আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের আফগানিস্তান ত্যাগের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই রক্তক্ষয় বেড়েছে দেশটিতে। আফগান বাহিনী ও সশস্ত্র তালেবানদের সংঘর্ষে নিহত হচ্ছে বহু বেসামরিক মানুষ। জাতিসংঘ বলছে, এই সংঘর্ষ থামানো না গেলে আফগানিস্তানে গত এক দশকের মধ্যে সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ মৃত্যু হতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ)। সেখানে চলতি বছরের প্রথমার্ধে আফগানিস্তানে বেসামরিক মানুষের হতাহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এক দশকের বেশি সময় আগে আফগানিস্তানের কার্যক্রম শুরু করে ইউএনএএমএ। এই সময়ের মধ্যে চলতি বছরেই দেশটি সর্বোচ্চ বেসামরিক মৃত্যু দেখতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকেই তালেবানদের হামলা বেড়ে যায়। হামলা ঠেকানোর চেষ্টায় গত শনিবার থেকে দেশটির ৩৪ প্রদেশের মধ্যে ৩১টিতে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে আফগান সরকার।
ইউএনএএমএর প্রতিবেদনে এক বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রধান ডেবরাহ লায়ন্স বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান সংঘাত যদি না কমানো যায়, তাহলে আফগানিস্তানে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হবে। মানুষ অঙ্গহানির শিকার হবে।’ সংঘাত কমাতে তালেবান ও আফগান নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে আফগানিস্তানে ১ হাজার ৬৫৯ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ২৫৪ জন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৪৭ শতাংশ বেশি। এই হতাহতের মধ্যে গত মে ও জুনেই ৭৮৩ জন নিহত এবং ১ হাজার ৬০৯ জন আহত হয়েছে। ওই সময় থেকেই দেশটিতে তালেবানদের হামলা বেড়ে যায়।
চলতি বছরে সাধারণ মানুষের হতাহতের জন্য তালেবানের পাশাপাশি আফগান সেনা এবং জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটও (আইএস) দায়ী বলে ইউএনএএমএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ৪০ শতাংশ হতাহতের জন্য দায়ী তালেবান। আইএস এবং অন্য সরকারবিরোধীরা দায়ী যথাক্রমে—৯ ও ১৬ শতাংশ। অপর দিকে বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনার জন্য ২৫ শতাংশ দায়ী আফগান সেনারা। এ ছাড়া ‘ক্রসফায়ারসহ’ অন্য কারণে হতাহত হয়েছে ১১ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই তালেবানদের রুখতে নতুন যুদ্ধকৌশলের পরিকল্পনা চলছে আফগানিস্তানে। মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী কৌশলের খুঁটিনাটি বদলের কথা ভাবছে।
নতুন যুদ্ধকৌশল নিয়ে রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে জানা যায়, কাবুল এবং বড় বড় শহর, সীমান্ত ক্রসিং ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোয় তালেবানদের প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করার কথা ভাবছেন আফগান ও মার্কিন কর্মকর্তারা। আফগান কর্মকর্তারা বলছেন, তালেবানদের সামরিকভাবে মোকাবিলা করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আফগান সেনারা প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবানদের হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
আফগানিস্তানে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর আশঙ্কা জাতিসংঘের
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