবে এমন অনেক ঘটনা দেখতে পেয়েছি। কিছু কিছু মর্মান্তিক ঘটনা শুনে শিউরে উঠেছি। আর ভেবেছি এমন পাষ- পুরুষদের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো কবে?
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা শিকার হন ইভটিজিংয়ের। অনেক মেয়েকে এজন্য জীবনও দিতে হয়েছে। অথচ দেশে ইভটিজিং বন্ধে আছে আইন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কড়াকড়ি আছে। নানা কর্মসূচিও পালন করা হয় ইভটিজিং প্রতিরোধে। কিন্তু কোনোভাবেই থামছে না এই ঘৃণ্য কাজ।
আমাদের সমাজে বড় নির‌্যাতনের শিকার হতে হয় গৃহকর্মীদের। সেলিব্রেটি হতে শুরু করে সমাজের বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধি অনেকের বাসায় গৃহকর্মীদের শারীরিকভাবে নির‌্যাতনের ঘটনা শোনা যায়। কোথাও এমনভাব নির‌্যাতন করা হয় যাতে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে যায় মেয়েটি।
ঢাকার একটি যৌথ পরিবারে কাজ করা একজন গৃহকর্মীরর সঙ্গে পরিচয়সূত্রে কথা বলে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারলাম। ছোট বেলায় তার মা-বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে এই বাড়িতে থাকে। ২০-২২ বছর বয়সী মেয়েটি সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করেন। কিন্তু কাজে একটু ব্যাঘাত ঘটলেই শুরু হয় শারীরিক নির‌্যাতন। এখানেই শেষ নয়, বাসায় ভালো ভালো রান্না হলেও মেয়েটিকে খাবার দেয়া হয় পরিমাণে কম। তাও আবার আগের দিনের বাসী খাবার মেলে তার ভাগ্যে। ভাবা যায়- মানুষ কেমন পাষান হলে এমন কাজ করতে পারে? অথচ এত কষ্টের মধ্যেও মেয়েটির মুখে হাসি লেগেই থাকে।
কথার ফাঁকে জানতে চেয়েছিলাম এত কষ্টের পরও এখানে কেন থাকছে? বললো- ‘আমার তো কেউ নেই। এখন বড় হয়ে গেছি। কই যামু।’ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম আর ভাবলাম- মেয়েটি তার ইজ্জত ও সম্মানের কথা চিন্তা করে এত কষ্ট নীরবে সহ্য করছে বছরের পর বছর। অথচ চাইলে এই পরিবারটি মেয়েটিকে স্নেহ দিয়ে সন্তানের মতো করে রাখতে পারে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে স্বামী পরিত্যক্তা ছিন্নমূল একজন নারীর জীবন সংগ্রামের গল্পটা আরো নির্মম। সম্প্রতি টেলিভিশনের খবরে দেখলাম বাবা সন্তানের খোঁজ না নিলেও ওই মমতাময়ী মা তার শিশু সন্তানকে ঠিকই আগলে রেখেছেন বুকে। রাস্তায় দিন কাটানো এই মা সন্তানের পা রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন ফুটপাতের গ্রিলের সঙ্গে। কী খেয়ে দিন কাটাবেন সে জন্য সন্তানকে এভাবে রেখে এদিক-ওদিক ছোঁটেন এই সংগ্রামী মা। এভাবেই হয়তো তার দিন কেটে যাবে। একদিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পারি জমাবেন। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর?
এবার আসি নারী দিবসের প্রসঙ্গে। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ৮ মার্চ কত অনারম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। কিন্তু জীবনযুদ্ধে থাকা নারীদের এমন ঘটনাগুলো অনেকটা আড়ালেই রয়ে যায়।

তবুও পুরুষশাসিত এই সমাজের মানুষগুলো এই দিবসটির মর্ম কতটা অনুধাবন করবেন সেটাই ভাবনার বিষয়। তবুও নারীদের মুক্তির অপেক্ষায় থাকতে চাই। প্রত্যাশা করি যোগ্যতা অনুযায়ী নারীরা সামাজিক মর‌্যাদা পাবেন। বন্ধ হবে নির‌্যাতন।