প্রত্যাশা ডেস্ক : মাস দুয়েক আগে আশার আলো দেখিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। বলেছিলেন, করোনার ডেল্টা ধরনই বিপদের শেষ। এর পরে ক্ষমতা কমতে শুরু করবে ভাইরাসের। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাদের দাবি, ডেল্টা আসলে বিশ্বের উদ্দেশে এক ‘সতর্কবার্তা’। এর পরে মিউটেশন ঘটিয়ে আরো ভয়ানক ধরন তৈরি করতে পারে করোনাভাইরাস।
১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে এর জেরে। পশ্চিম এশিয়ায় চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়ার অন্যতম কারণ ডেল্টা। চীনে নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে। আরো দুটি প্রদেশ থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর মিলেছে।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বড় শহর ব্রিসবেন ও কুইন্সল্যান্ড প্রদেশের একাংশে লকডাউন জারি করা হয়েছে। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী স্টিভেন মাইলস জানিয়েছেন, তিন দিনের জন্য সম্পূর্ণ গৃহবন্দি থাকতে হবে লাখ লাখ বাসিন্দাকে। সবই ডেল্টার জেরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চিকেন পক্সের মতো ছোঁয়াচে ডেল্টা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রক বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেন, ‘ডেল্টা হচ্ছে আসলে একটা সতর্কবার্তা। সকলকে সতর্ক করে দেওয়া যে, ভাইরাস তার রূপ বদলাচ্ছে। এবং এটাও মনে করিয়ে দেওয়া যে আরো ভয়ানক ভ্যারিয়ান্ট তৈরি হতে পারে।’
হু প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত চারটি ভ্যারিয়ান্ট অব কনসার্ন তৈরি হয়েছে। ভাইরাসটি যত ছড়াবে এরকম উদ্বেগ করার মতো ভ্যারিয়ান্ট আরো তৈরি হবে।’
গোটা বিশ্বকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করে পর্যালোচনা চালায় হু। এর মধ্যে পাঁচটিতেই গত এক মাসে সংক্রমণ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। রায়ানের বক্তব্য, ডেল্টার প্রকোপে বেশ নড়বড়ে অবস্থা হয়েছে কিছু দেশের। কিন্তু তাতেও তারা যথেষ্ট সতর্ক করতে পারেনি বাসিন্দাদের। সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে নিতে এখনো ব্যর্থ বেশ কিছু দেশ। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে না। লোকজন মাস্ক পরছেন না। স্যানটাইজার ব্যবহার, হাত পরিষ্কার রাখা, হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা কম এ রকম বদ্ধ ঘরে বেশি ক্ষণ না থাকা, ভিড়-জটলা এড়িয়ে যাওয়া- এর কোনোটির উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে না।
রায়ানের কথায়, ‘টিকাকরণে কাজ দিচ্ছে। টিকা নেওয়া থাকলে বাড়াবাড়ি কম হচ্ছে। আমাদের যে গেম প্ল্যান রয়েছে সেটা কাজ দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেটা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। বরং আগের থেকে আরো গতি বাড়াতে হবে টিকাকরণের।’
করোনা নির্মূল হবে না, আসবে নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্ট : করোনাভাইরাসের একের পর এক নতুন ধরন বের হচ্ছে। দিনে দিনে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে করোনা। বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ংকর ভ্যারিয়ান্ট ডেল্টা। তবে, এর চেয়েও ভয়ংকর ভ্যারিয়ান্ট আসতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাজ্য সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টারা। আর নতুন এই ধরনে আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন মারা যেতে পারেন। নতুন ভ্যারিয়ান্টে মৃত্যুর হার হতে পারে মার্স ভাইরাসের মতো। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছেন যে, করোনা পুরোপুরি নির্মূল হবে না। নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্ট আসতে থাকবে।
যুক্তরাজ্য সরকারের সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিস (এসএজিই) কর্তৃক গত শুক্রবার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এই লেখায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নতুন ভ্যারিয়ান্ট ভ্যাকসিনকে এড়াতে সক্ষম। অর্থাৎ, টিকা নেয়া ব্যক্তিকেও ওই ভ্যারিয়ান্ট আক্রমণ করতে পারবে।
বিজ্ঞানীরা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী বিবর্তন সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। গবেষণার পর তারা বলেছেন, এই ভাইরাস দূর করা ‘অসম্ভব’। আর করোনার এরকম নতুন নতুন ধরন আসতে থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ধরন গঠিত হতে পারে দুইটি মারাত্মক ধরনের সমন্বয়ে। যেমন: বেটা ও আলফা বা ডেল্টা মিলে নতুন ধরন তৈরি করতে পারে।
এসএজিই সতর্ক করে দিয়েছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ধরন আসার সম্ভাবনা বাস্তবসম্মত। এজন্য এসএজিই এর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত হবে বাইরের দেশগুলো থেকে নতুন নতুন ধরন যাতে দেশে না ঢুকতে পারে তা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া। অর্থাৎ, দুইটি ভ্যারিয়ান্ট যাতে একসাথে মিলে পুনর্গঠিত না হতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে পূর্ণ ডোজের ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করলে তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। এই নিয়ম চালু হবে ২ আগস্ট থেকে।
এসজিই এর বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা করতে যেখানে করোনার প্রকোপ বেশি সেখানে এবং যেখানে করোনায় আক্রান্ত হলেও মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হচ্ছে না দুই জায়গার পরিস্থিতিই বিবেচনায় নিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাজ্য সরকারকে বয়স্ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে দ্রুত টিকা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করতে বলেছে। মহামারি বিশেষজ্ঞ দীপ্তি গুরদাসানি বলেছেন, এসএজিই এর এই প্রকাশনা সকলের জন্য ‘কঠোর সতর্কবার্তা’।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘করোনা খুব শীঘ্রই দুর্বল হবে না। যারা বলে যে, করোনাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের চলতে হবে, এটি মৌসুমি ভাইরাসের মতো হয়ে যাবে, ক্ষতি করতে না, তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, দ্রুতই তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
আরো ভয়ানক ধরন তৈরি করতে পারে করোনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