বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ—বাংলা সিনেমার এক অম্লান নাম। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। প্রথমে ধারণা করা হয়, সালমান আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, এটি নিছক আত্মহত্যা নয়—তাকে হত্যা করা হয়েছে।
দীর্ঘ ২৯ বছর পর আবারও সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে নতুন করে হত্যা মামলা হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি ও চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ আরও কয়েকজন।
এই মামলার পর থেকেই আলোচনায় চলে আসেন অভিনেতা ডন। অনেকেই বলছেন, মামলার পর থেকে তিনি নাকি আত্মগোপনে আছেন। তবে সব গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে নিজেই জানালেন তাঁর অবস্থান।
ডন বলেন, ‘সবাই বলছে আমি নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ৩০ বছর পালাইনি, এখন পালাবো কেন? আমি বাসাতেই আছি। ভাবছি দু’এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবো। কারণ ৩০ বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করছি। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যে চলচ্চিত্র ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি, অভিনয়ের ভালো সুযোগ পাওয়ার আশায় হার্টথ্রব সালমান শাহর সঙ্গে জুটি গড়েছিলাম। মা-বউয়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষটির সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছি। তাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালমানকে ভালোবেসে আমার ক্যারিয়ারের বারোটা বেজেছে। আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’
চোখ ভেজানো কণ্ঠে ডন আরও বলেন, ‘সালমানকে ভালোবেসেছি বলেই জীবনের প্রচণ্ড ঝড় মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন আর সেই যন্ত্রণা সইতে পারছি না। আমিও তো মানুষ, আমারও তো বাঁচতে ইচ্ছে করে। সালমানকে ভালোবেসে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে, আমি করিনি—এটাই কি আমার অপরাধ? আমি আত্মহত্যা করলেই কি সবাই খুশি হতো? উপরে একজন আছেন, তিনি সব দেখেন। একদিন সত্য প্রকাশ হবেই, তবে আমি সেদিন দেখে যেতে পারব কিনা জানি না।’
মৃত্যুর আগে সালমান শাহর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের কথাও মনে পড়ে তার। বলেন, ‘৩০ আগস্ট আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসি। সালমান বলেছিল, পরিচালক শিবলী সাদিক ভাইকে জানাতে যে সে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেবে। আমি খবরটা পৌঁছে দিই। দুই দিনের ফাঁকে ভাবলাম বগুড়ায় ঘুরে আসি, কিন্তু বাস ধর্মঘটের কারণে ঢাকায় ফিরতে পারিনি। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ খবর— সালমান শাহ আর নেই।’
নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহ ছিলেন এক ধূমকেতু। মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে তিনি দর্শকদের মন জয় করে বাংলা সিনেমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হারানো গৌরব। ১৯৯৩ সালে তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তির পরই বদলে যায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের ধারা।
এরপর একে একে উপহার দেন *‘দেন মোহর’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিচার হবে’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘এই ঘর এই সংসার’*সহ ২৭টি জনপ্রিয় সিনেমা।
ওআ/আপ্র/২৭/১০/২০২৫


























