ঢাকা ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আমার লক্ষ্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা: শেখ হাসিনা

  • আপডেট সময় : ০২:২৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০২৩
  • ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। গতকাল রোববার টুঙ্গিপাড়ার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, যার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা এবং একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার জন্যই এই হত্যাকা- চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে এমন সময়ে হত্যা করা হয়েছিল যখন দেশ অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ‘মাই হাউজ, মাই ফার্ম’, কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ‘মাই ভিলেজ, মাই টাউন’ বাস্তবায়ন এবং শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি এলাকার জনগণকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, তারা তার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাকে আরও সময় দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত অন্যান্য নির্বাচনি এলাকার সংসদ সদস্যরা শুধু তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা দেখাশোনা করেন। আমাকে ৩০০টি নির্বাচনি এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হয়। কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দারা আমার নির্বাচনি এলাকার দায়িত্ব নেওয়ায় আমি তা করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে ছয় বছরের নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনও অঞ্চল নেই যেখানে আমি যাইনি। আমি নৌকা, সাম্পান, লঞ্চ ও রিকশা-ভ্যানে চড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছি। আমি এমনভাবে দেশ ভ্রমণ করেছি এবং সারা দেশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছি। মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ার উন্নয়ন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা শুনতে চান। শেখ হাসিনা বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে স্থানীয় জনগণ তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার অনুরোধ জানান। তারা শেখ হাসিনাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন এ লক্ষ্যে কাজ করার এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সাহায্য করার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তারা।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শনিবার (১ জুলাই) কোটালীপাড়া আসেন। পরে সেখান থেকে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার সঙ্গে রয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পুরো গোপালগঞ্জকে রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে সাজানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে নিম, বকুল ও আমের চারা রোপণ করেন। এছাড়াও নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে কোটালীপাড়া উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কোটালীপাড়া উপজেলার জনসাধারণের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকালে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফাতেহা পাঠ করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে মোনাজাতে যোগ দেন।
দয়া করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নেতা খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন কারাগারে সাজাভোগ করছেন। আমি দয়া করে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। দশ ট্রাক অস্ত্র, ২১শে গ্রেনেড হামলা করে আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। ওইদিন আইভি রহমানসহ আমার ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা সে না করেছে। প্রত্যেকটা আজ সাজাপ্রাপ্ত। পলাতক হয়ে ওই লন্ডনে বসে এখন সোস্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা আছে সেই বড় গলাই আমরা শুনি। তার সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? সাহস থাকলে বাংলাদেশে এসে কথা বলুক। রোববার দুপুর ১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির কাছে ক্ষমতা হচ্ছে তাদের অর্থ বানানোর মেশিন। ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। তারা যেন এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে এবং মানুষের কাছে আমাদের সেটা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির কাজ সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মানুষ খুন করা, ভোট চুরির জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করা। এসমস্ত কাজ বিএনপি করে গেছে। ২০০১ ক্ষমতায় আসার পর তাদের এ তা-ব আমরা দেখেছি। এরপর ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস। মানুষ বাসে চড়ে যাচ্ছে, লঞ্চে যাচ্ছে, ট্রেনে যাচ্ছে সেখানে পেট্রোল বোমা দিয়ে তাদের পুড়িয়ে মারল। তিন হাজার আটশ গাড়ি তারা পোড়ালো। তিন হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হলো। মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। মা দেখলো তার মেয়ে পুড়ে যাচ্ছে। আবার দেখলো তার ছেলে পোড়া, স্ত্রী দেখে তার স্বামী পোড়া। সেই মানুষগুলো আজও দুরবস্থায় আছে। সেগুলো আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। যারা মানুষ জীবন্ত পোড়াতে পারে, জীবন্ত হত্যা করতে পারে তাদের কাছে রাজনীতি বলতে কিছু নেই।
আমাদের দেশে একটা গ্রুপ আছে তারা নানা সময় তথ্য দিয়ে থাকে। তারা কখনো গ্রামে যায়নি। গ্রামের মানুষের কথা শোনেনি। গ্রামের মানুষের অবস্থাও তারা দেখেনি। আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি। তারা প্রাইভেট টেলিভিশনে গিয়ে টকশো করবে। আমাদের দেওয়া টেলিভিশন, আমাদের দেওয়া বিদ্যুৎ, আমাদের দেওয়া ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গীবত গায়। এটা তাদের চরিত্র। তবে ওই মিথ্যা বেশিদিন টেকেনি। সাময়িকভাবে তারা এটা করতে পারে। সত্যের জয় হয়। সত্যের জয় হবেই এটাই বাস্তবতা।
