শাহানা হুদা রঞ্জনা :একটি খুব সাধারণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যখন ২২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তখন একজন সাধারণ ক্রেতা হিসেবে সব হিসাব-নিকাশ এলোমেলো হয়ে যেতে বাধ্য। বুঝতেই পারছি না কীভাবে এবং কেন এক বছরের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে এই হারে। আমাদের দেশে প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়। এদেশের মানুষ ভাতের পাশাপাশি যে সবজিটি খুব বেশি খায় তা হচ্ছে আলু, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। আমার দাদা বলতেন, ‘আলু নাকি তাদের দ্বিতীয় মা।’ ঢাকায় মানভেদে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার বাজারে আলুর কেজি ছিল ১৬ থেকে ২২ টাকা।
আলুকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাতে বলা হচ্ছে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ গম, ভুট্টা, চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করতো। আলু আমদানির প্রয়োজন পড়তো না; উল্টো বাংলাদেশ আলু রপ্তানি করতো। কিন্তু চলতি বছর হুট করেই আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ এখন আলু আমদানিকারক দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশে। এই কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যে আছে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চাসহ এজাতীয় পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ফল। এফএও বলছে, বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য আমদানির ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বাড়ছে। কারা অতিরিক্ত লাভের আশায় কালোবাজারি করে গোডাউন ভরাচ্ছে তা আমরা যেমন জানি, সরকার আরও ভালো জানে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে, উচ্চমূল্যে আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যই বিদেশ থেকে আনতে হবে।
এখানে কে খেলাটা খেলছে তা বোঝাই যায়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আজ আলুর দাম বাড়িয়েছে, গতকাল বাড়িয়েছিল ডিম, চাল, ডাল, তেল ও পিঁয়াজসহ আরও অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। ভবিষ্যতে হয়তো বাড়বে আরও অন্য কিছুর দাম। আমরা অধিকাংশ মানুষই চুপ করে থেকে মেনে নেই, কেউ কেউ বয়কটের ডাক দেই, কেউ কেউ কিনতে না পেরে হা-পিত্যেশ করি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে পড়েন সাধারণ মানুষ। শ্যাম্পু, কসমেটিকস, জামাকাপড়, জুতা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, এমনকি মাছ-মাংসসহ আরও কিছু জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষ চলতে পারে কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যদ্রব্য ও শিশুখাদ্যের দাম বাড়লে জীবন থমকে যায়।
আমি অর্থনীতির ছাত্রী নই। তাই খুব ভালো করে বুঝতে পারি না দেশের অর্থনীতি, ডলার সংকট, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, জিডিপি, মুদ্রানীতি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, রেমিট্যান্স ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা। একই কারণে ঠিক ঠাওর করতে পারি না-দেশের পরিবারগুলোর গড় আয় বেড়ে যখন দ্বিগুণ হয়েছে, তখন কেন দেশে পরিবারপ্রতি এবং মাথাপিছু ঋণও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশের পরিবারপ্রতি মাসিক গড় আয় গত ছয় বছরে দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার টাকা হয়েছে। আর আয়ের বিপরীতে পরিবারপ্রতি মাসে গড় ব্যয় হয় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। সেই হিসাবে পরিবারপ্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার টাকার মতো সঞ্চয় হয়।
অন্যদিকে দেশে জাতীয় পর্যায়ে পরিবারপ্রতি গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ২০১৬ সালের জরিপে উঠে এসেছিল, পরিবারপ্রতি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ২৪৩ টাকা। ওই সময় মাথাপিছু ঋণ ছিল ৯ হাজার ১৭৩ টাকা। সেই হিসাবে ছয় বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি এবং মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো। লাভ না ক্ষতি? আমরা বড়লোক হলাম নাকি দরিদ্র?
