ঢাকা ০৭:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

আবারও জেলিফিশে ছেয়ে গেছে কক্সবাজার সৈকত

  • আপডেট সময় : ১১:২০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • ১৩৩ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কিছুদিন আগেই কক্সবাজার কলাতলী সংলগ্ন সৈকতে শত শত সাদা নুইন্যা বা সাদা জেলিফিশ মৃত অবস্থায় ভেসে আসে। সেই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরেই সৈকতে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসে অসংখ্য মাছ। তারও দুই সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই আবারও জেলিফিশে ছেয়ে গেছে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত।
গতকাল শনিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণি ও শৈবাল পয়েন্টে এসব জেলিফিশ ভেসে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর সৈকতে জেলিফিশ ভেসে আসে। তবে এ বছর তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি জেলিফিশ ভেসে এসেছে। বছরের শেষের দিকে সৈকতে দফায় দফায় জেলিফিশের দেখা মিলছে। গত আগস্ট টানা দুই দিন (৩ ও ৪ আগস্ট) এবং সবশেষ ১১ নভেম্বরেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিপুল সংখ্যক জেলিফিশ ভেসে এসেছিল।
সৈকতে দায়িত্বরত বিচকর্মী মো. বেলাল হোসেন বলেন, আজ সকালে জোয়ারের পানিতে জেলিফিশগুলো ভেসে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে টানা জালে আটকে পড়ে মারা যায় জেলিফিশগুলো। টানা জাল থেকে জেলেদের ফেলে দেওয়া মৃত জেলিফিশ ভাসতে ভাসতে সৈকতে চলে আসে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, কক্সবাজার সমুদ্রের জেলিফিশের প্রজন্ম বেশি। কিন্তু জেলেদের কাছে এ মাছের কোনও গুরুত্ব না থাকায় মেরে ফেলেন। মরে যাওয়া মাছগুলো কূলে ভেসে আসে। ভেসে আসা জেলিফিশে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, লোবোনিমুইডিস রোবোস্টাস বা স্থানীয় ভাষায় সাদা নুইন্না প্রজাতির এই জেলিফিশের সংস্পর্শে গেলে কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না। বরং প্রক্রিয়া করা গেলে খাদ্য হিসেবে বেশ উপযোগী জেলিফিশ। এটি নিয়ে গবেষণা চলছে। স্থানীয় ভাষায় জেলিফিশকে ‘নুইন্যা’ বলে সম্বোধন করা হয়। হাবিবুর রহমান নামের এক জেলে জানান, কক্সবাজারের মানুষ জেলিফিশ খায় না। এগুলো বেচাকেনাও হয় না। ফলে এসব আমাদের কোনও কাজে আসে না। বরং কিছু প্রজাতির জেলিফিশ গায়ে লাগলে মারাত্মকভাবে চুলকায়। তাই এসব জালে আটকা পড়লে আমরা ফেলে দেই।
গত ১১ নভেম্বর ভেসে আসা জেলিফিশের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিওআরআইর) সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। সেসময় সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানিয়েছিলেন, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জানা ২ হাজার প্রজাতির জেলিফিশের মধ্যে মাত্র যে ১২টি প্রজাতির খাদ্যমূল্য আছে তারমধ্যে সাদা নুইন্যা বা হোয়াইট টাইপ জেলিফিশ অন্যতম। এটি খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। এই জেলিফিশটির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র বঙ্গপোসাগরের কক্সবাজার উপকূল। তিনি আরও জানান, বঙ্গপোসাগর সাদা নুইন্যার অন্যতম আবাসস্থল হলেও আমাদের দেশে এর কোনও ব্যবহার নেই। অথচ বিশ্বে জেলিফিশের ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। আমরাও এই অবহেলিত সামুদ্রিক পণ্যটির স্থানীয় বাজার সৃষ্টিসহ রফতানি করে সুনীল অর্থনীতিতে অনন্য ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

আবারও জেলিফিশে ছেয়ে গেছে কক্সবাজার সৈকত

আপডেট সময় : ১১:২০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কিছুদিন আগেই কক্সবাজার কলাতলী সংলগ্ন সৈকতে শত শত সাদা নুইন্যা বা সাদা জেলিফিশ মৃত অবস্থায় ভেসে আসে। সেই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরেই সৈকতে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে আসে অসংখ্য মাছ। তারও দুই সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই আবারও জেলিফিশে ছেয়ে গেছে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত।
গতকাল শনিবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণি ও শৈবাল পয়েন্টে এসব জেলিফিশ ভেসে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর সৈকতে জেলিফিশ ভেসে আসে। তবে এ বছর তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি জেলিফিশ ভেসে এসেছে। বছরের শেষের দিকে সৈকতে দফায় দফায় জেলিফিশের দেখা মিলছে। গত আগস্ট টানা দুই দিন (৩ ও ৪ আগস্ট) এবং সবশেষ ১১ নভেম্বরেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিপুল সংখ্যক জেলিফিশ ভেসে এসেছিল।
সৈকতে দায়িত্বরত বিচকর্মী মো. বেলাল হোসেন বলেন, আজ সকালে জোয়ারের পানিতে জেলিফিশগুলো ভেসে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে টানা জালে আটকে পড়ে মারা যায় জেলিফিশগুলো। টানা জাল থেকে জেলেদের ফেলে দেওয়া মৃত জেলিফিশ ভাসতে ভাসতে সৈকতে চলে আসে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, কক্সবাজার সমুদ্রের জেলিফিশের প্রজন্ম বেশি। কিন্তু জেলেদের কাছে এ মাছের কোনও গুরুত্ব না থাকায় মেরে ফেলেন। মরে যাওয়া মাছগুলো কূলে ভেসে আসে। ভেসে আসা জেলিফিশে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, লোবোনিমুইডিস রোবোস্টাস বা স্থানীয় ভাষায় সাদা নুইন্না প্রজাতির এই জেলিফিশের সংস্পর্শে গেলে কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না। বরং প্রক্রিয়া করা গেলে খাদ্য হিসেবে বেশ উপযোগী জেলিফিশ। এটি নিয়ে গবেষণা চলছে। স্থানীয় ভাষায় জেলিফিশকে ‘নুইন্যা’ বলে সম্বোধন করা হয়। হাবিবুর রহমান নামের এক জেলে জানান, কক্সবাজারের মানুষ জেলিফিশ খায় না। এগুলো বেচাকেনাও হয় না। ফলে এসব আমাদের কোনও কাজে আসে না। বরং কিছু প্রজাতির জেলিফিশ গায়ে লাগলে মারাত্মকভাবে চুলকায়। তাই এসব জালে আটকা পড়লে আমরা ফেলে দেই।
গত ১১ নভেম্বর ভেসে আসা জেলিফিশের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিওআরআইর) সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। সেসময় সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানিয়েছিলেন, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের জানা ২ হাজার প্রজাতির জেলিফিশের মধ্যে মাত্র যে ১২টি প্রজাতির খাদ্যমূল্য আছে তারমধ্যে সাদা নুইন্যা বা হোয়াইট টাইপ জেলিফিশ অন্যতম। এটি খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। এই জেলিফিশটির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র বঙ্গপোসাগরের কক্সবাজার উপকূল। তিনি আরও জানান, বঙ্গপোসাগর সাদা নুইন্যার অন্যতম আবাসস্থল হলেও আমাদের দেশে এর কোনও ব্যবহার নেই। অথচ বিশ্বে জেলিফিশের ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। আমরাও এই অবহেলিত সামুদ্রিক পণ্যটির স্থানীয় বাজার সৃষ্টিসহ রফতানি করে সুনীল অর্থনীতিতে অনন্য ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।