বিদেশের খবর ডেস্ক : তালেবানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা গত মাসে আফগানিস্তানের বিচার ব্যবস্থায় পূর্ণ শরিয়া আইন জারির নির্দেশ দেন। এরপর দেশটিতে শরিয়া অনুযায়ী বিচার হচ্ছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধিরা আফগানিস্তানের গাজনি প্রদেশের একটি শরিয়া আদালতের ভেতর প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা দেখে এসেছেন আদালতের ভেতরের চিত্র ও কিভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিনিধিরা যখন গাজনির সেই আদালতে যান তখন হত্যার দায়ে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের বিচার চলছিল। চলতি বছরের নভেম্বরে তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। এখন তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। ভেতরের চিত্রটা ছিল এরকম- মাথায় টারবাইন পরিহিত মোহাম্মদ মুবিন নামে এক তরুণ বিচারক ছোট একটি ঘরে (আদালত) মাটিতে বসে আছেন। বিচারকের সামনে দ-প্রাপ্ত বৃদ্ধকে হাজির করা হয়েছে। বৃদ্ধ তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছেন। মাঝে তাদের মধ্যে কিছু কথোপকথন হয়। এরপর হত্যার কথা স্বীকার করে বিচারককে তিনি বলেন, ‘প্রতিশোধ থেকে আমি তাকে গুলি করে হত্যা করেছি। কারণ আমার পুত্রবধুর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল।’
শরিয়া আইন অনুযায়ী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বৃদ্ধের প্রকাশ্যে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। আর এটি কার্যকর করবেন হত্যার শিকার ব্যক্তির কোনো এক আত্মীয়। তবে ওই বৃদ্ধ বিচারককে বলেন, ‘আমি ওই পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করেছি। আমার কাছে স্বাক্ষী আছে যে আমি ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছি।’
২০০১ সালে কথিত সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দেশটির বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে তৈরি করা হয় আদালতসহ বিচার ব্যবস্থার অন্যান্য অবকাঠামো। তবে পশ্চিমাদের অর্থে তৈরি সেসব আদালতও ব্যবহার করছে না তালেবান। এর বদলে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ছোট ঘরে। বিচারকসহ সবাই কার্পেট বিছানো মেঝেতে বসেন। গাজনির যেই আদালতে বৃদ্ধের বিচার করা হচ্ছিল সেটি ছিল বেশ আবদ্ধ একটি ঘর। শীতকালীন সময় হওয়ায় কাঠের স্টোভের মাধ্যমে ঘরটি উষ্ণ করা হচ্ছিল। ছোট আদালত ঘরটির কোণে একটি তাক রয়েছে। যেটিতে ধর্মীয় বই এবং কালাশনিকভ রাইফেল রাখা ছিল। বিচারক মোহাম্মদ মুবিন বৃদ্ধকে কিছু প্রশ্ন করেন। এরপর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনে শুনানির জন্য আরেকটি দিন ধার্য্য করেন। এরপর ওই বৃদ্ধকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তিনি সমঝোতার যে দাবি করেছেন, সেটি প্রমাণে যেন স্বাক্ষী হাজির করেন।
বিচারক মুবিন এএফপিকে বলেন, ‘যদি তিনি তার দাবি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তার মৃত্যুদ- পুনরায় বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি না পারেন তাহলে এটি নিশ্চিত শরিয়া আইন প্রয়োগ করে কিয়াস (চোখের বদলে চোখ) অনুযায়ী দ- কার্যকর করা হবে।’ তিনি জানিয়েছেন, তার আদালত থেকে বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কারও দ- কার্যকর করা হয়নি। কারণ সবাই দ-ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘মৃত্যুদ-ের সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন। আর আমরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। কিন্তু যখন আমাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকে তখন আল্লাহ আমাদের মনে জানান দেন তাদের (অভিযুক্ত) প্রতি যেন কোনো মায়া না দেখাই।’ এদিকে গাজনির এ আদালতে যদি অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধের আপিল খারিজ হয় বা না টেকে তাহলে এটি যাবে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
গাজনি আদালতের প্রধান বিচারক দাবি করেছেন, তাদের শরিয়া আদালতে বিচার প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছ। তিনি এমনও দাবি করেছেন, সাধারণ মানুষ শরিয়া আদালতের মাধ্যমে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী। কারণ এখানে সময় কম লাগে এবং কোনো ধরনের দুর্নীতি হয় না। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাদের বিচারকরা এখনো তেমন দক্ষ না। ফলে কোনো রায় দেওয়ার পর সেটি তারা তদন্ত করেন। নাম গোপন রাখার শর্তে একজন চাকরিচ্যুত কৌঁসুলি জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে দ্রুত বিচার হওয়া ভালো। কিন্তু বিচার কার্যক্রমে তাড়াহুড়া করলে ভুল সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এদিকে মৃত্যুদ- পাওয়া ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, তার পক্ষে কোনো আইনজীবী নেই। আর তার আপিলের ওপর মাত্র ১৫ মিনিট শুনানি হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাকে আদালতের মৃত্যুদ- দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি আট মাস কারাগারে আছি। ওই পরিবার আমাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করলো তালেবান
