আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার জন্য দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও আফগান সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের অনিচ্ছাকে দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দুই দিন ধরে টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলোতে কাবুলের বিশৃঙ্খলার দৃশ্যগুলো দেখানোর পর নীরবতা ভেঙে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত সোমবার বাইডেন বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নিজের সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন তিনি।
কাবুলের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমা উন্মোচন করে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে নাজুক সংকটে ফেলে দিলেও নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে বলে জানান বাইডেন।
তালেবান নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারে হস্তক্ষেপ করলে ‘ধ্বংসাত্মক শক্তির’ মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
কাবুল থেকে মার্কিন দূতাবাস কর্মী, বেসামরিক নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করা আফগান নাগরিকদের প্রত্যাহার নিরাপদ করতে বাইডেন সেখানে অতিরিক্ত সেনা পাঠাতে বাধ্য হন কারণ তারা তালেবানের প্রতিশোধমূলক হামলার মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টালমাটাল চার বছরের পর ক্ষমতায় এসে বাইডেন ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’ বলে মিত্র বিশ্ব নেতাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তালেবান সহজে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না, বাইডেন এমন অনুমান প্রকাশ করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আতঙ্কিত পরিবেশে দেশটি ছাড়ায় বিশ্ব মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে আল কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো আবার পুনর্গঠিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারা, দেশটির সাবেক কয়েকজন জেনারেল এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বাইডেনের আফগান নীতির কঠোর সমালোচনা করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেছেন, “আমি দৃঢ়ভাবে আমার সিদ্ধান্তের পক্ষে বলছি। ২০ বছর পর আমি বুঝতে পেরেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ভালো কোনো সময় কখনোই ছিল না, এ কারণেই আমরা এখনো সেখানে আছি।”
বাইডেন জানান, কাবুলের বিশৃঙ্খলার কিছু দৃশ্য তার কাছেও ‘অত্যন্ত অপ্রীতিকর’ ঠেকেছে কিন্তু আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি গণ-প্রস্থান না চাওয়ায় আগেই প্রত্যাহার শুরু করতে পারেননি তিনি।
তালেবান যে গতিতে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তা প্রত্যাশিত ছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি। বিদ্রোহীদের এ তড়িৎ অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও হতচকিত হয়ে পড়েন। তাদের ধারণা ছিল, আফগান সেনাবাহিনী হয় বিদ্রোহীদের প্রতিহত করবে অথবা তাদের কয়েক মাস ঠেকিয়ে রাখবে। “সত্য হচ্ছে, আমরা যা অনুমান করেছিলাম তার চেয়েও দ্রুতগতিতে ঘটনা ঘটে যায়। তারপর কী ঘটেছে? আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা হাল ছেড়ে দেশ থেকে পালালেন। আফগান সেনাবাহিনীও লড়াইয়ের চেষ্টা না করেই হাল ছেড়ে দিল,” বলেন বাইডেন।
তিনি তার পূর্ববর্তী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও সমালোচনা করেন; যার প্রশাসন তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল, এতে গোষ্ঠীটি ‘২০০১ এর পর থেকে সামরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যায়’ বলে মন্তব্য করেন বাইডেন।
আফগানিস্তানের প্রধান দুই নেতা আশরাফ গানি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সমালোচনা করে বাইডেন বলেছেন, তিনি তালেবানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা করার পরামর্শ দিলেও ওই দুই নেতা তা ‘সরাসরি প্রত্যাখ্যান’ করেন।
আফগান সেনাবাহিনীর ‘লড়াইয়ের অনিচ্ছাকে’ দায়ী করলেন বাইডেন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