ঢাকা ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আরজি করকাণ্ডে একমাত্র আসামি দোষী সাব্যস্ত, সাজা সোমবার

  • আপডেট সময় : ০৪:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় গ্রেফতার সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে; তার সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা জজ অনির্বাণ দাস।

গত বছর আগস্টে কলকাতায় এই চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা পুরো ভারতকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ বেশ কয়েক মাস ছিল উত্তাল।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত চিকিৎসক ৮ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, ওইদিন রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান।

পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা সেই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

নিহত তরুণীর পরিবার জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করে।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সঞ্জয় নামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে সিবিআই।

সিবিআই তদন্ত নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেন নিহতের মা-বাবা। তাদের দাবি, সিবিআই একমাত্র সঞ্জয় রায়কেই দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে; আদতে তারা কোনো কাজ করেনি।

তারা এও বলেন, সঞ্জয় দোষী, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ঘটনায় আরও অনেকে যুক্ত আছেন, যাদের ধরা হচ্ছে না।

আরজি কর মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে নিম্ন আদালতে। সেই তালিকায় রয়েছেন নিহতের বাবা, তদন্তকারী সিবিআই কর্মকর্তা, কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েকজন সহপাঠী।

কলকাতা পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ‘বায়োলজিক্যাল’ও ‘ডিজিটাল’ তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করেছিল। পরে তদন্তভার পাওয়া সিবিআই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকেই একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর গত ১১ নভেম্বর চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। তার ৯ সপ্তাহ বাদে শনিবার রায় ঘোষণা করা হলো।

ধর্ষণ-খুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। যদিও অভিযোগপত্রে তাদের নাম রাখেনি সিবিআই। ওই মামলায় সন্দীপ ও অভিজিৎ জামিন পেয়েছেন। অভিজিতের জেলমুক্তি হলেও আরজি করে দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ এখনও কারাগারে রয়েছেন।

আনন্দবাজার লিখেছে, আরজি করের ঘটনা নিয়ে গত পাঁচ মাসে নজিরবিহীন প্রতিবাদ দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত। ১৪ আগস্ট ‘মেয়েদের রাত দখল’কর্মসূচি পালিত হয় কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই রাতেই আবার ভাঙচুর হয় আরজি কর হাসপাতালে। তারপর থেকে নাগরিক সমাজের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দাবানলের মতো।

প্রায় প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ মিছিল করেন কলকাতার রাজপথে। মিছিল হয়েছে মফস্বল শহরেও। গ্যালারিতে বিক্ষোভের ‘ভয়ে’ সল্টলেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ বাতিল হয়। সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সড়কে বিক্ষোভ দেখানো লোকজনকে থামাতে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে।

আলোচিত এই ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ঘিরেও বিস্তর ‘নাটকীয়’ ঘটনা ঘটে জানিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, হাসপাতালে হাসপাতালে কর্মবিরতি দিয়ে শুরু হয়েছিল তাদের আন্দোলন।

কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের পর কর্মবিরতি সাময়িকভাবে উঠলেও ফের তা শুরু হয়েছিল আরেক হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে। পরে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশনে’ বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, যা চলেছিল পূজার মধ্যেও। কয়েকজন অনশনকারী অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আরজি করকাণ্ডে একমাত্র আসামি দোষী সাব্যস্ত, সাজা সোমবার

আপডেট সময় : ০৪:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় গ্রেফতার সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে; তার সাজা ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা জজ অনির্বাণ দাস।

গত বছর আগস্টে কলকাতায় এই চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা পুরো ভারতকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ বেশ কয়েক মাস ছিল উত্তাল।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত চিকিৎসক ৮ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, ওইদিন রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান।

পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা সেই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

নিহত তরুণীর পরিবার জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করে।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সঞ্জয় নামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে সিবিআই।

সিবিআই তদন্ত নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেন নিহতের মা-বাবা। তাদের দাবি, সিবিআই একমাত্র সঞ্জয় রায়কেই দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে; আদতে তারা কোনো কাজ করেনি।

তারা এও বলেন, সঞ্জয় দোষী, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ঘটনায় আরও অনেকে যুক্ত আছেন, যাদের ধরা হচ্ছে না।

আরজি কর মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে নিম্ন আদালতে। সেই তালিকায় রয়েছেন নিহতের বাবা, তদন্তকারী সিবিআই কর্মকর্তা, কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েকজন সহপাঠী।

কলকাতা পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ‘বায়োলজিক্যাল’ও ‘ডিজিটাল’ তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করেছিল। পরে তদন্তভার পাওয়া সিবিআই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকেই একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর গত ১১ নভেম্বর চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। তার ৯ সপ্তাহ বাদে শনিবার রায় ঘোষণা করা হলো।

ধর্ষণ-খুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। যদিও অভিযোগপত্রে তাদের নাম রাখেনি সিবিআই। ওই মামলায় সন্দীপ ও অভিজিৎ জামিন পেয়েছেন। অভিজিতের জেলমুক্তি হলেও আরজি করে দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ এখনও কারাগারে রয়েছেন।

আনন্দবাজার লিখেছে, আরজি করের ঘটনা নিয়ে গত পাঁচ মাসে নজিরবিহীন প্রতিবাদ দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারত। ১৪ আগস্ট ‘মেয়েদের রাত দখল’কর্মসূচি পালিত হয় কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই রাতেই আবার ভাঙচুর হয় আরজি কর হাসপাতালে। তারপর থেকে নাগরিক সমাজের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দাবানলের মতো।

প্রায় প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ মিছিল করেন কলকাতার রাজপথে। মিছিল হয়েছে মফস্বল শহরেও। গ্যালারিতে বিক্ষোভের ‘ভয়ে’ সল্টলেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ বাতিল হয়। সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সড়কে বিক্ষোভ দেখানো লোকজনকে থামাতে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে।

আলোচিত এই ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ঘিরেও বিস্তর ‘নাটকীয়’ ঘটনা ঘটে জানিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, হাসপাতালে হাসপাতালে কর্মবিরতি দিয়ে শুরু হয়েছিল তাদের আন্দোলন।

কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের পর কর্মবিরতি সাময়িকভাবে উঠলেও ফের তা শুরু হয়েছিল আরেক হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে। পরে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশনে’ বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, যা চলেছিল পূজার মধ্যেও। কয়েকজন অনশনকারী অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন।