ঢাকা ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

আমার মা’ই আমার দুর্গা!

  • আপডেট সময় : ১২:১২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

সাইফুল বিন হানিফ : সবার মঙ্গল লাভের তীব্র আকাক্সক্ষায় সারা দেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব। হেমন্তের রোদেলা দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের পর অতিপ্রিয় সাধনসঙ্গিনীকে সাজালাম মনের আপন টানে হঠাৎ করে আশ্চর্য্য হয়ে দেখলাম এ যে দুর্গেশন্দিনী। আপনদেবী ভক্তির পর হাস্যউজ্জল মুখে গৃহকোণ ছেড়ে বের হলাম ম-ব দেখার অজানা গন্তব্যে। রাস্তায় দাঁড়াতেই গাড়ী আসলো। গাড়ীতে উঠেই দেবীর অনুমতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার। আগারগাঁও, ইওঈঈ, গণভবন, সংসদভবন, খামারবাড়ি, ইন্দিরারোড়, গ্রীণরোড়, নীলক্ষেত হয়ে ঢাকেশ্বরীতে পৌছালাম বিকাল পাঁচটায়। যাওয়ার সময় রাস্তায় চোখে পড়ল ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ ‘চর্ম যার যার চুলকানি সবার’। গাড়ী যথাস্থানে রেখে ম-পে ঢুকে ইচ্ছামত ছবি তুললাম ও রাখলাম। সুদীর্ঘ লাইনে দাঁড়ালাম প্রসাদ নেওয়ার বাসনায়।অধিক প্রত্যাশার প্রসাদ পেয়ে কোক ও মিষ্টি কিনে গাড়ীতে বসে খেলাম আর আমাদের সাথে যুক্ত হল সজলদা । সে দেবীর ফেইসবুক বন্ধু।
তারপর গেলাম জগন্নাথ হল ম-পে। ঢুকার পর হাতের বাম পাশে পড়ল জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা হল। অন্তচুক্ষুয় ভেসে উঠল মেঘনাদির {ড…মেঘনা গুহঠাকুরতা} টলমল চোখে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও তাঁর বাবার স্মৃতিচারণ। ম-পে অসুরের রক্তস্নাত বক্ষ দেখে মনে পড়ল উন্নিশএকাত্তুর সালে স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে এদেশীয় কুলাঙ্গার রাজাকারদের সহায়তায় সুর্যসন্তানবুদ্ধিজীবি হত্যার সেই নরকিয়তায়।হঠাৎ করে বুক কেঁপে উঠল, লোম দাঁড়িয়ে গেল, স্তব্ধ হয়ে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে রইলাম ক্ষণিক সময়। ফেরার পথে চোখে পড়ল মৃৎশিল্পের দোকানের দিকে। দোকানের এগুলো কি আপনি তৈরী করেন? সে বলল আমার কি আর সাধ্য আছে বাবা ভগবান আমাদের দিয়ে করে। ভগ্নিপতি বানায় আর আমার বউ ফিনিসিং দেয়। বৌদ্ধ মহামানব ছিলেন এত কষ্ট করে বানিয়ে আমরা এ মহৎ শিল্পকে বিক্রি করতে বাধ্য পেটের জন্য।শুনে স্তম্বিত হয়ে ধিক্কার দিলাম অকৃতজ্ঞ রাষ্ট্র নীতিনির্ধারকদের। যারা শুধু ভোটের সময় তেল মারলেও পরে বাঁশ মারতেও দ্বিধাবোধ করে না।
শেয়ারবাজার কেলেংকারি,হলমার্ক,রানাপ্লাজা ধ্বস, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারির মত শত জঘন্য কাজে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকলেও মৃৎশিল্প বাঁচানোর কোন উদ্যোগ তো নেইই বরঞ্চ দেশ ত্যাগের পরিবেশ তিরী করে জমি দখলের হিড়িক চলছে দেশজুড়ে।
