প্রত্যাশা ডেস্ক : কয়েক দশকের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর অবশেষে মস্তিষ্কের স্মৃতিভ্রমের রোগ আলঝেইমার্সের চিকিৎসায় প্রথম কোনো ওষুধ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। আলঝেইমার্স আক্রান্ত মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংসের গতি কমিয়ে দেয়ার ওষুধের এই আবিষ্কারকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের দশকের পর দশকের ব্যর্থতার পর এই ওষুধটি আবিষ্কার হয়েছে। ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রুপ হচ্ছে আলঝেইমার্স। যদিও লিকেনেম্যাব নামের ওষুধটির প্রভাব এখনও তুলনামূলক কম। তারপরও মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এই ওষুধের আবিষ্কার কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও পরিষ্কার নয়।
বিবিসি বলছে, লিকেনেম্যাব নামের ওষুধটি এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করে। ফলে আলঝেইমার্সে আক্রান্ত অনেক রোগী হয়তো এর সুফল পাবেন না। আলঝেইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে বেটা অ্যামিলয়েড নামে যে আঠালো পদার্থ তৈরি হয়, সেটিকে আক্রমণ করে লিকেনেম্যাব। অ্যামিলয়েড হচ্ছে একটি প্রোটিন, যা মস্তিষ্কের নিউরনের মাঝে জমা হতে থাকে। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এ ধরনের অ্যামিলয়েডের জন্ম নেওয়া আলঝেইমার্স রোগের অন্যতম উপসর্গ। মানুষের শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে সেটি দূর করতে শরীরের ভেতরে যে ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, লিকেনেম্যাব হচ্ছে সেরকম একটি অ্যান্টিবডি। কিন্তু এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে; যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মস্তিষ্ক থেকে অ্যামিলয়েড দূর করে ফেলতে সহায়তা করবে। তবে ওষুধটি আলঝেইমার্স রোগ পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে পারে না। কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার হার চারভাগের একভাগ কমিয়ে ফেলতে পারে। আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসায় ওষুধ আবিষ্কার করতে গিয়ে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, সেখানে এই ওষুধের পরীক্ষার ফলাফলকে অনেকে বিশাল ‘জয়’ হিসাবে দেখছেন।
যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা আলঝেইমার্স রিসার্চ বলেছে, গবেষণার এই ফলাফল ‘গুরুত্বপূর্ণ’। আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসার উপায় খুঁজতে গিয়ে ৩০ বছর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা প্রথমে অ্যামিলয়েড লক্ষ্য করে গবেষণা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। সেই গবেষকদের একজন অধ্যাপক জন হার্ডি। আলঝেইমার্সের নতুন এই ওষুধের আবিষ্কারের পর তিনি এটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন। এর ফলে আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসার নতুন নতুন উপায় বেরিয়ে আসতে শুরু করবে বলেও আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারা স্পিয়ার-জোনস বলেছেন, নতুন এই গবেষণার ফলাফল অনেক বড় একটি সাফল্য। কারণ বহুদিন ধরেই এই গবেষণায় ব্যর্থতার হার ছিল শতভাগ। সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ না থাকায় বর্তমানে আলঝেইমার্স আক্রান্ত রোগীদের উপসর্গ সামলানোর মতো কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব ওষুধ রোগটি ঠেকাতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। নতুন এই ওষুধের সাফল্য প্রাথমিক পর্যায়ে আলঝেইমার্স শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসায় কাজে আসবে বলে আশার আলো দেখা দিয়েছে।
বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৫ কোটির বেশি মানুষ আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, গত বছরের জুনের দিকে আলঝেইমার্সের চিকিৎসায় অ্যাডুকেনুম্যাব নামের একটি ওষুধের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। সেই সময় গত দুই দশকের মধ্যে এই রোগের প্রথম ওষুধ হিসেবে অ্যাডুকেনুম্যাবের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানায় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে আলঝেইমার্সের ওষুধের এই অনুমোদন নিয়ে উচ্চাশা থাকলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। কারণ ২০২০ সালের নভেম্বরে দেশটির একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেল অ্যাডুকেনুম্যাবের উপকারিতার পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ পায়নি বলে এফডিএকে জানিয়েছিল।
আলঝেইমার্সের চিকিৎসায় ‘যুগান্তকারী’ ওষুধ আবিষ্কার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