এদিকে আল জাজিরা জানায়, আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। দেশটির উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের আলোকে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দেওয়া চিঠিতে আফগানিস্তানের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নারীদের প্রবেশাধিকার জরুরি ভিত্তিতে স্থগিতের নির্দেশ দেয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়। উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী নেদা মোহাম্মদ নাদিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা স্থগিতে উল্লেখিত আদেশ জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের বিষয়টি আপনাদের জানানো হলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে চিঠিটি পোস্ট করা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াউল্লাহ হাশিমি এএফপি, এপিসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমকে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক মঙ্গলবার তালেবানের এ সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগের’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা পরিষ্কারভাবে তালেবানের পক্ষ থেকে আরেকটি ওয়াদা ভঙ্গ। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে শিক্ষাসহ জনপরিসরে নারীদের জায়গা ছোট হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের মধ্যেই নারীদের উচ্চশিক্ষা বন্ধে তালেবানের সিদ্ধান্তের খবর এলো। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এর নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, সব আফগান, বিশেষত নারী ও মেয়েদের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ন্যায্য সদস্য হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারে না তালেবান। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাে
আদলে চোখ) অনুযায়ী দ- কার্যকর করা হবে।’ তিনি জানিয়েছেন, তার আদালত থেকে বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কারও দ- কার্যকর করা হয়নি। কারণ সবাই দ-ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘মৃত্যুদ-ের সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন। আর আমরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। কিন্তু যখন আমাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকে তখন আল্লাহ আমাদের মনে জানান দেন তাদের (অভিযুক্ত) প্রতি যেন কোনো মায়া না দেখাই।’ এদিকে গাজনির এ আদালতে যদি অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধের আপিল খারিজ হয় বা না টেকে তাহলে এটি যাবে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
গাজনি আদালতের প্রধান বিচারক দাবি করেছেন, তাদের শরিয়া আদালতে বিচার প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছ। তিনি এমনও দাবি করেছেন, সাধারণ মানুষ শরিয়া আদালতের মাধ্যমে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী। কারণ এখানে সময় কম লাগে এবং কোনো ধরনের দুর্নীতি হয় না। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাদের বিচারকরা এখনো তেমন দক্ষ না। ফলে কোনো রায় দেওয়ার পর সেটি তারা তদন্ত করেন। নাম গোপন রাখার শর্তে একজন চাকরিচ্যুত কৌঁসুলি জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে দ্রুত বিচার হওয়া ভালো। কিন্তু বিচার কার্যক্রমে তাড়াহুড়া করলে ভুল সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এদিকে মৃত্যুদ- পাওয়া ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, তার পক্ষে কোনো আইনজীবী নেই। আর তার আপিলের ওপর মাত্র ১৫ মিনিট শুনানি হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমাকে আদালতের মৃত্যুদ- দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি আট মাস কারাগারে আছি। ওই পরিবার আমাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করলো তালেবান
এদিকে আল জাজিরা জানায়, আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। দেশটির উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের আলোকে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দেওয়া চিঠিতে আফগানিস্তানের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নারীদের প্রবেশাধিকার জরুরি ভিত্তিতে স্থগিতের নির্দেশ দেয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়। উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী নেদা মোহাম্মদ নাদিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা স্থগিতে উল্লেখিত আদেশ জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের বিষয়টি আপনাদের জানানো হলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে চিঠিটি পোস্ট করা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াউল্লাহ হাশিমি এএফপি, এপিসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমকে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক মঙ্গলবার তালেবানের এ সিদ্ধান্তকে ‘উদ্বেগের’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা পরিষ্কারভাবে তালেবানের পক্ষ থেকে আরেকটি ওয়াদা ভঙ্গ। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে শিক্ষাসহ জনপরিসরে নারীদের জায়গা ছোট হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের মধ্যেই নারীদের উচ্চশিক্ষা বন্ধে তালেবানের সিদ্ধান্তের খবর এলো। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এর নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, সব আফগান, বিশেষত নারী ও মেয়েদের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ন্যায্য সদস্য হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারে না তালেবান। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে তালেবান বলেছে, ‘জাতীয় স্বার্থ’ ও ‘সম্মান’ বজায় রাখতে এমনটি করা হয়েছে।