কাগজে কলমে স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছরেও স্বজন হারানো শহীদ পরিবারের সদস্যদের কষ্টের দুঃখের সকল আনন্দ । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকে গেছে হঠকারিতায়,বিচারের দাবিতে সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চ বিক্রিত। অনেকের কাছেই এ উৎসব যেন বেদনাবিধুর হতাশায় নিরাশায়।তাই আনন্দের দিনেও কাদতে হচ্ছে আমাদের আজো।
কেউ কি বলতে পারবে বিচার শেষ হবে কবে, কবে এক সাথে আনন্দ উপভোগ করবো প্রতিশোধের স্পৃহায়?
আসুন,
প্রতিজ্ঞা করি,আগামীতে মা আসার আগেই শেষ করবো রাজাকার ও তার দুসরদের।
কালোটাকার মালিকেরা অনেক জায়গায় কোটি টাকা খরচ করে পূজা করছে তবে কি মা অশুরের কাছে পরাজিত ?কেন মা প্রতিবাদ করে না ?
ম-পের পাশে ক্ষুধার্ত শিশু ক্ষুধার জ্বালায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে অথচ পূজা উপলক্ষে প্রসাদ,অতিথী আপ্যায়নের দ্রবাদি ও নেশা জাতীয় কুখাদ্যের জন্য লক্ষ টাকা ক্ষয় হয় তবুও মা নিশ্চুপ কেন বৈষম্যময় সমাজে।
মল্লিকা সেন গুপ্তের কথায় মিল রেখে বলতে চাই ………………………
‘আমার দুর্গা পথে প্রান্তরে স্কুল ঘরে থাকে আমার দুর্গা বিপদে আপদে আমাকে মা বলে ডাকে আমার দুর্গা আত্মরক্ষা শরীর পুড়বে মন না আমার দুর্গা নারী গর্ভের রক্ত মাংস কন্যা আমার দুর্গা গোলগাল মেয়ে আমার দুর্গা তন্বী আমার দুর্গা কখনো ঘরোয়া কখনো আগুন বহ্নি আমার দুর্গা মেধা পাঠিকার তিস্তা শীতলার বাঁধেরা আমার দুর্গা মোম হয়ে জ্বালে অমাবস্যার আধেরা আমার দুর্গা মণিপুর জুড়ে নগ্ন মিছিলে হাঁটে আমার দুর্গা কাস্তে হাতুড়ি আউস ধানের মাঠে আমার দুর্গা ত্রিশূল ধরেছে স্বর্গে এবং মর্ত্যে আমার দুর্গা বাঁচতে শিখেছে নিজেই নিজের শর্তে’
সনাতনিদের শারদীয় উৎসব শুভ হোক, হোক শুভ বুদ্ধির উদয়।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান একই প্রকৃতির সন্তান তাই সুসচেতন, বিবেকবান, মানবিক মানুষদের উচিৎ ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সকলে মিলেমশে মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষে উদারনীতি গ্রহণ করে বাহাত্তুরের সংবিধানের আলোকে যুগপযোগী ধর্মনির্পেক্ষ সংবিধান প্রণয়ণে বাধ্য করা । এটাই হোক বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মাপকাঠি।
মা বার বার আসবে,বার বার বিসর্জিত হবে কিন্তু হবে না অসুরের অশুভ শক্তির বিনাশ।এবারের প্রতিমা বিসর্জনের সাথে বিসর্জন হোক ধর্মান্ধতা, কুসংস্কাচ্ছন্নতা, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ ও মিথ্যাবাক।
জয় হোক মানুষের ।
জয় হোক মানবাতার।।
লেখক ঃ কবি ও সম্পাদক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আমার মা’ই আমার দুর্গা!

