নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে অভিজ্ঞতা ছাড়াই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভুয়া ঠিকানার কাগজপত্র দিয়ে আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেওয়ার কাজ করছিল একটি চক্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের আড়ালে বিভিন্ন অপরাধীরা কোনো ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই দালালদের মাধ্যমে লাইসেন্স সংগ্রহ করছিল। এভাবে বৈধ লাইসেন্স ব্যবহারের ফলে চালকদের হাতে সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন চক্র খাদ্য ও গার্মেন্টস পণ্য চুরি এবং সড়কে দুর্র্ধষ ডাকাতির ঘটনা ঘটছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ও ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দালাল চক্রের সদস্যদের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত দালাল সদস্যরা হলেন- লিটন পাইক (৪০), সুজন পাইক (২৯), হাসান শেখ ওরফে আকচান (৪১), মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার (৫১), হুমায়ুন করিব (৩৮), আব্দুল খালেক (৩১), আব্দুল্লাহ রনি (২৩), সোহেল রানা (২৩), সোহাগ (২৩), মো. নুরনবী (৩৮), হুমায়ুন কবির।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ও চুরি, ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে রাজধানীর মিরপুরে মাজার রোড এলাকায় একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে কয়েকজন দালাল মিলে নিজেরাই বিআরটিএ অফিস খুলে বসেছে। এই অফিসে বসে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদনের পুলিশ ভেরিফিকেশন, ডোপ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেওয়া হতো। আর এই সকল ভুয়া নথি দিয়েই দালালরা টাকার বিনিময়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে নিত।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, এই সকল লাইসেন্স আসল হলেও ব্যবহারকারী ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য ছিল ভুয়া। ফলে তারা সড়কে গাড়ি চালানোর নাম করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যেত। এই দালাল চক্রের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে দালালদের কাছ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের প্রায় দুই শতাধিক ফরম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ফরমে আবেদনকারীদের ছবি সংবলিত তথ্য, বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম, এনামুল হক ইমন নামের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সিল রয়েছে। এই সকল গুরুত্বপূর্ণ ভুয়া নথি তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার, প্রিন্টার ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত দালাল সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সিলমোহরযুক্ত ও স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে সেগুলো দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে আসছিলেন তারা। সারাদেশে ১৪২টি ড্রাইভিং লাইসেন্স স্কুল আছে। এদের অধিকাংশ এধরনের কাজে যুক্ত। তারা বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগসাজশ করে কোনো প্রকার ট্রেনিং ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতেন। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভার, দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ড্রাইভিং স্কুলগুলো প্রশিক্ষণের প্যাকেজ হিসেবে অনেক সময় লাইসেন্স করে দেওয়ার চুক্তি করে। এই সুযোগে বিভিন্ন অপরাধী চক্র লাইসেন্স করে নিচ্ছে। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি। পাশাপাশি কয়েকজন কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স বানানোর দালাল তারা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