প্রত্যাশা ডেস্ক: আফগানিস্তানে আবারও নারীদের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। দেশটিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারী লেখকদের বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে মানবাধিকার, যৌন হয়রানি ও নারীবিষয়ক একাধিক বিষয়ও পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারী লেখকদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। একইসঙ্গে মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি সম্পর্কিত পাঠদানও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মোট ৬৮০টি বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারী লেখকের রচিত, যেগুলোকে তালেবান কর্তৃপক্ষ “শরিয়াহ ও সরকারের নীতির পরিপন্থি” বলে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ‘সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি’র মতো পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো জানানো হয়েছে, তারা আর ১৮টি বিষয়ে পড়াতে পারবে না। এক তালেবান কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় “শরিয়াহর মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
মূলত তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর চার বছরে ধারাবাহিকভাবে নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে। এছাড়া “অশ্লীলতা ঠেকাতে” এ সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা দেশটির ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করেছেন।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী ও কিশোরীরা। ষষ্ঠ শ্রেণির পর তাদের শিক্ষা কার্যত বন্ধ, ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্সও বাতিল করা হয়। এবার বিশ্ববিদ্যালয়েও নারী বিষয়ক পাঠ্যক্রম সরাসরি নিষিদ্ধ করা হলো। আর ১৮টি নিষিদ্ধ বিষয়ের মধ্যে ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন এবং উইমেন’স সোশোলজি। অবশ্য তালেবান সরকার দাবি করছে, তারা “আফগান সংস্কৃতি ও শরিয়াহর ব্যাখ্যা অনুযায়ী নারীর অধিকারকে সম্মান করে।
বিবিসি বলছে, বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বিবিসি আফগানকে নিশ্চিত করেছেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে বিচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির লেখা বইও নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেছেন, তালেবানের নারী বিদ্বেষী নীতি দেখে এটা অনুমেয় ছিল। যখন নারীদের পড়াশোনাই নিষিদ্ধ, তখন তাদের চিন্তাভাবনা ও লেখা দমন করাটাও স্বাভাবিক।
এমনকি শুধু নারী লেখকই নয়, ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এক পর্যালোচক বিবিসিকে বলেন, এর উদ্দেশ্য আফগান পাঠ্যক্রমে “ইরানি কনটেন্ট প্রবেশ ঠেকানো”। ৬৮০টি নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ৩১০টি ইরানি লেখক বা প্রকাশকের।
এক অধ্যাপক বলেন, এ বইগুলো বাদ দিলে শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক শূন্যতা তৈরি হবে। তার মতে,
ইরানি লেখক ও অনুবাদকরা আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক একাডেমিক সমাজের প্রধান সেতু। এগুলো সরিয়ে দিলে উচ্চশিক্ষায় এক বিশাল ফাঁক তৈরি হবে।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক জানান, তালেবান সরকারের আরোপিত শর্ত মেনে এই পরিস্থিতিতে তারা নিজেরাই পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় লিখতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তার প্রশ্ন, এসব লেখা কি বৈশ্বিক মান রক্ষা করতে পারবে?
সানা/আপ্র/১৯/০৯/২০২৫