লাইফস্টাইল ডেস্ক: অনেকেরই ‘ইমপালসিভ বায়িং’ অর্থাৎ আবেগবশে বা ঝোঁকের মাথায় জিনিসপত্র কিনে ফেলার বদভ্যাস আছে। এতে বাড়িতে যেমন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমতে থাকে, তেমনি টাকা-পয়সা বাঁচানোও হয়ে পড়ে কঠিন। এই বদভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি বিষয় জানা জরুরি। তা হলো-
প্রয়োজন ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রির লিংকে ক্লিক না করা: শপিং করতে এখন আর বাজারে যেতে হয় না। বাসায় বসে এক ক্লিকেই যা খুশি তা-ই কিনে ফেলা যায়। এই কারণে আমাদের ‘ইমপালসিভ বায়িং’য়ের প্রবণতাও বাড়ছে। দেখা গেল, একটা ওয়েবসাইটে ঢুকেছিলেন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটা পণ্য কিনতে। সেই সাইটেই আরও ১০টা পণ্যের ছবি দেখে সবগুলোতে ক্লিক করলেন, তার মধ্যে দুটি কিনেও ফেললেন। কিন্তু ওই দুটি পণ্য কেনার কোনো পরিকল্পনাই আপনার ছিল না। এ কারণে, অনলাইনে পণ্যের ছবি দেখেই ক্লিক করা এবং অর্ডার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সময় ও বাজেটের সীমা নির্ধারণ করা: মাঝেমধ্যে অনলাইন শপিং নেশার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। অনেকেই দেখা যায় কোনো একটা সাইটে প্রতিদিন ভিজিট করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করেন। আপনার যদি এ রকম কোনো বদভ্যাস দেখা দেয়, তাহলে ওই সাইটটি কবে, কতক্ষণের জন্য ভিজিট করবেন, তা নির্ধারণ করে নিন। নির্ধারিত সময়ের বাইরে ওই ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন না। কেনাকাটার বাজেট নির্ধারণ করাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। উৎসবের মৌসুমে নিজেদের জন্য আমরা শপিং করি, আবার পরিবার–পরিজনকেও উপহার দিতে হয়। উৎসবের সময়গুলোয় তাই আমাদের খরচের হাত বেশ খুলে যায়। তাই কার জন্য কত টাকা বরাদ্দ রাখবেন, সেটি আগেভাবেই ঠিক করে নিতে হবে।
নিউজলেটার রিসিভ করার ক্ষেত্রে বাছবিচার: যখন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে প্রথমবারের মতো রেজিস্ট্রেশন করেন, তখন সাধারণত আপনাকে একটি প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, আপনি সেই ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আপনার ই–মেইল আইডিতে নিউজলেটার পেতে চান কি না। সাধারণত এই অপশনে টিক দেওয়া থাকে। নিউজলেটার পেতে না চাইলে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার আগে টিকচিহ্নটি তুলে দিতে হয়। নিউজলেটারের মাধ্যমে অনলাইন শপগুলো তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে। গ্রাহকদের পণ্য কিনতে উৎসাহিত করাই নিউজলেটারের উদ্দেশ্য। কিন্তু নিয়মিত নিউজলেটার পেতে থাকলে আপনার মধ্যে ইমপালসিভ বায়িংয়ের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই নিউজলেটার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটু বেছে করবেন।
সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য কিনতেও বাজে খরচ না করা: আজকাল বেশ কিছু ওয়েবসাইট, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ও পেজে সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য বিক্রি হয়। এসব প্ল্যাটফর্মে বিক্রেতারা তাদের ব্যবহৃত পণ্য বিক্রি করে। নতুন পণ্যের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই এসব পণ্যের দাম কম থাকে। এসব পণ্য কেনার সময় মনে হতে পারে- ‘আরে, দাম তো কমই আছে। যাই, কিনে ফেলি ফটাফট কয়েকটা।’ এভাবেই সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য কিনতে বসে আপনি ইমপালসিভ বায়িংয়ে মজে যেতে পারেন। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখবেন, পণ্যগুলো সস্তা হলেও মূল্যহীন নয়।
বেশির চেয়ে মানসম্মত পণ্য কেনার দিকে নজর দেওয়া: কোনো দোকানে ডিসকাউন্ট চলছে দেখলেই সেখান থেকে একগাদা শপিং করে ফেলবেন না। সস্তা মানেই মানসম্মত নয়। বরং কম কিনলেও মানসম্মত পণ্য কেনার প্রতি গুরুত্ব দিন।
পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: আপনি যেসব পণ্য ব্যবহার করছেন, সেসব সস্তা হতে পারে। কিন্তু সস্তা মানেই যে পণ্যটি ব্যবহার করা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য তা নয়। হতে পারে, যে পণ্যটি আপনি এখন ব্যবহার করছেন, সেটির কারিগরেরা এখনো তাদের ন্যায্য মজুরি বুঝে পাননি। হতে পারে, পণ্যটি তৈরি করতে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পোশাক উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ও দূষণ হয়। শুধু তা-ই নয়, ভেবে দেখুন, পোশাক এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহন করতে যে প্লাস্টিক ব্যাগগুলো ব্যবহার করা হয়, পরিবেশের ওপর সেসবের প্রভাব কী? পরিবেশবান্ধব পণ্য কিনলে আপনার অর্থ ব্যয় করতে হবে বেশি। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় আপনি ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবেন। প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই যদি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়, তাহলে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে আর মন চাইবে না।
শুধু প্রয়োজনীয় পণ্যই কেনা: অনেক সময় আমরা এমন কিছু পণ্য কিনে বসি, যেসব আদতে আমাদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই নয় বা প্রয়োজন নেই। এ ধরনের পণ্য কেনার পেছনে অন্যকে দেখানোর বা অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতা কাজ করে। যেমন আমার বান্ধবীর হাই হিল আছে। আমার কেন থাকবে না? যাই, আমিও একটা কিনে ফেলি। কেনার পরে দেখা গেল, হাই হিল পরে আমি কুঁজো হয়ে হাঁটছি, আমার কোমরেও ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। সাধের হিল সপ্তাহখানেক পরই জুতার শেলফের এক কোনায় পড়ে পুরোনো হতে বাধ্য। কিন্তু তত দিনে ওই হিল কেনার টাকাটাও তো পানিতে পড়ল! তাই নিজের জন্য সেটাই কিনুন, যা আপনার ব্যবহারের উপযোগী, যো ব্যবহার করে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
পুরোনো জিনিসটিকেই নতুন রূপ দেওয়া: বলিউড তারকা আলিয়া ভাটের মেহেদি অনুষ্ঠানের পোশাকের কথা মনে আছে? প্যাঁচওয়ার্কের লেহেঙ্গাটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৮০ টুকরা পরিত্যক্ত কাপড়। চাইলে আপনিও নিজের ফেলে দেওয়া পোশাকগুলো থেকে কাপড় সংগ্রহ করে নতুন পোশাক তৈরি করতে পারেন। পুরোনো, রঙ চটে যাওয়া পোশাককেই একটু এমব্রয়ডারি বা হ্যান্ড পেইন্টের মাধ্যমে দিতে পারেন নতুন রূপ। শুধু পোশাকই নয়, ঘরে ব্যবহারের অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। এতে পুরোনোর ভেতরেই আপনি নতুনত্ব খুঁজে পাবেন। বারবার নতুন জিনিস কিনতে কম ইচ্ছা করবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।