ফারজানা কাশেমী : তথ্যসূত্রে প্রকাশিত যে, যুক্তরাষ্ট্রে কোন এক হাসপাতালে দীর্ঘদিন কোমায় থাকায় নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। উন্নত রাষ্ট্রের বিপুল সুযোগ-সুবিধা প্রদান সত্ত্বেও নৈতিক স্খলন রুখতে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানবসভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বটে। পটপরিক্রমায় কল্যাণকর রাষ্ট্র নির্মাণ হয়েছে। তবুও মুক্ত হয়নি কুরুচিপূর্ণ নৈতিক স্খলন। অদৃশ্য পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যযুগীয় বর্বরতায় যেন ধাবিত হচ্ছে নারীর প্রতি বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ যৌন হয়রানি ও নির্যাতন। মর্গে মৃত নারী দেহ’র সাথে বিকৃত যৌনচারের প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কাছে। সংশ্লিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি উক্ত মর্গের ডোম। মৃতদেহের ডিএনএ (উঘঅ) পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি বিকৃত যৌনাচার সম্পন্ন করেন। যার আলামত পাওয়া গেছে মৃত নারীর শরীরে। মৃত নারীর শরীরে পাওয়া গেছে অভিযুক্ত ব্যক্তির শুক্রাণু।
প্রচলিত রীতি নীতি, ভাবধারা ও চিন্তাশীল গাম্ভীর্যে কিছু মতধারায় প্রচলিত রয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ নারীর পোশাক। যেখানে মৃত নারীর শরীরও বিকৃত যৌনাচারের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়, সেখানে পৃথিবীর কোন অববয় (আবরন) নারীর শরীর ও মনকে সুরক্ষা দিতে অপারগ। শুধু গজ কাপড়ে নারীকে সুরুক্ষা দেওয়ার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা আবহমান কাল থেকে প্রচলিত। অসাড় মগজ, মস্তিষ্ক, কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিতের নামান্তরে পঁচা শামুকে আচ্ছন্ন এই জনপদ। যেখানে মৃত নারীর শরীর অসুর ছুয়ে যায়, সেখানে জীবিত নারীদেহ প্রতিনিয়ত যেন ভোগ চরিত্রের চক্ষু লালসার উপজীব্য।
উচ্চপদস্থ ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্লেষণে নারী নির্যাতনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় নারীবাদী মানসিকতা। ‘বাদ’ মানে সংকীর্ণতা, যার মোড়কে নারীকে আবদ্ধ করার কৌশলে আরোপিত হয় তথাকথিত ‘নারীবাদ’। এর মাধ্যমে ব্যাহত হয় নারীর চিন্তাশক্তির উন্মেষ ও প্রকাশে বাধার বালুরাশি। সময়ের প্রবাহে অস্থির, গতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী নির্যাতনের হার। শুধু বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নির্যাতনের মূখ্য কারণ নয়। সাথে রয়েছে, আনুষঙ্গিক প্রচ্ছন্ন প্রভাবক। অপরাধের শিকার ব্যক্তির ওপর দোষারোপ, আচার-আচরণ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য, চারিত্রিক কালিমা লেপন ও জীবনধারণ প্রক্রিয়া সম্মন্ধে বিরূপ দৃষ্টি। পক্ষান্তরে প্রশয় পায় অপরাধী ও তাদের কর্মযজ্ঞ।
নারীকে সুরক্ষা দেয়া সকল সুনাগরিকের কর্তব্য। নারী ভিন্ন গ্রহ থেকে আগত জীব নয়। নারীর সুরক্ষায় রক্ষিত হয় জাতিগোষ্ঠী তথা আপামর মানবগোষ্ঠী।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ।
আবৃত সমাজ ব্যবস্থায় অনাবৃত মানুষ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