পদ্মা সেতু নির্মাণ বাঁধা দিয়েছিল। টাকা ফেরত নিয়েছিল। সেদিন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম কোনো দুর্নীতি হয়নি। তারা সেটা প্রমান করতে পারেনি। তাই সেতু আমরা নিজেদের অর্থে করেছি। সেদিন বাংলাদেশের মানুষের সহযোগী পেয়েছিলাম। এই বাংলাদেশের মানুষ তো আমার বড় শক্তি। তাদের উৎসাহ পেয়েছি। আমার দলেরও অনেকে বলেছিল এটা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমি বলেছিলাম আমি করব। তারা বলেছিলেন কিভাবে করবেন। তখন আমি বলেছিলাম দেখেন কিভাবে করি। বাংলাদেশের মানুষ আমার পাশে আছে। সেদিন দেশের ১৭ কোটি মানুষই আমাকে বলেছিল আপনি করেন আমরা আছি। এই শক্তি যার আছে তারা পারে। আজ সেটা আমরা করে দেখিয়ে দিলাম বাংলাদেশের মানুষ পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কিছু মানুষ আছে কথায় কথায় নালিশ করে। নালিশ করে কি হয়। ওই যে কথায় আছে না নালিশ করে বালিশ পাবে। ওরা ওইটাই পাওয়ার যোগ্য। যাদের নিজেদের ঘটিতে জোর থাকে না। যাদের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থাকে না। তাদের কাজ শুধু বিদেশের মানুষ কানে নালিশ আর সোস্যাল মিডিয়া বিভ্রান্ত ছড়ানো। আর তারা সেটাই করে বেড়ায়। এর আগে প্রটোকল ভেঙে নিজ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার হেঁটে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা: টুঙ্গিপাড়ায় প্রটোকল ভেঙে নিজ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার হেঁটে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুদিন সফরের শেষ দিনে গতকাল রোববার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান তিনি। এসময় উষ্ণ অভ্যর্থনা আর স্লোগানে ও মিছিলে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করে নেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। পরে প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে। সেখানে বক্তব্য রাখেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথাও শোনেন সরকার প্রধান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে এই পর্যন্ত আসা। এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে।
শনিবার সকালে দুদিনের সফরে কোটালীপাড়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। স্লোগানে স্লোগানে বরণ করে নেন প্রধানমন্ত্রীকে। পরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে কার্যালয় চত্বরে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। এরপর কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও দুপুরের খাবার খান প্রধানমন্ত্রী। পরে কোটালীপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাড়িতে বিশ্রামে যান প্রধানমন্ত্রী। রাতে সেখানেই তিনি রাত্রিযাপন করেন। রোববার দুপুরে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাবার শেষে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সঙ্গে ছিলেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আমার লক্ষ্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা: শেখ হাসিনা

আপডেট সময় : ০২:২৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। গতকাল রোববার টুঙ্গিপাড়ার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, যার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা এবং একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার জন্যই এই হত্যাকা- চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে এমন সময়ে হত্যা করা হয়েছিল যখন দেশ অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ‘মাই হাউজ, মাই ফার্ম’, কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ‘মাই ভিলেজ, মাই টাউন’ বাস্তবায়ন এবং শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি এলাকার জনগণকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, তারা তার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাকে আরও সময় দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত অন্যান্য নির্বাচনি এলাকার সংসদ সদস্যরা শুধু তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা দেখাশোনা করেন। আমাকে ৩০০টি নির্বাচনি এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হয়। কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দারা আমার নির্বাচনি এলাকার দায়িত্ব নেওয়ায় আমি তা করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে ছয় বছরের নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনও অঞ্চল নেই যেখানে আমি যাইনি। আমি নৌকা, সাম্পান, লঞ্চ ও রিকশা-ভ্যানে চড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছি। আমি এমনভাবে দেশ ভ্রমণ করেছি এবং সারা দেশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বাংলাদেশকে এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছি। মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ার উন্নয়ন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা শুনতে চান। শেখ হাসিনা বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে স্থানীয় জনগণ তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকার অনুরোধ জানান। তারা শেখ হাসিনাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন এ লক্ষ্যে কাজ করার এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সাহায্য করার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তারা।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শনিবার (১ জুলাই) কোটালীপাড়া আসেন। পরে সেখান থেকে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার সঙ্গে রয়েছেন। টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পুরো গোপালগঞ্জকে রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে সাজানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে নিম, বকুল ও আমের চারা রোপণ করেন। এছাড়াও নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে কোটালীপাড়া উপজেলার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কোটালীপাড়া উপজেলার জনসাধারণের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকালে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফাতেহা পাঠ করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে মোনাজাতে যোগ দেন।
