ঢাকা ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫

আসন্ন বাজেটে কষ্টের আশঙ্কা

  • আপডেট সময় : ০৭:১৮:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর কাঠামো ও রাজস্ব আদায়ের বিভিন্ন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই বাজেট হতে পারে এক কঠিন বাস্তবতার নাম। বাজেট প্রস্তাবে একদিকে কিছু স্বস্তির উদ্যোগ থাকলেও অপরদিকে রয়েছে করহার বৃদ্ধি, পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ও বিনিয়োগে উৎসে কর বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ।

মধ্যবিত্তের ওপর করের বাড়তি বোঝা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রের বরাত দিয়ে একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে করযোগ্য আয়ের প্রথম ধাপে করহার ৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

নতুন কাঠামো অনুযায়ী করযোগ্য আয়ের প্রথম ধাপের সীমা বাড়িয়ে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা করা হবে। ফলে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত হলেও তার বেশি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর বসবে, যা মূলত মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা হলে তার করযোগ্য আয় হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে এই আয়ের ওপর কর ৮ হাজার টাকা হলেও প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা-অর্থাৎ কর বাড়বে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

নতুন করদাতাদের জন্য স্বস্তির বার্তা: প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীদের জন্য বাজেটে বিশেষ সুবিধা রাখা হচ্ছে। এদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কর ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে। এর মাধ্যমে করনীতিতে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো ও করভীতি দূর করার চেষ্টা করছে সরকার।

বিনিয়োগেও বাড়ছে করের চাপ: সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই বিনিয়োগ মাধ্যম সাধারণত মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের কাছে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। ফলে এই সিদ্ধান্তে ওই শ্রেণির মানুষের আয়েও চাপ বাড়বে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কিছুটা স্বস্তি: নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানিতে স্থানীয় ঋণপত্রের (এলসি) কমিশনের ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর আওতায় পড়বে ধান, গম, পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ভোজ্যতেলসহ ২৫টির বেশি খাদ্যপণ্য। এছাড়া কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ, ফলমূল আমদানির ওপর কর হ্রাসের মাধ্যমে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উৎসে কর কমানো: ধান, গম, ডাল, তেল, চিনি, মসলা ও ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে ঋণপত্রের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নামানো হচ্ছে।

শর্ত শিথিল ও জরিমানা কমানো: আমদানি-রফতানিতে ছোটখাটো ভুলে জরিমানার পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব থাকছে। আইপিও লঙ্ঘন, কার্গো ঘোষণায় ভুলের জরিমানাও শিথিল হতে পারে।
এআইটি বসছে ১৫০ পণ্যে: আয়কর ফাঁকি রোধে আলু, পেঁয়াজ, ডাল, চিনি, কাপড়, আইটি পণ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ১৫০টি আমদানি পণ্যে ২% হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হচ্ছে, যা রিটার্নে সমন্বয়যোগ্য।

কর চাপ, মূল্যস্ফীতির শঙ্কা: অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাজেটে ভ্যাট, শুল্ক ও উৎসে কর বাড়ানো হলে নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ আরো বিপদে পড়বে। সরকারি সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে চাপে রয়েছে।

জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি কম।

প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ, পরিবেশবান্ধব পণ্যে ছাড়: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে রান্নাঘর ও টেবিলওয়্যার পণ্যের ওপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। অপরদিকে, পোড়া মাটি, পচনশীল উপকরণ ও গাছের পাতাজাত পণ্যের ওপর ভ্যাট মওকুফের চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া সুপারি, শাল, সিয়ালি ও পলাশ পাতার তৈরি পণ্যের কাঁচামালের জন্য পৃথক হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড প্রবর্তন ও শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার ও শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করা জরুরি। প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।’

শিল্প-উদ্যোগীদের উদ্বেগ: বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভ্যাট দ্বিগুণ হলে এই খাতের পণ্যের দাম বাড়বে, বিক্রি কমবে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।’ তিনি সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। এনবিআর যদিও মনে করে, এই খাতটি এখন শক্তিশালী এবং কর ছাড়ের সুবিধা অনেক দিন ভোগ করেছে।
এসি ও ফ্রিজেও ভ্যাট বাড়তে পারে: রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) ওপর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার চিন্তা করছে সরকার। এর ফলে এই পণ্যগুলোর দাম বাড়তে পারে, যা মধ্যবিত্তের বাজেটে বাড়তি চাপ ফেলবে।

আমদানিতে বাড়তি করের চাপ: আমদানি পণ্যের ওপরও বাড়ছে করের বোঝা। বাণিজ্যিক আমদানিতে অগ্রিম কর (এআইটি) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। ফল, পোশাক, শিশুখাদ্য, সিরামিকস ও রিকন্ডিশন্ড গাড়িসহ বহু পণ্য এর আওতায় পড়বে। এছাড়া মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাবও বাজেটে আসতে পারে-যা বিশেষ করে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করবে।
ভারসাম্যহীনতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট রাজস্ব আদায়ে আগ্রহী হলেও তা জনজীবনে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি একদিকে করের চাপ, অপরদিকে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে পড়বে। যদিও সরকার পরিবেশবান্ধব পণ্য ও করনীতিতে অন্তর্ভুক্তির মতো কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবু বাজেটের সামগ্রিক প্রভাব সাধারণ মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আসন্ন বাজেটে কষ্টের আশঙ্কা

আপডেট সময় : ০৭:১৮:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর কাঠামো ও রাজস্ব আদায়ের বিভিন্ন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই বাজেট হতে পারে এক কঠিন বাস্তবতার নাম। বাজেট প্রস্তাবে একদিকে কিছু স্বস্তির উদ্যোগ থাকলেও অপরদিকে রয়েছে করহার বৃদ্ধি, পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ও বিনিয়োগে উৎসে কর বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ।

মধ্যবিত্তের ওপর করের বাড়তি বোঝা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রের বরাত দিয়ে একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে করযোগ্য আয়ের প্রথম ধাপে করহার ৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

নতুন কাঠামো অনুযায়ী করযোগ্য আয়ের প্রথম ধাপের সীমা বাড়িয়ে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা করা হবে। ফলে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত হলেও তার বেশি আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর বসবে, যা মূলত মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা হলে তার করযোগ্য আয় হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে এই আয়ের ওপর কর ৮ হাজার টাকা হলেও প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা-অর্থাৎ কর বাড়বে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

নতুন করদাতাদের জন্য স্বস্তির বার্তা: প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীদের জন্য বাজেটে বিশেষ সুবিধা রাখা হচ্ছে। এদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কর ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে। এর মাধ্যমে করনীতিতে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো ও করভীতি দূর করার চেষ্টা করছে সরকার।

বিনিয়োগেও বাড়ছে করের চাপ: সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই বিনিয়োগ মাধ্যম সাধারণত মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের কাছে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। ফলে এই সিদ্ধান্তে ওই শ্রেণির মানুষের আয়েও চাপ বাড়বে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কিছুটা স্বস্তি: নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানিতে স্থানীয় ঋণপত্রের (এলসি) কমিশনের ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর আওতায় পড়বে ধান, গম, পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ভোজ্যতেলসহ ২৫টির বেশি খাদ্যপণ্য। এছাড়া কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ, ফলমূল আমদানির ওপর কর হ্রাসের মাধ্যমে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উৎসে কর কমানো: ধান, গম, ডাল, তেল, চিনি, মসলা ও ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে ঋণপত্রের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নামানো হচ্ছে।

শর্ত শিথিল ও জরিমানা কমানো: আমদানি-রফতানিতে ছোটখাটো ভুলে জরিমানার পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব থাকছে। আইপিও লঙ্ঘন, কার্গো ঘোষণায় ভুলের জরিমানাও শিথিল হতে পারে।
এআইটি বসছে ১৫০ পণ্যে: আয়কর ফাঁকি রোধে আলু, পেঁয়াজ, ডাল, চিনি, কাপড়, আইটি পণ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ১৫০টি আমদানি পণ্যে ২% হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হচ্ছে, যা রিটার্নে সমন্বয়যোগ্য।

কর চাপ, মূল্যস্ফীতির শঙ্কা: অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাজেটে ভ্যাট, শুল্ক ও উৎসে কর বাড়ানো হলে নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ আরো বিপদে পড়বে। সরকারি সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে চাপে রয়েছে।

জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি কম।

প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ, পরিবেশবান্ধব পণ্যে ছাড়: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে রান্নাঘর ও টেবিলওয়্যার পণ্যের ওপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। অপরদিকে, পোড়া মাটি, পচনশীল উপকরণ ও গাছের পাতাজাত পণ্যের ওপর ভ্যাট মওকুফের চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া সুপারি, শাল, সিয়ালি ও পলাশ পাতার তৈরি পণ্যের কাঁচামালের জন্য পৃথক হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড প্রবর্তন ও শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার ও শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করা জরুরি। প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।’

শিল্প-উদ্যোগীদের উদ্বেগ: বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভ্যাট দ্বিগুণ হলে এই খাতের পণ্যের দাম বাড়বে, বিক্রি কমবে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।’ তিনি সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। এনবিআর যদিও মনে করে, এই খাতটি এখন শক্তিশালী এবং কর ছাড়ের সুবিধা অনেক দিন ভোগ করেছে।
এসি ও ফ্রিজেও ভ্যাট বাড়তে পারে: রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) ওপর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার চিন্তা করছে সরকার। এর ফলে এই পণ্যগুলোর দাম বাড়তে পারে, যা মধ্যবিত্তের বাজেটে বাড়তি চাপ ফেলবে।

আমদানিতে বাড়তি করের চাপ: আমদানি পণ্যের ওপরও বাড়ছে করের বোঝা। বাণিজ্যিক আমদানিতে অগ্রিম কর (এআইটি) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। ফল, পোশাক, শিশুখাদ্য, সিরামিকস ও রিকন্ডিশন্ড গাড়িসহ বহু পণ্য এর আওতায় পড়বে। এছাড়া মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাবও বাজেটে আসতে পারে-যা বিশেষ করে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করবে।
ভারসাম্যহীনতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে বাজেট: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট রাজস্ব আদায়ে আগ্রহী হলেও তা জনজীবনে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি একদিকে করের চাপ, অপরদিকে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে পড়বে। যদিও সরকার পরিবেশবান্ধব পণ্য ও করনীতিতে অন্তর্ভুক্তির মতো কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবু বাজেটের সামগ্রিক প্রভাব সাধারণ মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