নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আশিয়ান গ্রুপের করা মামলায় গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী কাজী এরতেজা হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এফবিসিসিআই পরিচালক এরতেজাকে গতকাল বুধবার ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোশাররফ হোসেন আসামিকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরতেজার পক্ষে তার আইনজীবী কাজী নজিবুল্লা হীরু রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন; শুনানি শেষে বিচারক তা নাকচ করে দেন।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য এরতেজা হাসান ভোরের পাতা গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি দৈনিক ভোরের পাতা ও ডেইলি পিপলস টাইমসের সম্পাদক ও প্রকাশক।
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে এরতেজা হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। পরে জানানো হয়, জমি জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার এক মামলায় এরতেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ভূইয়ার ভাই সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরির জন্য আশিয়ান গ্রুপের কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমি কিনে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়া এবং জালিয়াতি করে জমি নিবন্ধনের অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে।
মামলায় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়। অধ্যাপক ইউসুফ বাদে এজাহারের অন্য দুই আসামি হলেন-রিয়াজুল আলম ও সেলিম মুন্সী। সেখানে এরতেজার নাম না থাকলেও তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পিবিআই।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশিয়ান গ্রুপ ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির মধ্যে পাঁচ বিঘা জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। ঢাকার ফার্মগেইটে যে ভবনে এরতেজার ভোরের পাতার কার্যালয়, সেখানেই আগে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ছিল। আশিয়ান গ্রুপ জমি বিক্রি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়টির কাছে আরও ২০ কোটি টাকা চায়। আর নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি চুক্তি জাল করে অতিরিক্ত টাকা দাবির অভিযোগ আনে। এ নিয়ে দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে দুটি মামলা করেছে। আশিয়ানের মামলার আগে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি। সেই মামলায় জালিয়াতি করে চুক্তিপত্র বানিয়ে অতিরিক্ত ২০ কোটি টাকা দাবি করার অভিযোগ তোলা হয়।
ওই মামলায় গত ১৫ ডিসেম্বর আশিয়ান গ্রুপের এমডি নজরুল ইসলাম ভুঁইয়াসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে ঢাকার হাকিম আদালত। তবে পরে তারা জামিন নেন। আশিয়ানের মামলার এজাহারে দাবি করা হয়, ২০১৩ সালে কাজী শামীম মেহেদি নামে একজন মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে আশিয়ান গ্রুপের কাছে জমি কেনার জন্য যান নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ। ওই বছর ৩ অগাস্ট আশিয়ান গ্রুপের সঙ্গে ৫০ কোটি টাকায় পাঁচ বিঘা জমি কেনার জন্য চুক্তি করে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি।
“এরপর তারা নগদ ও চেকের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা ওই বছর পরিশোধের কথা থাকলেও তারা পরিশোধ করেনি। পুরো টাকা পরিশোধ না করেই তারা জমিতে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।”
মামলায় বলা হয়, এরপর ২০১৯ সালে আশিয়ান গ্রুপ পাওনা টাকা চাইতে গেলে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি জানায়, ২০১৩ সালেই নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া তাদের জমি নিবন্ধন করে দিয়েছেন। আশিয়ানের অভিযোগ, স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ বেআইনি প্রক্রিয়ায় ওই সময় জমির রেজিস্ট্রি নেয় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি।