প্রত্যশা ডেস্ক: বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি নেপাল। জেন-জি জোয়ারে ভেসে গেছে পিকে শর্মা অলির সরকার। পদত্যাগপত্র লিখে হেলিকপ্টারে পালিয়ে গেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখনও নেপালজুড়ে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। অরাজকতা ঠেকাতে কারফিউ জারি করেও হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনীকে।
এর মধ্যেই এবার সামনে থেকে আন্দোলন করা জেন-জিরা অভিযোগ তুলে বসেছে, হাইজ্যাক হয়ে গেছে বিপ্লব!
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরই মধ্যে নেপালের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া জেন-জি গোষ্ঠীগুলো ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তারা বলছে, তাদের এনে দেওয়া বিপ্লব ‘ছিনতাই করে নিয়েছে সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীরা’।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলেও একপর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্টের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘাত।
এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। এই আন্দোলনকে ‘জেন-জি রেভল্যুশন’ নাম দেন বিক্ষোভকারীরা। দুদিনের আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জনের বেশি। হতাহতের এসব ঘটনাতেই আরও উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
একপর্যায়ে তীব্র চাপের মুখে পদত্যাগ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এরপর পদত্যাগ করেন দেশটির প্রেসিডেন্টও। তবে, এরপরও চলতে থাকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ। বিবিসি বলছে, অনেক বিক্ষোভকারী এখন উদ্বিগ্ন, কারণ আন্দোলন ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ পরিচালনা করেছে।
বিক্ষোভকারীদের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গলবারের বিক্ষোভ নেপালের জেন-জিদের আয়োজিত। এটি একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল: জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতির অবসান।’
বিবৃতিতে জেন-জিরা দাবি করেন, আমাদের আন্দোলন অহিংস ছিল, এখনও আছে এবং শান্তিপূর্ণ নাগরিক সম্পৃক্ততার নীতিতে প্রোথিত। আমরা পরিস্থিতি ‘দায়িত্বের সঙ্গে পরিচালনা’, নাগরিকদের সুরক্ষা এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য সক্রিয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছি। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে আর কোনো বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেই এবং প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে কারফিউ বাস্তবায়নের আহ্বানও জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীরা আরও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য কখনোই দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করা বা অন্যদের আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্যোগের অপব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া ছিল না।
এদিকে নেপালের সেনাবাহিনীও অভিযোগ করেছে যে, বিভিন্ন ‘ব্যক্তি এবং নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠী’ বিক্ষোভে অনুপ্রবেশ করেছে এবং ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করছে।
ওআ/আপ্র/১০/০৯/২০২৫