ঢাকা ০১:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

আসছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড়, বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা হুমকিতে!

  • আপডেট সময় : ১১:২৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১২৩ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভয়ঙ্কর সৌরঝড় বা ‘সোলার স্টর্ম’ আসছে। যার ফলে ভেঙে পড়তে পারে সারা বিশ্বের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তা বেশ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ধরনের সৌরঝড়কে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘করোনাল ম্যাস ইজেকশান (সিএমই)’। যা পুরো সৌরম-লের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
যুক্তরাষ্ট্রের আরভিনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই অশনিসঙ্কেত দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউ পর্যায় পেরিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গত মঙ্গলবার অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আসন্ন সৌরঝড়ের মতো ভয়ঙ্কর দুর্যোগ বা সৌরঝড় আধুনিক বিশ্ব দেখেছিল ১৮৫৯ এবং ১৯২১ সালে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, ১০০ বছর পর ফের ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের মুখোমুখি হতে চলেছে পৃথিবী।
১৯২১ সালে ভয়ঙ্কর ওসই সৌরঝড় আছড়ে পড়ায় পৃথিবীর যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা অভূতপূর্ব। বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম ‘ক্যারিংটন অ্যাফেক্ট’। সেই সৌরঝড়ের ঝাপটায় পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রে বড় বড় ফাটল ধরেছিল। আর তার ফাঁক দিয়ে ঢুকেছিল অত্যন্ত বিষাক্ত সৌরকণা আর মহাজাগতিক রশ্মি।
টেলিগ্রাফের তার সশব্দে ফেটে গিয়ে দাউদাউ করে জ্বলেছিল দীর্ঘ সময় ধরে। যে মেরুজ্যোতি (‘অরোরা’) শুধু পৃথিবীর দুই মেরুতেই দেখা যায় সাধারণত, সৌরঝড়ের প্রবল ঝাপটায় সে বার তা বিষুবরেখার নিচে থাকা কলোম্বিয়াতেও দেখা গিয়েছিল। খুব উজ্জ্বল ভাবে। গবেষকরা লিখেছেন, ‘এমন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় বা সিএমই’র পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রতি দশকে থাকে ১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ। এ বার তেমনই একটি সিএমই’র ঝাপটা সইতে হতে পারে পৃথিবীকে। যার সম্ভাবনা খুব বেশি।’ ১৮৫৯ এবং ১৯২১ সালের মতো তীব্রতায় অতটা না হলেও ১৯৮৯ সালের মার্চে যে সিএমই ধেয়ে এসেছিল পৃথিবীর দিকে তার ঝাপটায় কানাডার পুরো কুইবেক প্রদেশে টানা ৯ ঘণ্টা ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে গিয়েছিল।
পৃথিবীর চার পাশে থাকা শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রই সৌরঝড়-সহ সূর্য থেকে ছুটে আসা নানা ধরনের পদার্থের হাত থেকে বাঁচায় আমাদের। দুই মেরুতে চৌম্বক ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকে বলে সৌরকণারা ধেয়ে এলে তাদের বেশির ভাগকেই ফিরিয়ে দেয় দুই মেরুর চৌম্বক ক্ষেত্র। সেই সংঘর্ষেই মেরুজ্যোতির জন্ম হয়। পৃথিবীসহ সৌরম-লের সব গ্রহের দিকেই ধেয়ে যায় এই সৌরঝড়।
যে গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র প্রায় নেই বা খুব পাতলা, নেই বায়ুম-লও সেই গ্রহকে এই ঝাপটা বেশি সহ্য করতে হয়। তাই কোনো কালে প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব হলেও সেখানে তা টিকে থাকতে পারেনি মঙ্গল গ্রহে। তার চার পাশে চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রায় নেই বলে। এছাড়া সেখানকার বায়ুম-লও খুব পাতলা।
মূল গবেষক, আরভিনের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সঙ্গীতা আবদু জ্যোতি বলেছেন, ‘যেটা সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় তা হলো, আমরা মহামারির জন্য যেমন আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, সূর্যের বায়ুম-লে (করোনা) কখন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় উঠবে তার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় এখনও। তবে এটুকু বলা যায়, সেই ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে অন্তত ১৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।’
গবেষণাপত্রটিতে আরও বলা হয়েছে, আধুনিক ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থার ওপর এ বারের সিএমই’র আঘাত কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে কোনো বাড়তি তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। কারণ, এর আগে ১৯২১ সালে যখন এমন ভয়ঙ্কর সিএমই পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়েছিল তখন পৃথিবীতে ইন্টারনেট ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি।
গবেষকদের আশঙ্কা, এ বার যে ভয়ঙ্কর সিএমই আসছে পৃথিবীর দিকে তার কারণে সমুদ্রের নীচ দিয়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে যাওয়া ইন্টারনেটের যাবতীয় তার খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বার্তার গতি বাড়াতে এই ইন্টারনেট তার বা কবেলগুলোতে ৩০ থেকে ৯০ মাইল অন্তর বসানো থাকে ‘রিপিটার’।
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র স্বাভাবিক না থাকলে এই রিপিটারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। একটি রিপিটার ক্ষতিগ্রস্ত হলেই ভেঙে পড়ে সেই লাইনের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা। দেশের মধ্যে ইন্টারনেট যোগাযোগের কেবলগুলোর মতো সমুদ্রের নীচে থাকা এই কেবলগুলো ফাইবার দিয়ে বানানো হয় না। তাই সেগুলোর নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে আরও বেশি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বার্ন ইউনিটে ৩৩ জন ভর্তি, ৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন

আসছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড়, বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা হুমকিতে!