জরিপ বলছে, গ্রামাঞ্চলের মানুষের চেয়ে শহরাঞ্চলের মানুষের ঋণ অনেক বেশি। জরিপের তথ্যানুসারে, শহর এলাকায় প্রতি পরিবার গড়ে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৬ টাকা। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে প্রতি পরিবার ঋণ নিয়েছে ৪৪ হাজার ৪১১ টাকা। সেই হিসাবে শহরের পরিবারগুলোর ঋণ গ্রামের পরিবারগুলোর চেয়ে তিনগুণ বেশি।
জরিপের এই তথ্য প্রমাণ করছে যে শহরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি। বাড়তি আয়ের জন্য যেখানে অজস্র মানুষ শহরমুখী হচ্ছেন। সেখানে শহরে এসে তারা বাড়তি আয়ের সাথে ঋণের বোঝাও ঘাড়ে তুলে নিচ্ছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ বুঝতেই পারেন না কীভাবে তিনি বা তারা এ ঋণভুক্ত হয়েছেন? কোথায় তাদের সেই পরিবারপ্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার টাকার সঞ্চয়? শহরের অধিকাংশ পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। মাস শেষে টাকা সঞ্চয় তো দূরের কথা, প্রতিদিনের খরচ জোগাতে নাভিশ্বাস ওঠে। গ্রামে বিদ্যুৎ বিল কম, বাড়িভাড়া দিতে হয় না, শাক-লতাপাতা বাড়ির আঙিনায় পাওয়া যায়। চাইলে পুকুরের দুটি মাছ, পালন করা মুরগি, ডিম, গরুর দুধ, লাউ, কলা, মুলো পাওয়া যায়। কিন্তু শহরে প্রতিটি দানা কিনে খেতে হয়। অধ্যাপক সেলিম রায়হান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক দরিদ্র মানুষ রাজধানীতে চলে এসেছেন। এটা ঢাকায় দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পেছনে একটি কারণ হতে পারে।’
বিবিএসের জরিপে আরও যে সত্য চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা হচ্ছে দেশে দারিদ্র্য কমা সত্ত্বেও গত ছয় বছরে আয়বৈষম্য উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এর অসংখ্য প্রমাণ আমাদের সামনে দৃশ্যমান। যাদের হাতে অর্থসম্পদ রয়েছে, সেই সম্পদের পরিমাণ এত বেশি যে তারা দেশে টাকা জমা রাখা বা দেশে বিনিয়োগ করাটা নিরাপদ বোধ করেন না। তাই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন। দুবাই, আমেরিকা, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে প্রপার্টি কেনেন।
এছাড়া নগরীতে বাড়ছে লাক্সারিয়াস বাড়ি, গাড়ি, স্কুল, বিপণিবিতান, সুপারশপ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও খাদ্যদ্রব্য। অসংখ্য সাধারণ মানুষ যখন একদিকে আধা কেজি/ এক কেজি চিনি, লবণ, আলু, চাল, দুধ, পটোল, পিঁয়াজ কিনতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন, অনেকেই সন্তানের স্কুলের খরচ জোগাতে পারছেন না। অন্যদিকে তখন সুপারশপগুলোতে ট্রলিভরা সামগ্রী কিনছেন আরেক দল মানুষ। এর কিছু তারা খাচ্ছেন, কিছু নষ্ট করছেন অথবা কিছু ফেলে দিচ্ছেন। কারা ট্রলিভরা কেনাকাটা করছেন, কারা কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সন্তানের বিয়ে দিচ্ছেন, কারা বছর বছর নতুন গাড়ি-বাড়ির মালিক হচ্ছেন, কাদের সন্তান মোটা টাকা মাসোহারা পাচ্ছেন, কাদের সন্তান মাসে ১০-১৫ লাখ টাকা ব্যয়ের স্কুলে পড়ছেন? এসব নজরে আনলেই বোঝা যায় দেশে আয়বৈষম্যটা কোথায় এবং কতটা?
আয়বৈষম্যের চিত্রও ফুটে উঠেছে আরেকটি সরকারি সমীক্ষায়। বিবিএস ‘হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে ২০২২ অনুযায়ী দেশের মোট আয়ের ৪০ শতাংশই যায় শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর পকেটে। অর্থাৎ ৫ শতাংশ ধনীর হাতেই ৩০ শতাংশ আয়। বর্তমানের এই হার ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় তিন শতাংশ পয়েন্ট বেশি। এরাই সেই ধনীক গোষ্ঠী যারা দেশের অর্থনীতি কুক্ষিগত করে রেখেছেন। সুখ-সমৃদ্ধি বলতে যা বোঝায়, সবটাই তাদের জন্য। আর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশ পরিবারের আয় ২০২২ এ ছিল দেশের মোট আয়ের দশমিক ৩৭ শতাংশ। তালিকার নিচের দিকে স্থান পাওয়া ৫০ শতাংশ পরিবারের মালিকানায় থাকে দেশের মোট আয়ের ১৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর বৈষম্যের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সবধরনের হিসাবের মাধ্যমে বলা হচ্ছে ২০১৬ ও ২০২২ সালের সমীক্ষার মধ্যবর্তী সময়ে দেশে আয় বৈষম্য বেড়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা ধনী হচ্ছেন, কারা এই বৈষম্য সৃষ্টি করছেন? সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংক খাতে অনিয়ম, কর ফাঁকি ও অর্থপাচার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সমাজে আয়বৈষম্য বেড়েছে। কারা কীভাবে ব্যাংক খালি করে টাকা পাচার করছেন, এটা যেমন আপনি-আমি জানি, তেমনি কর্তৃপক্ষও জানে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ত্যালা মাথায় তেল ঢালা হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, বরং মন্ত্রী মহোদয়দের অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্যে