ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

আমন মৌসুমে সার সংকট দূর করতে হবে

  • আপডেট সময় : ০৫:৩৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে
  • ইয়াহিয়া নয়ন

দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা দিয়েছে সারের সংকট। এতে, বিপাকে পড়ছেন কৃষক। সরকারের কাছে যা মজুত আছে, তা চাহিদার তুলনায় কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলেও তেমন সংকট নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে বিশেষ সিন্ডিকেট সার নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের সংকট রয়েছে। ডিলারদের কাছে বিঘাপ্রতি ১০ কেজির বেশি সার পাচ্ছেন না কৃষক। কিন্তু কৃষকদের মতে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবসায়ী-ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন এবং সেজন্য সারের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। কৃষি উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ সার। ধান চাষের মৌসুমে এ উপকরণের সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়। চলমান আমন মৌসুমেও তাই সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশের একাধিক জেলার কৃষকরা চাহিদামাফিক সার না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। সার নিয়েও চলছে কারসাজি।

অপরদিকে সারের কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করছেন ডিলাররা। তাদের মতে, তারা যে পরিমাণ সার বরাদ্দ পান সেটি স্থানীয় কৃষকদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আমনের সময় চাহিদা বেশি হওয়ায় সারের সংকট বেড়েছে। তবে সার সংকটের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরের বক্তব্য হলো আমনের জন্য যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তার তুলনায় বর্তমানে বেশি মজুদ রয়েছে। সরকার নতুন করে সার আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে খুচরা পর্যায়ে সার সংকটের যে-সব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তা সমাধানে প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রশ্ন হলো পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকলে নতুন করে আমদানির প্রয়োজনীয়তা কী? নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রেও হিসাবের গরমিল আছে।

কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমে খুচরা পর্যায়েও সার সংকট কাম্য নয়। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি শুরু থেকে জোরদার করা দরকার ছিল। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চলছে। সরকার ও ডিলারদের বক্তব্যের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা মিলছে না। সার সংকটের চিত্র বর্তমানে স্পষ্ট। সরকারের প্রয়োজনমাফিক সার সরবরাহ নিশ্চিতে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। চাল জোগানের বড় একটি অংশ আসে আমন মৌসুম থেকে, মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৩৫ শতাংশ। খাদ্যনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আমন ধান। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, সার সংকট দূর করা না গেলে আমন উৎপাদন কমবে, যার প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও খাদ্যনিরাপত্তার ওপর পড়তে পারে। সার সংকটে এ মৌসুমের উৎপাদন ব্যাহত হবে বা খাদ্যনিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জরুরি ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে।

দেশে আমন ধান উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ সার। কারণ এ সময় আবহাওয়া তুলনামূলক বেশি অনিশ্চিত থাকে। মাটির উর্বরতা, আবহাওয়া ও জাতভেদে সারের সঠিক প্রয়োগ ফলনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বীজতলা থেকে চারা রোপণের কয়েকদিনের মধ্যে সার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া ধানের চারা বৃদ্ধির নির্দিষ্ট পর্যায়েও সার প্রয়োগ করতে হয়। এ সময় যদি কৃষক পর্যাপ্ত সার না পান তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

এবার আমনের উৎপাদন কমে গেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই সঙ্গে এর প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বর্তমানে অর্থনীতির জন্য বড় চাপ হয়ে আছে। জনজীবনে আর্থিক স্বস্তি নেই বাড়তি দামের কারণে। এমন পরিস্থিতিতে আমনের উৎপাদন কমলে চালের জোগান কমবে এবং এর প্রভাব পড়বে বাজারদরে। বন্যার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমন উৎপাদন কম হয়েছিল, যার প্রভাব বাজারে পড়তে দেখা গেছে। সে সময়ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি চড়া ছিল। এবারো আমন উৎপাদন কম হলে এর প্রভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাসিক ইকোনমিক আপডেট প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে কেবল চালের অবদানই ছিল ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ খাদ্যসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে চালের দাম এখনো বড় উদ্বেগের কারণ। সুতরাং চালের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাবে। আবার চালের জোগান বৃদ্ধিতে সরকার আমদানি করলে তার চাপ পড়বে বৈদেশিক মুদ্রায়। মনে রাখা প্রয়োজন, বর্তমানে দেশে ডলার প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা গেলেও ঝুঁকি এখনো রয়েই গেছে। রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো খুব বেশি উন্নত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে সার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

