ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫
কারাগারে চার আসামি

আবু সাঈদ হত্যায় ২৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা

  • আপডেট সময় : ০৪:২৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে -ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এছাড়া এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের প্রক্টর, পুলিশের দুই সদস্য এবং ছাত্রলীগের এক নেতাকে পাঠিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৯ এপ্রিল) বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নের্তৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো চারজন হলেন- রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। যারা সাঈদকে সরাসরি গুলি করেছিল তাদের মধ্যে দুজন এসআই আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ওই সময়ের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী আকাশ।

সকাল ১০টায় এই চারজনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বেলা পৌনে ১২টায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের উপর শুনানি হয়। প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. মিজানুল ইসলাম শুনানি করেন।

শুনানিতে মিজানুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার চারজনের বিরুদ্ধে হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল কাস্টডিতে পাঠানোর আবেদন করছি।

তদন্ত কর্মকর্তা ‘কাজ শেষ করে এনেছেন’ জানিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ২৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। তদন্ত শেষ করতে আরো দুই মাস সময় চাই। ট্রাইব্যুনাল ১৫ জুন সময় দিয়ে চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।

পরে সংবাদ সম্মেলনে মিজানুল ইসলাম বলেন, সাঈদ হত্যা মামলায় যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ মিলেছে, তাদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত ও উৎসাহিত করেছেন তাদের নামও আছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন আসামি করা হয়নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর আবু সাঈদের পরিবার আরেকটি মামলা করে। যদি ওই মামলার সকল আসামি তদন্তে এই মামলার আসামি হন তাহলে ওই মামলা চলবে না।

শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশেই অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২৬ জনের যে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সেখানে শেখ হাসিনার নাম আছে কী নাই সেটা তো আমরা বলিনি। আর একটি ঘটনায় একাধিক মামলা হতেও ট্রাইব্যুনাল আইনে বাধা নাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন সাঈদ।

ওই ঘটনায় ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি সাঈদের পরিবার ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা (আইসিটি বিডি কেস নম্বর: ১২/২০২৫) করেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এম তাজুল ইসলাম। গত ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়সহ চার জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কারাগারে চার আসামি

আবু সাঈদ হত্যায় ২৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা

আপডেট সময় : ০৪:২৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এছাড়া এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের প্রক্টর, পুলিশের দুই সদস্য এবং ছাত্রলীগের এক নেতাকে পাঠিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (৯ এপ্রিল) বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নের্তৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো চারজন হলেন- রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। যারা সাঈদকে সরাসরি গুলি করেছিল তাদের মধ্যে দুজন এসআই আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ওই সময়ের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী আকাশ।

সকাল ১০টায় এই চারজনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বেলা পৌনে ১২টায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের উপর শুনানি হয়। প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. মিজানুল ইসলাম শুনানি করেন।

শুনানিতে মিজানুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার চারজনের বিরুদ্ধে হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল কাস্টডিতে পাঠানোর আবেদন করছি।

তদন্ত কর্মকর্তা ‘কাজ শেষ করে এনেছেন’ জানিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ২৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। তদন্ত শেষ করতে আরো দুই মাস সময় চাই। ট্রাইব্যুনাল ১৫ জুন সময় দিয়ে চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।

পরে সংবাদ সম্মেলনে মিজানুল ইসলাম বলেন, সাঈদ হত্যা মামলায় যে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ মিলেছে, তাদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত ও উৎসাহিত করেছেন তাদের নামও আছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন আসামি করা হয়নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর আবু সাঈদের পরিবার আরেকটি মামলা করে। যদি ওই মামলার সকল আসামি তদন্তে এই মামলার আসামি হন তাহলে ওই মামলা চলবে না।

শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশেই অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২৬ জনের যে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সেখানে শেখ হাসিনার নাম আছে কী নাই সেটা তো আমরা বলিনি। আর একটি ঘটনায় একাধিক মামলা হতেও ট্রাইব্যুনাল আইনে বাধা নাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন সাঈদ।

ওই ঘটনায় ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি সাঈদের পরিবার ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা (আইসিটি বিডি কেস নম্বর: ১২/২০২৫) করেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এম তাজুল ইসলাম। গত ২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়সহ চার জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।