ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

আশিতে কিংবদন্তী বব ডিলান

  • আপডেট সময় : ১২:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মে ২০২১
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

হাতে গিটার আর হারমোনিকা। গলায় সুর। গানই হয়ে উঠেছিল নোবেলজয়ী কিংবদন্তী বব ডিলানের অস্ত্র। প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটি মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে। ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশের’ মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। গতকাল সোমবার এই গুণী সংগীত শিল্পীর ৮০তম জন্মদিন পালিত হলো। বব ডিলান জন্ম নিয়েছিলেন ১৯৪১ সালের ২৪ মে মিনেসোটার গ্রাম ডুলুথে। তার আসল নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান। বড় হয়েছেন ডুলুথ ও হিবিং-এর লেক সুপিরিয়রের পার্শ্ববর্তী মেসাবি আয়রন রেঞ্জ এলাকায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকার সময়ে তিনি কয়েকটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন। প্রথম ব্যান্ড ‘দ্য শ্যাডো ব্লাস্টার্স’ বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তী ব্যান্ড ‘দ্য গোল্ডেন কর্ডস’ কিছুদিন টিকেছিল। এরপর তিনি ভর্তি হন মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির আর্ট ও মিউজিক বিভাগে। তবে পাঠ্যবইয়ের বদলে গিটার ও হারমোনিকা নিয়ে গান করতেই বেশি ভালবাসতেন।
সংগীত শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ১৯৫৯ সালে। এই সময়ে তিনি নিজেকে বব ডিলান হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করলেন। মিনেসোটার বিভিন্ন কফি হাউজে গান গাইতেন। ১৯৬০ সালে কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা না দিয়ে বব ডিলান নিউ ইয়র্ক ঘুরতে বের হলেন। ১৯৬১ সালে তিনি দেখতে যান আইডল উডি গুথরিকে। বব ডিলান গুরু মানতেন প্রতিবাদী গানের শিল্পী উডি গুথরিকে। উডি গুথরি তখন হান্টিংটন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্কের গ্রেস্টোন পার্ক সাইকিয়াট্রিক হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। ওই হাসপাতালে তখন বব ডিলানের সঙ্গে পরিচয় হয় আরেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী রামব্লিন জ্যাক ইলিয়টের।
১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্কের গ্রিনউইচ ভিলেজের ক্লাব ও ক্যাফেগুলোকে অ্যাকুস্টিক গিটার হাতে দেখা যায় বব ডিলানকে। ১৯৬৫ সালে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভালে বব ডিলান একটি ইলেকট্রিক রক ব্যান্ডে ‘পপ অ্যান্ড রোল’ এর মতো ভিন্ন ধারার ফোক গান গেয়ে সবার নজর কাড়েন। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কের উডস্টকে নিজের বাড়ির কাছে এক মটর সাইকেল দুর্ঘটনার পর বব ডিলান জনসম্মুখে গান গাওয়া কমিয়ে দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য নিউ ইয়র্কে বিটলস শিল্পী জর্জ হ্যারিসন, ভারতের বিখ্যাত সেতার শিল্পী প-িত রবিশঙ্করের অনুরোধে আয়োজন করেছিলেন ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য জর্জ হ্যারিসন বব ডিলানকে ফোন করলে বিনা বাক্য ব্যয়ে বব ডিলান সাড়া দিয়েছিলেন। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে বব ডিলান মোট ছয়টি গান গেয়েছিলেন। যার মধ্যে ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ গানটি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
বব ডিলানের গান কেবল ৭০ বা ৮০’র দশকে নয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সমান জনপ্রিয়। ডিলানের গানের কথায় রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব থাকে। মেহনতি মানুষের দাবিকে বব ডিলান সংগীতে প্রকাশ করেছেন। বব ডিলানের গানকে তখন বলা হতো বিপরীত ধারার গান। ‘ব্লোইন ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ট রেইন’স এ-গনা ফল’, ‘দ্য টাইমস দে আর চেঞ্জিং’, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ গানের মাধ্যমে প্রতিবাদী সংগীতের প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ‘লাইক অ্যা রোলিং স্টোন’, ‘জাস্ট লাইক অ্যা ওমেন’ এবং ‘লেই লেডি লেই’ এর মতো গানগুলো দিয়ে নিজেকে আবারও ভিন্ন রূপে হাজির করেন ডিলান। ‘প্রতিবাদী গায়ক’ এর তকমা থেকে বেরিয়ে এসে দেখালেন তার বৈচিত্র্য। নিজস্ব ধারার পাশাপাশি তিনি কান্ট্রি সঙ, ব্লুজ, রক অ্যান্ড রোল, ইংলিশ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ, ব্রডওয়ে, হার্ড রক এবং গসপেলও গেয়েছেন। বব ডিলান এ পর্যন্ত গ্রামি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব, অ্যাকাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় এই কিংবদন্তী শিল্পীকে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আশিতে কিংবদন্তী বব ডিলান