হাস্যরসের তৈরি হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হলেও যেহেতু শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী কিনে খেতে পারছেন, তাই আলু, পটোল, ডিম, চিনি এসবের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কারও কোনো মাথাব্যথা দেখি না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া আয়ের হিসাব দেখলে বোঝা যায় অল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রার্থীর সম্পদ বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাই সমাজে আয়বৈষম্য তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত এবং একইসঙ্গে এটি বিস্ময়করও বটে। এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমাজের একটি বড় অংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এই যে দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য আলু, ডিম, পিঁয়াজসহ আরও অনেক কিছুর দাম বাড়ছে, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, সবধরনের দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, মধ্যবিত্ত মুখ থুবড়ে পড়ছে, তাতে আপনি-আমি অসহায় হয়ে পড়ছি। অথচ এ দেশের মাত্র ৫ শতাংশ ধনীর জন্য বিদেশি দামি ও ব্র্যান্ডের দামি পণ্য আমদানি করতে গিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম খাদ্য আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে। ২০২১ সালে বিশ্ববাজার থেকে প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন টন খাদ্যপণ্য আমদানি করে বিশ্বের খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় হয়েছে আমাদের দেশ।
এই দেশেই ওই একই সময়ে প্রায় ৯৩.৩ মিলিয়ন টন কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছে। চাল, শাকসবজি, মাছ ও ফলের মতো দেশে উৎপাদিত খাদ্যের মাথাপিছু ভোগের দিক থেকে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ খাদ্য রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে বলে উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনটি। বিশ্বের প্রধান ছয়টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে আছে দেশ। আর গম, ভুট্টা, চিনি, ভোজ্যতেল ও আলু উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ স্থান পায়নি। অবশ্য আমরা অনুভব করছি বাংলাদেশ টাকা পাচারে এগিয়ে থাকলেও অন্যসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। এমনকি ২০১৬ সালের তুলনায় দরিদ্র লোকের সংখ্যা কমলেও, আয়বৈষম্য বাংলাদেশকে নড়বড়ে করে তুলছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়ছে মানুষের মধ্যে সমতা বিধানে।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা এতকিছু হিসাব-নিকাশ বুঝি না, বুঝতে চাইও না। বুঝি শুধু নিজেদের পকেটের অবস্থা এবং অন্যের পকেট ফুলে উঠতে দেখা। এছাড়া বুঝি টাকার অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি এবং ফলে মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশে পৌঁছেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা ২০২১ সাল পর্যন্ত গত দশ বছরে দেখা গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে অনেক বেশি।
বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে ৬৮৬ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০২৩ সালে ২৭৯৩ ডলারে পৌঁছেছে। তাহলে আমার প্রশ্ন অধিকাংশ মানুষের দারিদ্র্যতা কমছে না কেন? কেন দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে? অবশ্য মাথাপিছু আয় মাপার প্রচলিত যে পদ্ধতি তাতে অতি ধনী, ধনী, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অতি দরিদ্র সবার আয়কেই একসাথে করে হিসাব করা হয়।
সে যাক অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ২০৩৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর)। বাংলাদেশ ২০৩৮ সালের মধ্যে টেবিলে ১৭ ধাপ উপরে উঠে আসবে, বর্তমান অবস্থান ৩৭তম। আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়ে যাবে এবং ২০৩৩ সালের মধ্যে ২৩তম স্থানে উঠে আসবে। সেই প্রবৃদ্ধি দেখার জন্য আমরা হয়তো অনেকেই বেঁচে থাকবো না। তাও প্রার্থনা করি দেশ এগিয়ে যাক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলীর ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল/অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল’ অংশটি আমাদের অনেকেরই জানা। এই ভেল শব্দটির অনেকগুলো অর্থ আছে যেমন- মিথ্যা, ঝুটা, কৃত্রিম, মেকি। কিন্তু আয়ের সমতা বিধান করতে না পারলে, বৈষম্য দূর করতে না পারলে, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারলে সবই গরল ভেল হয়ে যাবে।
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট।
আমরা কি ধনী নাকি দরিদ্র হলাম?
ট্যাগস :
আমরা কি ধনী নাকি দরিদ্র হলাম?
জনপ্রিয় সংবাদ