আপডেট সময় : ১১:২৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভয়ঙ্কর সৌরঝড় বা ‘সোলার স্টর্ম’ আসছে। যার ফলে ভেঙে পড়তে পারে সারা বিশ্বের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর তা বেশ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই ধরনের সৌরঝড়কে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘করোনাল ম্যাস ইজেকশান (সিএমই)’। যা পুরো সৌরম-লের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
যুক্তরাষ্ট্রের আরভিনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই অশনিসঙ্কেত দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউ পর্যায় পেরিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গত মঙ্গলবার অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আসন্ন সৌরঝড়ের মতো ভয়ঙ্কর দুর্যোগ বা সৌরঝড় আধুনিক বিশ্ব দেখেছিল ১৮৫৯ এবং ১৯২১ সালে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, ১০০ বছর পর ফের ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের মুখোমুখি হতে চলেছে পৃথিবী।
১৯২১ সালে ভয়ঙ্কর ওসই সৌরঝড় আছড়ে পড়ায় পৃথিবীর যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা অভূতপূর্ব। বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম ‘ক্যারিংটন অ্যাফেক্ট’। সেই সৌরঝড়ের ঝাপটায় পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্রে বড় বড় ফাটল ধরেছিল। আর তার ফাঁক দিয়ে ঢুকেছিল অত্যন্ত বিষাক্ত সৌরকণা আর মহাজাগতিক রশ্মি।
টেলিগ্রাফের তার সশব্দে ফেটে গিয়ে দাউদাউ করে জ্বলেছিল দীর্ঘ সময় ধরে। যে মেরুজ্যোতি (‘অরোরা’) শুধু পৃথিবীর দুই মেরুতেই দেখা যায় সাধারণত, সৌরঝড়ের প্রবল ঝাপটায় সে বার তা বিষুবরেখার নিচে থাকা কলোম্বিয়াতেও দেখা গিয়েছিল। খুব উজ্জ্বল ভাবে। গবেষকরা লিখেছেন, ‘এমন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় বা সিএমই’র পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রতি দশকে থাকে ১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ। এ বার তেমনই একটি সিএমই’র ঝাপটা সইতে হতে পারে পৃথিবীকে। যার সম্ভাবনা খুব বেশি।’ ১৮৫৯ এবং ১৯২১ সালের মতো তীব্রতায় অতটা না হলেও ১৯৮৯ সালের মার্চে যে সিএমই ধেয়ে এসেছিল পৃথিবীর দিকে তার ঝাপটায় কানাডার পুরো কুইবেক প্রদেশে টানা ৯ ঘণ্টা ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে গিয়েছিল।
পৃথিবীর চার পাশে থাকা শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রই সৌরঝড়-সহ সূর্য থেকে ছুটে আসা নানা ধরনের পদার্থের হাত থেকে বাঁচায় আমাদের। দুই মেরুতে চৌম্বক ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকে বলে সৌরকণারা ধেয়ে এলে তাদের বেশির ভাগকেই ফিরিয়ে দেয় দুই মেরুর চৌম্বক ক্ষেত্র। সেই সংঘর্ষেই মেরুজ্যোতির জন্ম হয়। পৃথিবীসহ সৌরম-লের সব গ্রহের দিকেই ধেয়ে যায় এই সৌরঝড়।
যে গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র প্রায় নেই বা খুব পাতলা, নেই বায়ুম-লও সেই গ্রহকে এই ঝাপটা বেশি সহ্য করতে হয়। তাই কোনো কালে প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব হলেও সেখানে তা টিকে থাকতে পারেনি মঙ্গল গ্রহে। তার চার পাশে চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রায় নেই বলে। এছাড়া সেখানকার বায়ুম-লও খুব পাতলা।
মূল গবেষক, আরভিনের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সঙ্গীতা আবদু জ্যোতি বলেছেন, ‘যেটা সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় তা হলো, আমরা মহামারির জন্য যেমন আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, সূর্যের বায়ুম-লে (করোনা) কখন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় উঠবে তার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় এখনও। তবে এটুকু বলা যায়, সেই ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে অন্তত ১৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।’
গবেষণাপত্রটিতে আরও বলা হয়েছে, আধুনিক ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থার ওপর এ বারের সিএমই’র আঘাত কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে কোনো বাড়তি তথ্য বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। কারণ, এর আগে ১৯২১ সালে যখন এমন ভয়ঙ্কর সিএমই পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়েছিল তখন পৃথিবীতে ইন্টারনেট ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি।
গবেষকদের আশঙ্কা, এ বার যে ভয়ঙ্কর সিএমই আসছে পৃথিবীর দিকে তার কারণে সমুদ্রের নীচ দিয়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে যাওয়া ইন্টারনেটের যাবতীয় তার খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বার্তার গতি বাড়াতে এই ইন্টারনেট তার বা কবেলগুলোতে ৩০ থেকে ৯০ মাইল অন্তর বসানো থাকে ‘রিপিটার’।
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র স্বাভাবিক না থাকলে এই রিপিটারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। একটি রিপিটার ক্ষতিগ্রস্ত হলেই ভেঙে পড়ে সেই লাইনের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা। দেশের মধ্যে ইন্টারনেট যোগাযোগের কেবলগুলোর মতো সমুদ্রের নীচে থাকা এই কেবলগুলো ফাইবার দিয়ে বানানো হয় না। তাই সেগুলোর নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে আরও বেশি।