এখন সার সংকটের যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেটি সার সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও তদারকির ঘাটতিকে নির্দেশ করছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সারা দেশে সারের ডিলারশিপের অনুমতি দেয়। দেশে দুই সংস্থার মোট অনুমোদিত ডিলার আছে ৭ হাজার ১০০-এর বেশি। ডিলাররা যেন কোনোভাবেই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্যে সার কিনতে পারেন সেটিও নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এজন্য কেবল মূল্যতালিকা টাঙানো বা রশিদ বই চেক করলেই হবে না, মাঠপর্যায়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেখানে সংকটের অভিযোগ পাওয়া যাবে, দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অভিযুক্ত ডিলারদের অনুমোদন বাতিল করাও জরুরি, যাতে তা দৃষ্টান্ত হতে পারে অন্য ডিলারদের জন্য। এছাড়া ডিলারদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সার বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আবার সার সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখতে সময়মতো আমদানিও করা আবশ্যক। জানা গেছে, সাধারণত আমন মৌসুমকে লক্ষ্য রেখে সরকার জুনে সার আমদানি করে। এটি আমলাতান্ত্রিক ধীরগতি ও নীতি দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ আমদানিতে সরকারের দিক থেকে এ ধরনের উদাসীনতা একেবারেই কাম্য নয়। বিশেষত যখন দেশে গ্যাসের অভাবে একাধিক সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে যে সার সংকট দেখা দিয়েছে তার সমাধান সরকারকেই করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পেশা বদলাচ্ছেন শিক্ষকরা

আমন মৌসুমে সার সংকট দূর করতে হবে

আপডেট সময় : ০৫:৩৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ইয়াহিয়া নয়ন

দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা দিয়েছে সারের সংকট। এতে, বিপাকে পড়ছেন কৃষক। সরকারের কাছে যা মজুত আছে, তা চাহিদার তুলনায় কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবি, সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলেও তেমন সংকট নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে বিশেষ সিন্ডিকেট সার নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের সংকট রয়েছে। ডিলারদের কাছে বিঘাপ্রতি ১০ কেজির বেশি সার পাচ্ছেন না কৃষক। কিন্তু কৃষকদের মতে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবসায়ী-ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন এবং সেজন্য সারের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। কৃষি উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ সার। ধান চাষের মৌসুমে এ উপকরণের সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়। চলমান আমন মৌসুমেও তাই সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশের একাধিক জেলার কৃষকরা চাহিদামাফিক সার না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। সার নিয়েও চলছে কারসাজি।

অপরদিকে সারের কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করছেন ডিলাররা। তাদের মতে, তারা যে পরিমাণ সার বরাদ্দ পান সেটি স্থানীয় কৃষকদের চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আমনের সময় চাহিদা বেশি হওয়ায় সারের সংকট বেড়েছে। তবে সার সংকটের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরের বক্তব্য হলো আমনের জন্য যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তার তুলনায় বর্তমানে বেশি মজুদ রয়েছে। সরকার নতুন করে সার আমদানির উদ্যোগও নিয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে খুচরা পর্যায়ে সার সংকটের যে-সব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তা সমাধানে প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রশ্ন হলো পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকলে নতুন করে আমদানির প্রয়োজনীয়তা কী? নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রেও হিসাবের গরমিল আছে।

কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমে খুচরা পর্যায়েও সার সংকট কাম্য নয়। এক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি শুরু থেকে জোরদার করা দরকার ছিল। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চলছে। সরকার ও ডিলারদের বক্তব্যের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা মিলছে না। সার সংকটের চিত্র বর্তমানে স্পষ্ট। সরকারের প্রয়োজনমাফিক সার সরবরাহ নিশ্চিতে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। চাল জোগানের বড় একটি অংশ আসে আমন মৌসুম থেকে, মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৩৫ শতাংশ। খাদ্যনিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আমন ধান। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, সার সংকট দূর করা না গেলে আমন উৎপাদন কমবে, যার প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও খাদ্যনিরাপত্তার ওপর পড়তে পারে। সার সংকটে এ মৌসুমের উৎপাদন ব্যাহত হবে বা খাদ্যনিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জরুরি ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে।

দেশে আমন ধান উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ সার। কারণ এ সময় আবহাওয়া তুলনামূলক বেশি অনিশ্চিত থাকে। মাটির উর্বরতা, আবহাওয়া ও জাতভেদে সারের সঠিক প্রয়োগ ফলনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বীজতলা থেকে চারা রোপণের কয়েকদিনের মধ্যে সার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া ধানের চারা বৃদ্ধির নির্দিষ্ট পর্যায়েও সার প্রয়োগ করতে হয়। এ সময় যদি কৃষক পর্যাপ্ত সার না পান তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

এবার আমনের উৎপাদন কমে গেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই সঙ্গে এর প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বর্তমানে অর্থনীতির জন্য বড় চাপ হয়ে আছে। জনজীবনে আর্থিক স্বস্তি নেই বাড়তি দামের কারণে। এমন পরিস্থিতিতে আমনের উৎপাদন কমলে চালের জোগান কমবে এবং এর প্রভাব পড়বে বাজারদরে। বন্যার কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমন উৎপাদন কম হয়েছিল, যার প্রভাব বাজারে পড়তে দেখা গেছে। সে সময়ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি চড়া ছিল। এবারো আমন উৎপাদন কম হলে এর প্রভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাসিক ইকোনমিক আপডেট প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে কেবল চালের অবদানই ছিল ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ খাদ্যসহ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে চালের দাম এখনো বড় উদ্বেগের কারণ। সুতরাং চালের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাবে। আবার চালের জোগান বৃদ্ধিতে সরকার আমদানি করলে তার চাপ পড়বে বৈদেশিক মুদ্রায়। মনে রাখা প্রয়োজন, বর্তমানে দেশে ডলার প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা গেলেও ঝুঁকি এখনো রয়েই গেছে। রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো খুব বেশি উন্নত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে সার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

এখন সার সংকটের যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেটি সার সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও তদারকির ঘাটতিকে নির্দেশ করছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সারা দেশে সারের ডিলারশিপের অনুমতি দেয়। দেশে দুই সংস্থার মোট অনুমোদিত ডিলার আছে ৭ হাজার ১০০-এর বেশি। ডিলাররা যেন কোনোভাবেই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্যে সার কিনতে পারেন সেটিও নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এজন্য কেবল মূল্যতালিকা টাঙানো বা রশিদ বই চেক করলেই হবে না, মাঠপর্যায়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেখানে সংকটের অভিযোগ পাওয়া যাবে, দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অভিযুক্ত ডিলারদের অনুমোদন বাতিল করাও জরুরি, যাতে তা দৃষ্টান্ত হতে পারে অন্য ডিলারদের জন্য। এছাড়া ডিলারদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সার বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আবার সার সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখতে সময়মতো আমদানিও করা আবশ্যক। জানা গেছে, সাধারণত আমন মৌসুমকে লক্ষ্য রেখে সরকার জুনে সার আমদানি করে। এটি আমলাতান্ত্রিক ধীরগতি ও নীতি দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। কৃষি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ আমদানিতে সরকারের দিক থেকে এ ধরনের উদাসীনতা একেবারেই কাম্য নয়। বিশেষত যখন দেশে গ্যাসের অভাবে একাধিক সার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে যে সার সংকট দেখা দিয়েছে তার সমাধান সরকারকেই করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক।