ঢাকা ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

আমলাদের ক্ষমতা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ তোফায়েল-ফিরোজের

  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুন ২০২১
  • ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার শুরু থেকে জেলাওয়ারি ত্রাণ বিতরণসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের। বিষয়টি নিয়ে তখনই ক্ষোভ ছিল সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদের। তবে এবার সংসদে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কঠোর সমালোচনা করলেন খোদ সরকারি ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। তাদের দাবি, সচিবরা তাদের নির্ধারিত এলাকায় যান না। আর এমন সিদ্ধান্তের ফলে রাজনীতিবিদদের খাটো করা হয়েছে। দেশের জন্য রাজনীতিবিদদের অবদান ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রবীণ সংসদ তোফায়েল আহমেদ এবং বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ সচিবদের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়ার কড়া সমালোচনা করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘করোনাকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য…আমরা যারা জাতীয় সংসদ সদস্য এখানে উপস্থিত। এমন একজনও নাই যিনি নিজস্ব অর্থায়নে বা যেকোনোভাবে গরিব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছেন, আমরাও দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই এগুলো দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। অথচ প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিন্তু দেননি। অনেকেই যাননি। আমার নিজের জেলা ভোলায় যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটা কিন্তু ঠিক নয়। এটা একটা রাজনৈতিক সরকার। রাজনীতিবিদদের যে একটা কর্তৃত্ব বা কাজ সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায় ‘
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল। তিনিও একজন আমলা ছিলেন। আমরা যেসব কথাবার্তা বলি মানুষ এসব পছন্দ করে না। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম)-এ এমপিরা সচিবদের উপরে। বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা থাকবেন। বিএনপির বন্ধুরা আছেন, দুঃখ পাবেন না। জাতির পিতা হত্যার পরে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেব। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেটি করেছিলেন। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।’
প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকার। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে সেখানে থাকা উচিত। আমাদের জেলায় একজন সচিব যাবেন। তাকে গ্রহণ করবো, বরণ করে নেব এটা ঠিক আছে। কিন্তু যারা একদিনের জন্যও যান না। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমাদের মতো লোক আমরা…তারা যাবেন ফোন করবেন তারপর ইত্যাদি…এগুলো আমি বললাম না।’
এদিকে বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এখন রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘দেশে কোনো রাজনীতি নেই। আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে, কারণ কোনো রাজনীতি নেই তো। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় ওবায়দুল কাদের একদিকে পালাগান করেন, একটু পরেই টেলিভিশনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরেকটা পালাগান করেন। আমরা রাজনীতিবিদেরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালাগানের রাজনীতি দেখি। এই পালাগান চলছে ১০ বছর। রাজনীতিশূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই।’
কাজী ফিরোজ বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছে কারা? দেশ চালাচ্ছেন জগৎ শেঠরা। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদেরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদেরা।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আমলাদের ক্ষমতা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ তোফায়েল-ফিরোজের

আপডেট সময় : ০১:৫৩:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার শুরু থেকে জেলাওয়ারি ত্রাণ বিতরণসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের। বিষয়টি নিয়ে তখনই ক্ষোভ ছিল সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদের। তবে এবার সংসদে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কঠোর সমালোচনা করলেন খোদ সরকারি ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। তাদের দাবি, সচিবরা তাদের নির্ধারিত এলাকায় যান না। আর এমন সিদ্ধান্তের ফলে রাজনীতিবিদদের খাটো করা হয়েছে। দেশের জন্য রাজনীতিবিদদের অবদান ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রবীণ সংসদ তোফায়েল আহমেদ এবং বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ সচিবদের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়ার কড়া সমালোচনা করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘করোনাকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য…আমরা যারা জাতীয় সংসদ সদস্য এখানে উপস্থিত। এমন একজনও নাই যিনি নিজস্ব অর্থায়নে বা যেকোনোভাবে গরিব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছেন, আমরাও দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই এগুলো দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। অথচ প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিন্তু দেননি। অনেকেই যাননি। আমার নিজের জেলা ভোলায় যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটা কিন্তু ঠিক নয়। এটা একটা রাজনৈতিক সরকার। রাজনীতিবিদদের যে একটা কর্তৃত্ব বা কাজ সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায় ‘
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল। তিনিও একজন আমলা ছিলেন। আমরা যেসব কথাবার্তা বলি মানুষ এসব পছন্দ করে না। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম)-এ এমপিরা সচিবদের উপরে। বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা থাকবেন। বিএনপির বন্ধুরা আছেন, দুঃখ পাবেন না। জাতির পিতা হত্যার পরে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেব। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেটি করেছিলেন। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।’
প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকার। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে সেখানে থাকা উচিত। আমাদের জেলায় একজন সচিব যাবেন। তাকে গ্রহণ করবো, বরণ করে নেব এটা ঠিক আছে। কিন্তু যারা একদিনের জন্যও যান না। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমাদের মতো লোক আমরা…তারা যাবেন ফোন করবেন তারপর ইত্যাদি…এগুলো আমি বললাম না।’
এদিকে বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এখন রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না।’
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘দেশে কোনো রাজনীতি নেই। আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে, কারণ কোনো রাজনীতি নেই তো। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় ওবায়দুল কাদের একদিকে পালাগান করেন, একটু পরেই টেলিভিশনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরেকটা পালাগান করেন। আমরা রাজনীতিবিদেরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালাগানের রাজনীতি দেখি। এই পালাগান চলছে ১০ বছর। রাজনীতিশূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই।’
কাজী ফিরোজ বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছেন। দেশ চালাচ্ছে কারা? দেশ চালাচ্ছেন জগৎ শেঠরা। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদেরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদেরা।’