প্রত্যাশা ডেস্ক: রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) সম্পর্কে নিজের মন্তব্য থেকে এক চুলও সরতে নারাজ মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধী। গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) তিনি বলেছেন, আরএসএসের আচরণ তাঁকে আরো দৃঢ় করে তুলেছে। তারা কত বড় বিশ্বাসঘাতক, তা আরো জোরালোভাবে তিনি প্রমাণ করবেন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আরএসএসকে ‘বিষ’ বলে অভিহিত করেছিলেন তুষার। সেই মন্তব্যের জন্য আরএসএস তাঁকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছিল। বলেছিল ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে। কিন্তু তুষার বলেছিলেন, ‘আমি তা করি না, করবও না। বরং তাদের আচরণ আমাকে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে বিশ্বাসঘাতকদের চরিত্র উদ্ঘাটনে।’
মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র বলেছিলেন, ‘এই লড়াই স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও বেশি জরুরি। আমাদের শত্রু এখন একটাই। সেই শত্রুর মুখোশ খুলে দেওয়া দরকার।’
এ সপ্তাহে কেরালার তিরুবনন্তপুরম জেলার নেয়াট্টিনকারায় বিশিষ্ট গান্ধীবাদী গোপীনাথন নায়ারের এক আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন উপলক্ষে তুষার গান্ধী বলেছিলেন, ‘বিজেপিকে আমরা পরাজিত করতে পারব। কিন্তু আসল বিষ হলো আরএসএস। তারা এই দেশের মন ও আত্মা বিষিয়ে দিতে চাইছে। এটাই আমাদের ভয়। মন ও আত্মা বিষিয়ে গেলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না।’
ওই মন্তব্যের পর আরএসএস ও বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা তুষার গান্ধীর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। রাজ্যের শাসক সিপিএম ও বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি–আরএসএসের ওই আচরণের নিন্দা করেছিল।
সেই বিক্ষোভের পর গত শুক্রবার তুষার গিয়েছিলেন কোচির কাছে আলুভা নামে এক জায়গায়, যেখানে ইউনিয়ন খ্রিষ্টান কলেজে এক শ বছর আগে গান্ধীজি গিয়েছিলেন। সেই ঘটনার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তুষার গান্ধী তাঁর বলা ‘বিষ’–এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, আরো দৃঢ়ভাবে তিনি আরএসএসের মোকাবিলা করবেন। তাদের চরিত্র উদ্ঘাটন করবেন।
তুষার গান্ধী বলেছিলেন, গান্ধীজির হত্যাকারীর উত্তরসূরিরা এবার হয়তো তাঁর মূর্তি আক্রমণ করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ভয় হয়, এবার হয়তো তারা আমার প্রপিতামহের মূর্তিতে গুলি ছুড়বে। তারা স্বভাবগত অপরাধী।’
তুষার গান্ধীর মন্তব্যের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের নানা জায়গায় বিজেপি–আরএসএসের কর্মীরা সক্রিয় বিক্ষোভ দেখায়। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছিলেন, ওই বিক্ষোভ দেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে।
বিজেপি–আরএসএসের বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ওরা মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। গণতান্ত্রিক সমাজে তা হতে দেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই আরো বলেছিলেন, গান্ধীজির হত্যাকারী ও এখনকার বিক্ষোভকারীদের মনোভাব এক এবং অভিন্ন। এর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকেই রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিরোধী নেতা কংগ্রেসের ভি ডি সতীশন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, আরএসএস–বিজেপির বিক্ষোভ মহাত্মা গান্ধীর অবমাননা। রাজ্য সরকারের উচিত এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
সতীশন বলেন, ‘তুষার গান্ধী ভুল কিছু বলেননি। আরএসএস ক্যানসার। দেশের শরীর ও মনে এই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছে। তুষার সত্য কথাই বলেছেন। তাই, তাঁকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে।