আপডেট সময় : ১২:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মে ২০২১

হাতে গিটার আর হারমোনিকা। গলায় সুর। গানই হয়ে উঠেছিল নোবেলজয়ী কিংবদন্তী বব ডিলানের অস্ত্র। প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটি মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে। ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশের’ মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। গতকাল সোমবার এই গুণী সংগীত শিল্পীর ৮০তম জন্মদিন পালিত হলো। বব ডিলান জন্ম নিয়েছিলেন ১৯৪১ সালের ২৪ মে মিনেসোটার গ্রাম ডুলুথে। তার আসল নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান। বড় হয়েছেন ডুলুথ ও হিবিং-এর লেক সুপিরিয়রের পার্শ্ববর্তী মেসাবি আয়রন রেঞ্জ এলাকায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকার সময়ে তিনি কয়েকটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন। প্রথম ব্যান্ড ‘দ্য শ্যাডো ব্লাস্টার্স’ বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তী ব্যান্ড ‘দ্য গোল্ডেন কর্ডস’ কিছুদিন টিকেছিল। এরপর তিনি ভর্তি হন মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির আর্ট ও মিউজিক বিভাগে। তবে পাঠ্যবইয়ের বদলে গিটার ও হারমোনিকা নিয়ে গান করতেই বেশি ভালবাসতেন।
সংগীত শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ১৯৫৯ সালে। এই সময়ে তিনি নিজেকে বব ডিলান হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করলেন। মিনেসোটার বিভিন্ন কফি হাউজে গান গাইতেন। ১৯৬০ সালে কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা না দিয়ে বব ডিলান নিউ ইয়র্ক ঘুরতে বের হলেন। ১৯৬১ সালে তিনি দেখতে যান আইডল উডি গুথরিকে। বব ডিলান গুরু মানতেন প্রতিবাদী গানের শিল্পী উডি গুথরিকে। উডি গুথরি তখন হান্টিংটন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিউ ইয়র্কের গ্রেস্টোন পার্ক সাইকিয়াট্রিক হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। ওই হাসপাতালে তখন বব ডিলানের সঙ্গে পরিচয় হয় আরেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী রামব্লিন জ্যাক ইলিয়টের।
১৯৬১ সালে নিউ ইয়র্কের গ্রিনউইচ ভিলেজের ক্লাব ও ক্যাফেগুলোকে অ্যাকুস্টিক গিটার হাতে দেখা যায় বব ডিলানকে। ১৯৬৫ সালে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভালে বব ডিলান একটি ইলেকট্রিক রক ব্যান্ডে ‘পপ অ্যান্ড রোল’ এর মতো ভিন্ন ধারার ফোক গান গেয়ে সবার নজর কাড়েন। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কের উডস্টকে নিজের বাড়ির কাছে এক মটর সাইকেল দুর্ঘটনার পর বব ডিলান জনসম্মুখে গান গাওয়া কমিয়ে দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য নিউ ইয়র্কে বিটলস শিল্পী জর্জ হ্যারিসন, ভারতের বিখ্যাত সেতার শিল্পী প-িত রবিশঙ্করের অনুরোধে আয়োজন করেছিলেন ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য জর্জ হ্যারিসন বব ডিলানকে ফোন করলে বিনা বাক্য ব্যয়ে বব ডিলান সাড়া দিয়েছিলেন। ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে বব ডিলান মোট ছয়টি গান গেয়েছিলেন। যার মধ্যে ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ গানটি সবচেয়ে জনপ্রিয়।
বব ডিলানের গান কেবল ৭০ বা ৮০’র দশকে নয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সমান জনপ্রিয়। ডিলানের গানের কথায় রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব থাকে। মেহনতি মানুষের দাবিকে বব ডিলান সংগীতে প্রকাশ করেছেন। বব ডিলানের গানকে তখন বলা হতো বিপরীত ধারার গান। ‘ব্লোইন ইন দ্য উয়িন্ড’, ‘মাস্টার্স অব ওয়ার’, ‘এ হার্ট রেইন’স এ-গনা ফল’, ‘দ্য টাইমস দে আর চেঞ্জিং’, ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ গানের মাধ্যমে প্রতিবাদী সংগীতের প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ‘লাইক অ্যা রোলিং স্টোন’, ‘জাস্ট লাইক অ্যা ওমেন’ এবং ‘লেই লেডি লেই’ এর মতো গানগুলো দিয়ে নিজেকে আবারও ভিন্ন রূপে হাজির করেন ডিলান। ‘প্রতিবাদী গায়ক’ এর তকমা থেকে বেরিয়ে এসে দেখালেন তার বৈচিত্র্য। নিজস্ব ধারার পাশাপাশি তিনি কান্ট্রি সঙ, ব্লুজ, রক অ্যান্ড রোল, ইংলিশ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ, ব্রডওয়ে, হার্ড রক এবং গসপেলও গেয়েছেন। বব ডিলান এ পর্যন্ত গ্রামি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব, অ্যাকাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় এই কিংবদন্তী শিল্পীকে।