আপডেট সময় : ১২:১২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

সাইফুল বিন হানিফ : সবার মঙ্গল লাভের তীব্র আকাক্সক্ষায় সারা দেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসব। হেমন্তের রোদেলা দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের পর অতিপ্রিয় সাধনসঙ্গিনীকে সাজালাম মনের আপন টানে হঠাৎ করে আশ্চর্য্য হয়ে দেখলাম এ যে দুর্গেশন্দিনী। আপনদেবী ভক্তির পর হাস্যউজ্জল মুখে গৃহকোণ ছেড়ে বের হলাম ম-ব দেখার অজানা গন্তব্যে। রাস্তায় দাঁড়াতেই গাড়ী আসলো। গাড়ীতে উঠেই দেবীর অনুমতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার। আগারগাঁও, ইওঈঈ, গণভবন, সংসদভবন, খামারবাড়ি, ইন্দিরারোড়, গ্রীণরোড়, নীলক্ষেত হয়ে ঢাকেশ্বরীতে পৌছালাম বিকাল পাঁচটায়। যাওয়ার সময় রাস্তায় চোখে পড়ল ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ ‘চর্ম যার যার চুলকানি সবার’। গাড়ী যথাস্থানে রেখে ম-পে ঢুকে ইচ্ছামত ছবি তুললাম ও রাখলাম। সুদীর্ঘ লাইনে দাঁড়ালাম প্রসাদ নেওয়ার বাসনায়।অধিক প্রত্যাশার প্রসাদ পেয়ে কোক ও মিষ্টি কিনে গাড়ীতে বসে খেলাম আর আমাদের সাথে যুক্ত হল সজলদা । সে দেবীর ফেইসবুক বন্ধু।
তারপর গেলাম জগন্নাথ হল ম-পে। ঢুকার পর হাতের বাম পাশে পড়ল জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা হল। অন্তচুক্ষুয় ভেসে উঠল মেঘনাদির {ড…মেঘনা গুহঠাকুরতা} টলমল চোখে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও তাঁর বাবার স্মৃতিচারণ। ম-পে অসুরের রক্তস্নাত বক্ষ দেখে মনে পড়ল উন্নিশএকাত্তুর সালে স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে এদেশীয় কুলাঙ্গার রাজাকারদের সহায়তায় সুর্যসন্তানবুদ্ধিজীবি হত্যার সেই নরকিয়তায়।হঠাৎ করে বুক কেঁপে উঠল, লোম দাঁড়িয়ে গেল, স্তব্ধ হয়ে বাষ্পরুদ্ধ হয়ে রইলাম ক্ষণিক সময়। ফেরার পথে চোখে পড়ল মৃৎশিল্পের দোকানের দিকে। দোকানের এগুলো কি আপনি তৈরী করেন? সে বলল আমার কি আর সাধ্য আছে বাবা ভগবান আমাদের দিয়ে করে। ভগ্নিপতি বানায় আর আমার বউ ফিনিসিং দেয়। বৌদ্ধ মহামানব ছিলেন এত কষ্ট করে বানিয়ে আমরা এ মহৎ শিল্পকে বিক্রি করতে বাধ্য পেটের জন্য।শুনে স্তম্বিত হয়ে ধিক্কার দিলাম অকৃতজ্ঞ রাষ্ট্র নীতিনির্ধারকদের। যারা শুধু ভোটের সময় তেল মারলেও পরে বাঁশ মারতেও দ্বিধাবোধ করে না।
শেয়ারবাজার কেলেংকারি,হলমার্ক,রানাপ্লাজা ধ্বস, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারির মত শত জঘন্য কাজে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকলেও মৃৎশিল্প বাঁচানোর কোন উদ্যোগ তো নেইই বরঞ্চ দেশ ত্যাগের পরিবেশ তিরী করে জমি দখলের হিড়িক চলছে দেশজুড়ে।
কাগজে কলমে স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছরেও স্বজন হারানো শহীদ পরিবারের সদস্যদের কষ্টের দুঃখের সকল আনন্দ । যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকে গেছে হঠকারিতায়,বিচারের দাবিতে সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চ বিক্রিত। অনেকের কাছেই এ উৎসব যেন বেদনাবিধুর হতাশায় নিরাশায়।তাই আনন্দের দিনেও কাদতে হচ্ছে আমাদের আজো।
কেউ কি বলতে পারবে বিচার শেষ হবে কবে, কবে এক সাথে আনন্দ উপভোগ করবো প্রতিশোধের স্পৃহায়?
আসুন,
প্রতিজ্ঞা করি,আগামীতে মা আসার আগেই শেষ করবো রাজাকার ও তার দুসরদের।
কালোটাকার মালিকেরা অনেক জায়গায় কোটি টাকা খরচ করে পূজা করছে তবে কি মা অশুরের কাছে পরাজিত ?কেন মা প্রতিবাদ করে না ?
ম-পের পাশে ক্ষুধার্ত শিশু ক্ষুধার জ্বালায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে অথচ পূজা উপলক্ষে প্রসাদ,অতিথী আপ্যায়নের দ্রবাদি ও নেশা জাতীয় কুখাদ্যের জন্য লক্ষ টাকা ক্ষয় হয় তবুও মা নিশ্চুপ কেন বৈষম্যময় সমাজে।
মল্লিকা সেন গুপ্তের কথায় মিল রেখে বলতে চাই ………………………
‘আমার দুর্গা পথে প্রান্তরে স্কুল ঘরে থাকে আমার দুর্গা বিপদে আপদে আমাকে মা বলে ডাকে আমার দুর্গা আত্মরক্ষা শরীর পুড়বে মন না আমার দুর্গা নারী গর্ভের রক্ত মাংস কন্যা আমার দুর্গা গোলগাল মেয়ে আমার দুর্গা তন্বী আমার দুর্গা কখনো ঘরোয়া কখনো আগুন বহ্নি আমার দুর্গা মেধা পাঠিকার তিস্তা শীতলার বাঁধেরা আমার দুর্গা মোম হয়ে জ্বালে অমাবস্যার আধেরা আমার দুর্গা মণিপুর জুড়ে নগ্ন মিছিলে হাঁটে আমার দুর্গা কাস্তে হাতুড়ি আউস ধানের মাঠে আমার দুর্গা ত্রিশূল ধরেছে স্বর্গে এবং মর্ত্যে আমার দুর্গা বাঁচতে শিখেছে নিজেই নিজের শর্তে’
সনাতনিদের শারদীয় উৎসব শুভ হোক, হোক শুভ বুদ্ধির উদয়।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান একই প্রকৃতির সন্তান তাই সুসচেতন, বিবেকবান, মানবিক মানুষদের উচিৎ ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সকলে মিলেমশে মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষে উদারনীতি গ্রহণ করে বাহাত্তুরের সংবিধানের আলোকে যুগপযোগী ধর্মনির্পেক্ষ সংবিধান প্রণয়ণে বাধ্য করা । এটাই হোক বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মাপকাঠি।
মা বার বার আসবে,বার বার বিসর্জিত হবে কিন্তু হবে না অসুরের অশুভ শক্তির বিনাশ।এবারের প্রতিমা বিসর্জনের সাথে বিসর্জন হোক ধর্মান্ধতা, কুসংস্কাচ্ছন্নতা, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ ও মিথ্যাবাক।
জয় হোক মানুষের ।
জয় হোক মানবাতার।।
লেখক ঃ কবি ও সম্পাদক