ঢাকা ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন

  • আপডেট সময় : ১১:৫৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৭ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে দেশটি থেকে সব সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তালেবান ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় তাড়াহুড়া করে ও অপমানজনকভাবে দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হয় ওয়াশিংটন ও এর নেটো মিত্ররা।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক কিন্তু বিশৃঙ্খলভাবে আকাশপথে মার্কিন নাগরিক, অন্যান্য দেশগুলোর নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করার কারণে ঝুঁকিতে থাকা বহু আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করে ওয়াশিংটন ও নেটো মিত্ররা। তবে এরপরও পশ্চিমা দেশগুলোকে সহায়তা করা ও সরিয়ে নেওয়ার যোগ্য প্রায় লাখো আফগান পেছনে পড়ে থাকে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন সেনাবাহিনীর ১৮ এয়ারবোর্ন কোরের ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল ক্রিস ডনাহিউ যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সৈন্য হিসেবে আফগানিস্তানের মাটি ছাড়েন। পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেনজি জানান, কাবুলের স্থানীয় সময় গত সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে ছেড়ে আসা শেষ সি-১৭ ফ্লাইটে ছিলেন আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রস উয়িলসন।
“যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীতে থাকা প্রতিটি সদস্য এখন আফগানিস্তানের বাইরে। শতাভাগ নিশ্চিত করে এটি বলতে পারি আমি। “এই প্রস্থানের সঙ্গে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা যুক্ত আছে। যাদের সরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম তাদের সবাইকে আনতে পারিনি আমরা। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি আরও ১০ দিনও থাকতাম তবুও সবাইকে নিয়ে আসতে পারতাম না আমরা,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শেষ করে আফগানিস্তানের মাটি থেকে দেশটির শেষ সৈন্য চলে যাওয়ার পর গুলি ফুটিয়ে উল্লাস করে তালেবান। তালেবান মুখপাত্র ক্কারি ইউসুফ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সৈন্য কাবুল বিমানবন্দর ছেড়েছে আর আমাদের দেশ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করেছে।”
সব মার্কিন সেনা চলেও যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একটি দল যাদের সংখ্যা দুইশর নিচে বলে হিসাব দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের, কাবুল ছাড়তে চেয়েও শেষ ফ্লাইটে উঠতে পারেননি। তাদের সংখ্যা ১০০ এর একটু উপরে হতে পারে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীগুলোর প্রত্যাহারে তার বেঁধে দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমার সিদ্ধান্তে অটল থাকার পক্ষে কথা বলেছেন। তবে তালেবান ক্ষমতায় আসায় যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়েছেন তারা সবাই এই সময়সীমার মধ্যে দেশটি ছাড়তে পারেননি।
এ বিষয়ে বাইডেন বলেন, যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চায় তাদের নিরাপদে দেশটি ত্যাগ করতে দেওয়ার জন্য তাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পালনে তালেবানকে চাপে রাখবে বিশ্ব।
“আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে আমাদের সামরিক উপস্থিতির এখন অবসান হয়েছে,” বলেন বাইডেন। লোকজনকে সরিয়ে আনার বিপজ্জনক অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। মঙ্গলবার বিকালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর তালেবান ফের দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একদিন আগে ১৪ অগাস্ট থেকে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত আকাশপথে এক লাখ ২২ হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা।
২০ বছরের আফগান যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াই হাজার সেনা ও দুই লাখ ৪০ হাজার আফগানের প্রাণ নিয়েছে এবং এতে ব্যায় হয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন জানিয়েছেন, তালেবান তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এই রক্তস্রোত যেন বৃথা না যায়, ঐক্য বজায় রাখতে হবে: খালেদা জিয়া

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন

আপডেট সময় : ১১:৫৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অগাস্ট ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে দেশটি থেকে সব সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তালেবান ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় তাড়াহুড়া করে ও অপমানজনকভাবে দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হয় ওয়াশিংটন ও এর নেটো মিত্ররা।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক কিন্তু বিশৃঙ্খলভাবে আকাশপথে মার্কিন নাগরিক, অন্যান্য দেশগুলোর নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করার কারণে ঝুঁকিতে থাকা বহু আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করে ওয়াশিংটন ও নেটো মিত্ররা। তবে এরপরও পশ্চিমা দেশগুলোকে সহায়তা করা ও সরিয়ে নেওয়ার যোগ্য প্রায় লাখো আফগান পেছনে পড়ে থাকে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন সেনাবাহিনীর ১৮ এয়ারবোর্ন কোরের ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল ক্রিস ডনাহিউ যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সৈন্য হিসেবে আফগানিস্তানের মাটি ছাড়েন। পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেনজি জানান, কাবুলের স্থানীয় সময় গত সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে ছেড়ে আসা শেষ সি-১৭ ফ্লাইটে ছিলেন আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রস উয়িলসন।
“যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীতে থাকা প্রতিটি সদস্য এখন আফগানিস্তানের বাইরে। শতাভাগ নিশ্চিত করে এটি বলতে পারি আমি। “এই প্রস্থানের সঙ্গে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা যুক্ত আছে। যাদের সরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম তাদের সবাইকে আনতে পারিনি আমরা। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি আরও ১০ দিনও থাকতাম তবুও সবাইকে নিয়ে আসতে পারতাম না আমরা,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শেষ করে আফগানিস্তানের মাটি থেকে দেশটির শেষ সৈন্য চলে যাওয়ার পর গুলি ফুটিয়ে উল্লাস করে তালেবান। তালেবান মুখপাত্র ক্কারি ইউসুফ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সৈন্য কাবুল বিমানবন্দর ছেড়েছে আর আমাদের দেশ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করেছে।”
সব মার্কিন সেনা চলেও যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একটি দল যাদের সংখ্যা দুইশর নিচে বলে হিসাব দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের, কাবুল ছাড়তে চেয়েও শেষ ফ্লাইটে উঠতে পারেননি। তাদের সংখ্যা ১০০ এর একটু উপরে হতে পারে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গতকাল মঙ্গলবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীগুলোর প্রত্যাহারে তার বেঁধে দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমার সিদ্ধান্তে অটল থাকার পক্ষে কথা বলেছেন। তবে তালেবান ক্ষমতায় আসায় যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়েছেন তারা সবাই এই সময়সীমার মধ্যে দেশটি ছাড়তে পারেননি।
এ বিষয়ে বাইডেন বলেন, যারা আফগানিস্তান ছাড়তে চায় তাদের নিরাপদে দেশটি ত্যাগ করতে দেওয়ার জন্য তাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পালনে তালেবানকে চাপে রাখবে বিশ্ব।
“আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে আমাদের সামরিক উপস্থিতির এখন অবসান হয়েছে,” বলেন বাইডেন। লোকজনকে সরিয়ে আনার বিপজ্জনক অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। মঙ্গলবার বিকালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর তালেবান ফের দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একদিন আগে ১৪ অগাস্ট থেকে ৩০ অগাস্ট পর্যন্ত আকাশপথে এক লাখ ২২ হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা।
২০ বছরের আফগান যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াই হাজার সেনা ও দুই লাখ ৪০ হাজার আফগানের প্রাণ নিয়েছে এবং এতে ব্যায় হয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন জানিয়েছেন, তালেবান তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।