ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

আসছে ঈদ, বাড়ছে করোনা, শঙ্কায় খামারিরা

  • আপডেট সময় : ১০:২১:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১
  • ১১৯ বার পড়া হয়েছে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ গরুর পরিচর্যা করছেন খামারিরা। কিন্তু গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বাজার মন্দা, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় পশুর হাট স্থাপনে বিধিনিষেধসহ ইত্যাদি কারণে খামারিদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। গতবারের মতো এবারও তারা ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তবে ক্ষতি এড়াতে ব্যবসায়ীদের অনলাইনে গরু বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
সূত্র বলছে, ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলায় গরুর খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। খামারের গরুগুলো প্রতি বছরই দেশের বিভিন্নস্থানে কোরবানির পশুর চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও প্রস্তুত খামারিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কিছু মৌসুমী খামারি মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অবৈধ স্টেরয়েড হরমোন ব্যাবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজা করত। কিন্তু এই কাজে জনসচেতনতা ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের তৎপরতার কারণে চলতি বছর এই প্রবণতা কম। এ বছর প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, সবুজ ঘাস, বিভিন্ন প্রকারের ভুষি, খৈল এবং ভিটামিন খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। কিন্তু খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গো-খাদ্য বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে। গমের ছালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। অ্যাঙ্কর ডালের ভূষি ৮০০ টাকা এবং খড় কিনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা মণ দরে। প্রতি শতাংশ জমির জাম্বু ঘাস কিনতে হয় ৩০০ টাকা, নেপিয়ার ঘাস ৪০০ টাকা দরে। এরপরও ঈদের কথা ভেবে খামারিরা বাড়তি বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ না কমলে গরুর হাটে বিধিনিষেধ থাকবে। লকডাউনে পশুর হাট স্থাপনে তৈরি হবে নানা প্রতিবন্ধকতা। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে গরুর হাটে। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব কমলেই উপজেলার প্রসিদ্ধ পশুর হাটগুলো জেলার অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত ক্রেতার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের খামারি বুলবুল হোসেন জানান, এ বছর ৪০টি ষাঁড় তিনি প্রস্তুত করছেন। যেগুলোর প্রতিটির দাম প্রায ৩ লাখ টাকা। কিন্তু বুলবুল জানেন না, গরুর এই দাম তিনি পাবেন কিনা। এর চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করলে ‘বিরাট লস’ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি রাব্বি শেখ বলেন, ‘আমি ৪৫টি ষাঁড় মোটাতাজা করছি। দেশীয় পদ্ধতিতে শুধু সবুজ ঘাস, খড়, গম ও কালাইয়ের ভুসি, খৈল এবং ফিড খাওয়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি ষাঁড়ের হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের জন্য জিঙ্ক খাওয়াচ্ছি।’ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো মেডিসিন ব্যাবহার করেননি জানিয়ে রাব্বি বলেন, ‘এরপরও যদি ঈদে গরু ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না-পারি তাহলে পথে বসতে হবে।’
খামারিদের মূল শঙ্কা করোনা এবং লকডাউনের অজুহাতে গো-খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে তাদের পরিচর্যা ব্যয়ও বেড়েছে। ঈদের কথা ভেবে তারা এটুকু মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এ বছরও যদি পশুর হাটে ক্রেতা বা পাইকার আসা-যাওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয় তাহলে লোকসান হবে। সেই ক্ষতি তারা বছরজুড়ে ব্যবসা করেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন না বলে জানান শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি গ্রামের খামারি সাইফুল ইসলাম।
সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের তালুকদার ডেইরি ফার্মের পরিচালক রেজা তালুকদার বলেন, ‘আমার খামারে ৮০টি গরু রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে তৈরি হচ্ছি। খামার করতে গেলে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল আসে। কৃষির মতো খামারেও বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি দেওয়া হলে উপকৃত হতাম।’
বিষয়গুলোর সঙ্গে একমত হয়ে মিল্কভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। খামারিরা নিজে না খেয়ে গরু লালন-পালন করছে। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিচ্ছে। যদি খামারিদেরও অনুদান দেওয়া হয় তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘গরু বিক্রির সুবিধার্থে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপস ব্যাবহার করে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।’ খামারিদের ভর্তুকির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে প্রসিদ্ধ হাটগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে খামারিদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সরকারিভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি রয়েছে।’
এ বছর জেলায় প্রায় ২ লাখ গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ষাঁড় রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার। বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আকতারুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার বন্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এ জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। গো-খাদ্যের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ানো হয়। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।’

