ঢাকা ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে দাবিতে ভাইরাল ছবিটি ভুয়া

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৪০ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজা উপত্যকায় ফের হামলা শুরু করলে ফিলিস্তিনে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করে। এই সংকটের মধ্যে সম্প্রতি ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আল-আকসা মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, আল-আকসা মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

আল-আকসার পাশে অবস্থিত সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’-এর আদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি হামলায় আল-আকসা ধ্বংসের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সময় গত ৪ এপ্রিল ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ইংরেজিতে ‘রোজি’ নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির আরবি ভাষার ক্যাপশনের ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়: ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: যদি কোনো ভোরে পুরো আরব জাতি এমন একটি দৃশ্যের মুখোমুখি হয়, তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? শঙ্কা হলো, হয়তো আমরা আবারও সেই চিরচেনা চিত্রটাই দেখব নিন্দা, প্রতিবাদ, ধিক্কার আর কিছুটা প্রতীকী মিছিল-মানববন্ধন। কিন্তু এরপর? এরপর কি কিছু বদলাবে?’ পরদিন, ৫ এপ্রিল আহমেদ এম স্ক্র্যান নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইলে একই ছবিসহ কাছাকাছি ধরনের আরও দুটি ছবিযুক্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনে আরবি ভাষায় লেখা হয়, ‘ভাবুন তো, ঘুম থেকে উঠে যদি হঠাৎ এমন একটা দৃশ্য চোখে পড়ে।’ এসব পোস্টের বরাতে বোঝা যায়, ছবিটি প্রাথমিকভাবে আল-আকসা মসজিদের প্রতীকী রূপ হিসেবেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। তবে ছবিতে দেখানো স্থাপনাটি আল-আকসা মসজিদ নয়। এটি আল-আকসার সংলগ্ন সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’।

জেরুজালেমের পবিত্র হারাম আল-শরীফ চত্বরে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্য রক দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থাপনা। আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। অপরদিকে, ডোম অব দ্য রক একটি ধর্মীয় স্মৃতিচিহ্ন, যেখান থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে গমন করেছিলেন বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন। পরবর্তীতে, ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। আলোচিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি এটি নিশ্চিত হওয়ার পর আল-আকসার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে ফিলিস্তিনের স্থানীয় ফ্যাক্টচেকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তারা নিশ্চিত করেছেন, আল-আকসা মসজিদে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সির গত ৬ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত রোববার আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ৫শর বেশি অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী জোরপূর্বক প্রবেশ করে। আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এ ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়েছে।

ফিলিস্তিনি ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে, অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে অন্তত ২১ বার এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ ছাড়া বছরের প্রথম তিন মাসে মোট ১৩ হাজারের বেশি ইসরায়েলি আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। এটিই আল-আকসার সবশেষ পরিস্থিতি বলে ফিলিস্তিনের স্থানীয় ফ্যাক্টচেকাররাও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে দাবিতে ভাইরাল ছবিটি ভুয়া

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজা উপত্যকায় ফের হামলা শুরু করলে ফিলিস্তিনে মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করে। এই সংকটের মধ্যে সম্প্রতি ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিত জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, আল-আকসা মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, আল-আকসা মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি।

আল-আকসার পাশে অবস্থিত সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’-এর আদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি হামলায় আল-আকসা ধ্বংসের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সময় গত ৪ এপ্রিল ভোর ৫টা ২০ মিনিটে ইংরেজিতে ‘রোজি’ নামের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটির আরবি ভাষার ক্যাপশনের ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়: ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: যদি কোনো ভোরে পুরো আরব জাতি এমন একটি দৃশ্যের মুখোমুখি হয়, তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? শঙ্কা হলো, হয়তো আমরা আবারও সেই চিরচেনা চিত্রটাই দেখব নিন্দা, প্রতিবাদ, ধিক্কার আর কিছুটা প্রতীকী মিছিল-মানববন্ধন। কিন্তু এরপর? এরপর কি কিছু বদলাবে?’ পরদিন, ৫ এপ্রিল আহমেদ এম স্ক্র্যান নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইলে একই ছবিসহ কাছাকাছি ধরনের আরও দুটি ছবিযুক্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনে আরবি ভাষায় লেখা হয়, ‘ভাবুন তো, ঘুম থেকে উঠে যদি হঠাৎ এমন একটা দৃশ্য চোখে পড়ে।’ এসব পোস্টের বরাতে বোঝা যায়, ছবিটি প্রাথমিকভাবে আল-আকসা মসজিদের প্রতীকী রূপ হিসেবেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। তবে ছবিতে দেখানো স্থাপনাটি আল-আকসা মসজিদ নয়। এটি আল-আকসার সংলগ্ন সোনালি গম্বুজবিশিষ্ট ‘ডোম অব দ্য রক’।

জেরুজালেমের পবিত্র হারাম আল-শরীফ চত্বরে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্য রক দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থাপনা। আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। অপরদিকে, ডোম অব দ্য রক একটি ধর্মীয় স্মৃতিচিহ্ন, যেখান থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে গমন করেছিলেন বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন। পরবর্তীতে, ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম সাইটইঞ্জিনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। আলোচিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি এটি নিশ্চিত হওয়ার পর আল-আকসার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে ফিলিস্তিনের স্থানীয় ফ্যাক্টচেকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তারা নিশ্চিত করেছেন, আল-আকসা মসজিদে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সির গত ৬ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত রোববার আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ৫শর বেশি অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী জোরপূর্বক প্রবেশ করে। আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এ ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়েছে।

ফিলিস্তিনি ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে, অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে অন্তত ২১ বার এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ ছাড়া বছরের প্রথম তিন মাসে মোট ১৩ হাজারের বেশি ইসরায়েলি আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। এটিই আল-আকসার সবশেষ পরিস্থিতি বলে ফিলিস্তিনের স্থানীয় ফ্যাক্টচেকাররাও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।