নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির কারণে দেশের আর্থিক খাত ‘অত্যন্ত খারাপ’ অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
শনিবার (৩১ মে) ঢাকায় ‘বাজেট ভাবনা ২০২৫-২৬’ শিরোনামে এক গোলটেবিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। মিন্টু বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতে দুটি সমস্যা; ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদ, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশে, রাজনৈতিক সহায়তায় একটা লুটপাট চালিয়েছে গত ১৫ বছর- এটা নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি। দুই নম্বর হল, আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একদম আইসিইউতে আছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ। যদি বিনিয়োগ আইসিইউতে থাকে, তাহলে যে বিনিয়োগকারী, সে তো বিনিয়োগ ফেরত নিতে পারছে না। এফবিসিসিআইয়ের এই সাবেক সভাপতি বলেন, একটি হলো ব্যাংকের নিজস্ব অনিয়ম, নিজস্ব দুর্নীতি; আরেকটি হল সাধারণ নিয়মে অর্থনীতির সমস্যা। সে সমস্যার কারণে যে ঋণ নিয়েছে, সে এখন ঋণটা পরিশোধ করতে পারছে না। এই সবগুলোর সমন্বয়ে আসলেই কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক খাত অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। যে যা-ই বলুক।
সর্বস্তরে বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোন ক্ষেত্রে বৈষম্য নেই? আয়ের বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, রাজনৈতিক বৈষম্য- সবই বাংলাদেশে দিন দিন বেশি হচ্ছে। সরকারের কার্যক্রম বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের এগুলো শনাক্ত করতে হবে।
সরকারের কাছে ভালো বাজেট চেয়ে তিনি বলেন, “ভালো বাজেট বলতে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য চাই, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি চাই, স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি চাই, উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করতে চাই। দেশের রপ্তানি সামর্থ্য বাড়াতে চাই, সার্বিক চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে জোরদার করতে চাই। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাই, জীবন-যাপনের মানোন্নয়ন করতে চাই, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে রাজস্ব নীতি চাই, মূল্যস্ফীতি সীমিত করতে চাই, অবকাঠামোর উন্নয়ন চাই।
বাজেটে ‘বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনে’ সাড়ে ১৬ শতাংশ বরাদ্দ নিয়ে সমালোচনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, সরকার পরিচালিত হতে হলে কিছু অবকাঠামো লাগে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। কিন্তু এই সময়টা কি সেই সময়, যখন ভৌত অবকাঠামোও নয়, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের জন্য সাড়ে ১৬ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। আমরা কি আসলেই বাজেটে ব্যয় কমাতে সক্ষম হলাম? রাইট ফোকাসটা করলাম? আমরা তো যে জিনিসটা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে, সেখানে ফোকাস করলাম। আরেকটি প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত, সুশাসনকে ফেরত আনা। যেটা আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সরকার পরিচালনায়, জ্বালানি খাতে, ব্যাংক খাতে, সেই সুশাসনকে ফিরিয়ে আনতে কিছু কাজ শুরু করেছে সরকার। এগুলোকে কনসলিডেটেড করার ব্যাপার আছে।
রাজধানীর কাকরাইলে এইচআর ভবন মিলনায়তনে দেশ টিভি এ গোলটেবিল আয়োজন করে। আলোচনায় জনবান্ধব করনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, একদিকে প্রবৃদ্ধি, আরেকদিকে বেকারত্বের সঙ্গে দরিদ্র জনগণের সংখ্যা বাড়ছে। এই যখন দর্শন হবে, আপনি যত বড় বাজেট করেন, সেটা দিয়ে আপনি মানুষের চাহিদা মেটাতে পারবেন না।
ফাহমিদা বলেন, অনেকেই বলছেন, বাজেটে জনগণ কোথায়। আপনি সাধারণ একজন জনগণকে জিজ্ঞাসা করেন; আমরা করেও দেখেছি, তারা মনে করে বাজেট মানে হচ্ছে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। অর্থাৎ তারা সেভাবেইও দেখেছে। করব্যবস্থাটা মানুষের স্বস্তি দেওয়ার কাজ করেনি এতদিন পর্যন্ত। বাজেটে ব্যয়ের ভিত্তিতে আয় নির্ধারণ করে থাকি। ২০ কোটি জনগণের চাহিদাটা অনেক বেশি। সেজন্যই সেই চাহিদা মাথায় রেখে আয়বিন্যাসটা এমনভাবে করতে হবে, যেটা মানুষের ওপরে চাপ তৈরি করবে না।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে আমরা মূল্যস্ফীতির যে চাপ দেখছি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমন দেখছি, তারা কিন্তু আশা করবে এই বাজেটে তাদের সেটা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি থাকবে। অর্থনৈতিক বিনিয়োগের একটা স্থবিরতার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যারা আছেন, তাদের একটা প্রত্যাশা থাকবে যে বিনিয়োগকে চাঙ্গা করার জন্য এই বাজেটে প্রস্তাব থাকবে।
আলোচনায় বাজেট নিয়ে নিজেদের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বিকেএমইর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ হাতেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন, অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ ও ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ম. তামিম।