বিদেশের খবর ডেস্ক : আলেপ্পো নগরীর অর্ধেকের বেশি এলাকার দখলে নেওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থনে সিরিয়ার এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুশ সামরিক বাহিনীর চালানোর হামলায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাস নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলেছে, হায়াত তাহরির আল-শামের বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় রোববার ভোরে রাশিয়ার সিরিজ হামলার মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইদলিবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন। এসওএইচআর বলেছে, ইদলিবের পাশাপাশি হামার গ্রামীণ এলাকাতেও রুশ বাহিনী হামলা চালিয়েছে। সিরিয়ার সরকার-বিরোধী হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহীরা ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে। সিরীয় এই পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী বলেছে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সিরিয়ার সরকার। গত কয়েক বছরের মধ্যে সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে বিদ্রোহীরা। এই হামলায় তারা আলেপ্পোর পাশাপাশি অন্যান্য এলাকারও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ান সেন্টার ফর দ্য রিকনসিলিয়েশন অব দ্য এনিমি পার্টিস বলেছে, আলেপ্পো এবং ইদলিব প্রদেশে বিদ্রোহীদের আস্তানা, কমান্ড পোস্ট, অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। গত বুধবার থেকে শুরু করা রাশিয়ার এই হামলায় প্রায় ৩০০ বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। আলেপ্পো শহরে হায়াত তাহরির আল-শামের বড় হামলার পর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সমর্থনে হামলা চালিয়েছে রুশ বিমান বাহিনী। হায়াত তাহরির আল-শামের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের যোদ্ধারা আলেপ্পো বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে। বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর দু’টি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, বিদ্রোহীরা ইদলিব প্রদেশের মারাত আল নুমান শহর দখল করেছেন। ওই শহরের পুরো এলাকা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে গেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম অতীতে দেশটিতে নুসরা ফ্রন্ট হিসেবে পরিচিত ছিল। এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশ। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে অনেকটা আকস্মিক হামলা চালায় আলেপ্পো নগরীতে। এরপর থেকে গোষ্ঠীটি তাদের হামলা সিরিয়ার অন্যান্য শহরেও জোরদার করেছে। হায়াত তাহরির আল-শামের হামলার মুখে কয়েকটি শহর থেকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তবে রাশিয়া এই গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে হামলা শুরু করায় সিরীয় সরকারি বাহিনীও অভিযান জোরদার করেছে।
হঠাৎ আলেপ্পো অভিযান কেন?
আলেপ্পো নগরীতে বুধবার অতর্কিত হামলা শুরু করেন হায়াত তাহরির আল-শামের বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের কয়েক বছরের মধ্যে এই হামলাকে বিরোধীদের প্রথম কোনও বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ক্ষমতায় আছেন ২০২০ সাল থেকে। তবে হায়াত তাহরির আল-শামের আক্রমণের এই সময়ে তিনি দেশটিতে নেই। সিরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বর্তমানে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে মস্কো সফরে রয়েছেন। বিদ্রোহীরা হামলার প্রথম দিকেই আলেপ্পোর কয়েকটি শহর ও গ্রামের দখল নেন। এ সময় শহরে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন বিদ্রোহীরা। আলেপ্পো বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহরের কয়েকটি স্থাপনায় বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কয়েকজন নিহত হয়েছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র আলেপ্পো। শহরটি রাজধানী থেকে প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। সিরিয়ার বৃহত্তম এই শহর ২০১৬ সালের পর থেকে বাশার আল-আসাদের সরকারের দখলে ছিল। সূত্র: রয়টার্স, এএফপি, তাস।