নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ৬০ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। রোগীর চাপে সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই। আরো ১০-১৫ জন রোগী সেখানে ভর্তি করার সক্ষমতা আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। সোমবার (২১ জুলাই) হাসপাতাল পরিদর্শন শেষ তিনি এ তথ্য জানান।
এদিকে দুপুর থেকেই হাসপাতালের সামনে এবং ভেতরে অগণিত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কেউ এসেছেন আহতদের খোঁজে, কেউ রক্ত দিতে। আবার কেউ যাওয়া-আসার পথ সুগম করার জন্য স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করছেন। এ সময় রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে দেখা গেছে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের। তাদের সহায়তার জন্য আরো বিশেষজ্ঞ এবং টিম সেখানে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সায়েদুর রহমান। এদিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় জরুরি প্রয়োজনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে ইমার্জেন্সি হটলাইন চালু করা হয়েছে। হটলাইন নম্বর-০১৯৪৯০৪৩৬৯৭।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, এটা একটি বড় ধরনের ঘটনা। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে, সব বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা করছেন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজও যোগাযোগের মধ্যে আছে। রোগীদের ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এখানে ৬০ জনের মতো ভর্তি করা হয়েছে। আরো ১০-১৫ জন ভর্তি করার মতো সক্ষমতা এখানে আছে। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল প্রস্তুত আছে। এরপর যারা আসবেন, তাদের সেখানে নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এখানে ৬০ জনকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার মধ্যে ৩০-৩৫ জনকে ভেতরে স্থানান্তর করা হয়েছে। শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের হয়েছে। এখানে নিয়ে আসাদের মধ্যে একজন মারা গেছে, এছাড়া উত্তরায় মারা গেছে দুজন। এই ৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখানে ৬০ জনের মধ্যে অনেকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে।
রক্ত দিতে মানুষের ঢল: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের জন্য পুরো জাতি যখন শোকে স্তব্ধ, ঠিক তখনই এক মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সাধারণ মানুষ। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আহতদের জীবন বাঁচাতে রক্তদানের জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মানুষের ঢল নেমেছে। এই ভয়াবহ মুহূর্তে অসংখ্য মানুষ স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন, যা দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দগ্ধদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন মেটাতে হাসপাতাল চত্বরে নেমেছে মানুষের ঢল। তবে পজিটিভ রক্তের পর্যাপ্ত সংখ্যক ডোনার থাকলেও নেগেটিভ গ্রুপগুলোর রক্তের সংকট রয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, দগ্ধ রোগীদের অনেকেই ৫০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছেন। তাদের চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই খবরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। হাসপাতালের গেটের বাইরে রক্তদাতাদের দীর্ঘ সারি। অনেকে আবার একসঙ্গে একাধিকজনকে নিয়ে এসেছেন। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তদাতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সংবাদ দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। বাসা থেকে স্ত্রীকেও সঙ্গে এনেছি। উনি ও পজিটিভ, আমি বি নেগেটিভ- যার যেখানে দরকার হবে, রক্ত দিতে রাজি আছি।’ অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রক্তের আবেদন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন রক্তদান সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রক্ত দিতে ভিড় করছেন বার্ন ইনস্টিটিউটে।
‘নেগেটিভ’ রক্তের জন্য হাহাকার: উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ ও আহতদের রক্ত দিতে হাসপাতালে ভিড় করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে বিপুলসংখ্যক রক্তদাতার মাঝেও সংকট দেখা দিয়েছে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের-যার জন্য চলছে হাহাকার।
সোমবার (২১ জুলাই) সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বার্ণ ইন্সটিটিউট ঘুরে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকে নেগেটিভ গ্রুপের ব্লাড খুঁজছেন। যাদের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপের,তাদের এগিয়ে আসতে বলছেন। রক্তের গ্রুপ নিশ্চিত হওয়ার জন্য অস্থায়ী বুথে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষাও চলছে।
স্বেচ্ছাসেবক নুরুননবী জানান, আমাদের হাতে পজিটিভ ব্লাড অনেক আছে। কিন্তু নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত খুবই কম। বেশিরভাগ আহতের রক্তের প্রয়োজন মেটাতে গেলে নেগেটিভ গ্রুপ দরকার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অল্প পরিমানে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত পাওয়া গেছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আমাদের আরো রক্তের প্রয়োজন।
একাধিক স্বেচ্ছাসেবক জানান, যাদের রক্ত নেগেটিভ গ্রুপের, তাদের বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হচ্ছে হাসপাতালে এসে রক্ত দিতে। সরাসরি সাড়া তুলনামূলক কম হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ফোনে, পরিচিতদের মাধ্যমে রক্তদাতা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এর আগে বেলা দেড়টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর মাইলস্টোন স্কুলের ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। ভবনটির নাম হায়দার হল বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছে শতাধিক। বিকেলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদার এ তথ্য জানান।
ছাত্রশিবিরের শোক, জরুরি রক্ত সংগ্রহে হেল্পলাইন চালু: রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার (২১ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল মো. নূরুল ইসলাম সাদ্দাম শোক প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই মডেলের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও উদ্বিগ্ন। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করা বিমানটি মেট্রোরেলের ডিপোর পাশে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের অভ্যন্তরে বিধ্বস্ত হয়। নেতারা বলেন, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অনেক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিট, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ‘আমরা নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
নেতারা বলেন, আকস্মিক এ দুর্ঘটনায় আহতদের জীবন বাঁচাতে রক্ত ও জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। তাই আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে ছাত্রশিবিরের সব জনশক্তি ও দেশবাসীর দোয়ার পাশাপাশি আহতদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে গিয়ে রক্তদান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।
জরুরি রক্তের জন্য হেল্পলাইন চালু: শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য জরুরি রক্তের প্রয়োজন। ডোনারদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জরুরি ভিত্তিতে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। হেল্পলাইন: মিকদাদ :০১৮৯৪৩২৮৭৭৫, আরাবী: ০১৫৪০০৫৬৬৯৭।