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আসছে ঈদ, বাড়ছে করোনা, শঙ্কায় খামারিরা

আপডেট সময় : ১০:২১:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ গরুর পরিচর্যা করছেন খামারিরা। কিন্তু গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বাজার মন্দা, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় পশুর হাট স্থাপনে বিধিনিষেধসহ ইত্যাদি কারণে খামারিদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। গতবারের মতো এবারও তারা ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তবে ক্ষতি এড়াতে ব্যবসায়ীদের অনলাইনে গরু বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
সূত্র বলছে, ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলায় গরুর খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। খামারের গরুগুলো প্রতি বছরই দেশের বিভিন্নস্থানে কোরবানির পশুর চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও প্রস্তুত খামারিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কিছু মৌসুমী খামারি মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অবৈধ স্টেরয়েড হরমোন ব্যাবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজা করত। কিন্তু এই কাজে জনসচেতনতা ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের তৎপরতার কারণে চলতি বছর এই প্রবণতা কম। এ বছর প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, সবুজ ঘাস, বিভিন্ন প্রকারের ভুষি, খৈল এবং ভিটামিন খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। কিন্তু খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গো-খাদ্য বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা বেড়েছে। গমের ছালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। অ্যাঙ্কর ডালের ভূষি ৮০০ টাকা এবং খড় কিনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা মণ দরে। প্রতি শতাংশ জমির জাম্বু ঘাস কিনতে হয় ৩০০ টাকা, নেপিয়ার ঘাস ৪০০ টাকা দরে। এরপরও ঈদের কথা ভেবে খামারিরা বাড়তি বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ না কমলে গরুর হাটে বিধিনিষেধ থাকবে। লকডাউনে পশুর হাট স্থাপনে তৈরি হবে নানা প্রতিবন্ধকতা। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে গরুর হাটে। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব কমলেই উপজেলার প্রসিদ্ধ পশুর হাটগুলো জেলার অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত ক্রেতার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের খামারি বুলবুল হোসেন জানান, এ বছর ৪০টি ষাঁড় তিনি প্রস্তুত করছেন। যেগুলোর প্রতিটির দাম প্রায ৩ লাখ টাকা। কিন্তু বুলবুল জানেন না, গরুর এই দাম তিনি পাবেন কিনা। এর চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করলে ‘বিরাট লস’ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি রাব্বি শেখ বলেন, ‘আমি ৪৫টি ষাঁড় মোটাতাজা করছি। দেশীয় পদ্ধতিতে শুধু সবুজ ঘাস, খড়, গম ও কালাইয়ের ভুসি, খৈল এবং ফিড খাওয়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি ষাঁড়ের হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের জন্য জিঙ্ক খাওয়াচ্ছি।’ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো মেডিসিন ব্যাবহার করেননি জানিয়ে রাব্বি বলেন, ‘এরপরও যদি ঈদে গরু ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না-পারি তাহলে পথে বসতে হবে।’
খামারিদের মূল শঙ্কা করোনা এবং লকডাউনের অজুহাতে গো-খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে তাদের পরিচর্যা ব্যয়ও বেড়েছে। ঈদের কথা ভেবে তারা এটুকু মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এ বছরও যদি পশুর হাটে ক্রেতা বা পাইকার আসা-যাওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয় তাহলে লোকসান হবে। সেই ক্ষতি তারা বছরজুড়ে ব্যবসা করেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন না বলে জানান শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি গ্রামের খামারি সাইফুল ইসলাম।
সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের তালুকদার ডেইরি ফার্মের পরিচালক রেজা তালুকদার বলেন, ‘আমার খামারে ৮০টি গরু রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে তৈরি হচ্ছি। খামার করতে গেলে প্রচুর বিদ্যুৎ বিল আসে। কৃষির মতো খামারেও বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি দেওয়া হলে উপকৃত হতাম।’
বিষয়গুলোর সঙ্গে একমত হয়ে মিল্কভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। খামারিরা নিজে না খেয়ে গরু লালন-পালন করছে। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিচ্ছে। যদি খামারিদেরও অনুদান দেওয়া হয় তাহলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘গরু বিক্রির সুবিধার্থে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপস ব্যাবহার করে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।’ খামারিদের ভর্তুকির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে প্রসিদ্ধ হাটগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে খামারিদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সরকারিভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি রয়েছে।’
এ বছর জেলায় প্রায় ২ লাখ গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ষাঁড় রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার। বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আকতারুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার বন্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এ জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। গো-খাদ্যের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ানো হয়। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।’