দয়া করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নেতা খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন কারাগারে সাজাভোগ করছেন। আমি দয়া করে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। দশ ট্রাক অস্ত্র, ২১শে গ্রেনেড হামলা করে আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। ওইদিন আইভি রহমানসহ আমার ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা সে না করেছে। প্রত্যেকটা আজ সাজাপ্রাপ্ত। পলাতক হয়ে ওই লন্ডনে বসে এখন সোস্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা আছে সেই বড় গলাই আমরা শুনি। তার সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? সাহস থাকলে বাংলাদেশে এসে কথা বলুক। রোববার দুপুর ১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির কাছে ক্ষমতা হচ্ছে তাদের অর্থ বানানোর মেশিন। ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। তারা যেন এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে এবং মানুষের কাছে আমাদের সেটা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির কাজ সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মানুষ খুন করা, ভোট চুরির জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করা। এসমস্ত কাজ বিএনপি করে গেছে। ২০০১ ক্ষমতায় আসার পর তাদের এ তা-ব আমরা দেখেছি। এরপর ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস। মানুষ বাসে চড়ে যাচ্ছে, লঞ্চে যাচ্ছে, ট্রেনে যাচ্ছে সেখানে পেট্রোল বোমা দিয়ে তাদের পুড়িয়ে মারল। তিন হাজার আটশ গাড়ি তারা পোড়ালো। তিন হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হলো। মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। মা দেখলো তার মেয়ে পুড়ে যাচ্ছে। আবার দেখলো তার ছেলে পোড়া, স্ত্রী দেখে তার স্বামী পোড়া। সেই মানুষগুলো আজও দুরবস্থায় আছে। সেগুলো আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। যারা মানুষ জীবন্ত পোড়াতে পারে, জীবন্ত হত্যা করতে পারে তাদের কাছে রাজনীতি বলতে কিছু নেই।
আমাদের দেশে একটা গ্রুপ আছে তারা নানা সময় তথ্য দিয়ে থাকে। তারা কখনো গ্রামে যায়নি। গ্রামের মানুষের কথা শোনেনি। গ্রামের মানুষের অবস্থাও তারা দেখেনি। আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি। তারা প্রাইভেট টেলিভিশনে গিয়ে টকশো করবে। আমাদের দেওয়া টেলিভিশন, আমাদের দেওয়া বিদ্যুৎ, আমাদের দেওয়া ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গীবত গায়। এটা তাদের চরিত্র। তবে ওই মিথ্যা বেশিদিন টেকেনি। সাময়িকভাবে তারা এটা করতে পারে। সত্যের জয় হয়। সত্যের জয় হবেই এটাই বাস্তবতা।
পদ্মা সেতু নির্মাণ বাঁধা দিয়েছিল। টাকা ফেরত নিয়েছিল। সেদিন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম কোনো দুর্নীতি হয়নি। তারা সেটা প্রমান করতে পারেনি। তাই সেতু আমরা নিজেদের অর্থে করেছি। সেদিন বাংলাদেশের মানুষের সহযোগী পেয়েছিলাম। এই বাংলাদেশের মানুষ তো আমার বড় শক্তি। তাদের উৎসাহ পেয়েছি। আমার দলেরও অনেকে বলেছিল এটা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমি বলেছিলাম আমি করব। তারা বলেছিলেন কিভাবে করবেন। তখন আমি বলেছিলাম দেখেন কিভাবে করি। বাংলাদেশের মানুষ আমার পাশে আছে। সেদিন দেশের ১৭ কোটি মানুষই আমাকে বলেছিল আপনি করেন আমরা আছি। এই শক্তি যার আছে তারা পারে। আজ সেটা আমরা করে দেখিয়ে দিলাম বাংলাদেশের মানুষ পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কিছু মানুষ আছে কথায় কথায় নালিশ করে। নালিশ করে কি হয়। ওই যে কথায় আছে না নালিশ করে বালিশ পাবে। ওরা ওইটাই পাওয়ার যোগ্য। যাদের নিজেদের ঘটিতে জোর থাকে না। যাদের উপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থাকে না। তাদের কাজ শুধু বিদেশের মানুষ কানে নালিশ আর সোস্যাল মিডিয়া বিভ্রান্ত ছড়ানো। আর তারা সেটাই করে বেড়ায়। এর আগে প্রটোকল ভেঙে নিজ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার হেঁটে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা: টুঙ্গিপাড়ায় প্রটোকল ভেঙে নিজ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার হেঁটে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুদিন সফরের শেষ দিনে গতকাল রোববার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান তিনি। এসময় উষ্ণ অভ্যর্থনা আর স্লোগানে ও মিছিলে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করে নেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। পরে প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে। সেখানে বক্তব্য রাখেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথাও শোনেন সরকার প্রধান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে এই পর্যন্ত আসা। এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে।
শনিবার সকালে দুদিনের সফরে কোটালীপাড়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। স্লোগানে স্লোগানে বরণ করে নেন প্রধানমন্ত্রীকে। পরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে কার্যালয় চত্বরে তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। এরপর কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও দুপুরের খাবার খান প্রধানমন্ত্রী। পরে কোটালীপাড়া থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাড়িতে বিশ্রামে যান প্রধানমন্ত্রী। রাতে সেখানেই তিনি রাত্রিযাপন করেন। রোববার দুপুরে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাবার শেষে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে সঙ্গে ছিলেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।