ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

আপাতত ওয়াকফ আইন সংশোধন কার্যকর করা যাবে না

  • আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছে, আপাতত ওয়াকফ আইন সংশোধন কার্যকর করা যাবে না। বর্তমানে যে সব সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে, তা আগের মতোই বহাল থাকবে। গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ঘোষিত ওয়াকফ সম্পত্তি বাতিল করা যাবে না এবং মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ডও বহাল থাকবে।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানায়, যেকোনো সম্পত্তি যদি আদালতে ওয়াকফ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকে, তাহলে সংশোধিত আইন নিয়ে শুনানি চলাকালে তা পরিবর্তন করা যাবে না। দান বা চুক্তির মাধ্যমে ওয়াকফ ঘোষিত যেকোনো সম্পত্তির ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে।

আদালত আরও জানায়, কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ নাকি সরকারি, সেই বিষয়ে তদন্ত চলাকালীন কালেক্টরের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সেটিকে ওয়াকফ হিসেবে ধরা হবে না—যদিও সংশোধিত আইনে এমন উল্লেখ রয়েছে, তবে আপাতত সেই ধারা বলবৎ থাকবে না। এছাড়া, ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কমিটির সব সদস্যকে মুসলিম হতে হবে, আদালত তা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা বা কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে যারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বোর্ডে জায়গা পান, তারা এই নিয়মের বাইরে থাকবেন। পাশাপাশি, হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টে মুসলিমদের সদস্যপদ দেওয়া হয় কি না, তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওয়াকফ আইন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত। প্রধান বিচারপতি বলেন, সহিংসতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়। বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে এবং এ নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টায়। এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। অন্যদিকে, বিরোধীদের পক্ষ থেকে কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অংশগ্রহণ করেন।

ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদীর বৈঠক নিয়ে তির্যক মন্তব্য
এদিকে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, প্রাণহানির মতো ঘটনার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাজ্য সরকারের দাবি, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্মেলনে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের বর্ডার। আপনি ইউনূসের সঙ্গে গোপন মিটিং করুন, চুক্তি করুন। দেশের ভালো হলে খুশি হবো। কিন্তু আপনাদের প্ল্যানিংটা কি? কোনো এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা? মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, মুসলিম ভাইবোনদের বলবো, এই আইন সংবিধানে যে সম্পত্তির অধিকারের কথা আছে, তা ভেঙেছে। সংবিধানে ১৮ এবং ৩৫ অনুচ্ছেদ সম্পত্তির ওপর রাজ্য সরকারের অধিকারের কথা বলা আছে। সেটা রাজ্যের বিধানসভার আওতাধীন। সেই অধিকারও কেড়ে নিয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরবিরোধী। এরপরই মমতা ব্যানার্জী কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি আমার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন, আপনি রাম-রহিমের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এটা কি আপনার আওতার মধ্যে পড়ে? পড়ে না।

মমতা ব্যানার্জী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের হাত আছে। বিএসএফ তো বর্ডার সামলায়। যেখানে কোনো অধিকার আমার নেই। রাজ্য সরকারের কাছে নেই। আপনি কেন ঢুকতে দিলেন। কৈফত আপনাকে দিতে হবে। আপনারা চান হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ তৈরি করতে। আপনি দেশকে একত্রিত করুন। দেশ একত্রিত না হলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস যদি অশান্তি করতো তাহলে তৃণমূলের তিন বিধায়কের বাড়ি আক্রান্ত হতো না। পার্টি অফিসও ভাঙা হতো না। কিছু প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে, সেটা মুর্শিদাবাদ আসন নয়, মালদহের আসন। কংগ্রেসের জেতা আসন। জেতার সময় জিতবে। দাঙা হলে রাস্তায় বেরোবে না, এটা আশা করি না। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে থাকতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বজ্রপাতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

আপাতত ওয়াকফ আইন সংশোধন কার্যকর করা যাবে না

আপডেট সময় : ০৮:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছে, আপাতত ওয়াকফ আইন সংশোধন কার্যকর করা যাবে না। বর্তমানে যে সব সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে, তা আগের মতোই বহাল থাকবে। গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ঘোষিত ওয়াকফ সম্পত্তি বাতিল করা যাবে না এবং মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ডও বহাল থাকবে।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানায়, যেকোনো সম্পত্তি যদি আদালতে ওয়াকফ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকে, তাহলে সংশোধিত আইন নিয়ে শুনানি চলাকালে তা পরিবর্তন করা যাবে না। দান বা চুক্তির মাধ্যমে ওয়াকফ ঘোষিত যেকোনো সম্পত্তির ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে।

আদালত আরও জানায়, কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ নাকি সরকারি, সেই বিষয়ে তদন্ত চলাকালীন কালেক্টরের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সেটিকে ওয়াকফ হিসেবে ধরা হবে না—যদিও সংশোধিত আইনে এমন উল্লেখ রয়েছে, তবে আপাতত সেই ধারা বলবৎ থাকবে না। এছাড়া, ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কমিটির সব সদস্যকে মুসলিম হতে হবে, আদালত তা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা বা কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে যারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বোর্ডে জায়গা পান, তারা এই নিয়মের বাইরে থাকবেন। পাশাপাশি, হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টে মুসলিমদের সদস্যপদ দেওয়া হয় কি না, তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওয়াকফ আইন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আদালত। প্রধান বিচারপতি বলেন, সহিংসতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়। বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে এবং এ নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টায়। এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। অন্যদিকে, বিরোধীদের পক্ষ থেকে কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অংশগ্রহণ করেন।

ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদীর বৈঠক নিয়ে তির্যক মন্তব্য
এদিকে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের বিরোধিতায় বিক্ষোভে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, প্রাণহানির মতো ঘটনার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মাঠে নেমেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাজ্য সরকারের দাবি, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্মেলনে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের বর্ডার। আপনি ইউনূসের সঙ্গে গোপন মিটিং করুন, চুক্তি করুন। দেশের ভালো হলে খুশি হবো। কিন্তু আপনাদের প্ল্যানিংটা কি? কোনো এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে এসে দাঙ্গা করা? মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, মুসলিম ভাইবোনদের বলবো, এই আইন সংবিধানে যে সম্পত্তির অধিকারের কথা আছে, তা ভেঙেছে। সংবিধানে ১৮ এবং ৩৫ অনুচ্ছেদ সম্পত্তির ওপর রাজ্য সরকারের অধিকারের কথা বলা আছে। সেটা রাজ্যের বিধানসভার আওতাধীন। সেই অধিকারও কেড়ে নিয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরবিরোধী। এরপরই মমতা ব্যানার্জী কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি আমার অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন, আপনি রাম-রহিমের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এটা কি আপনার আওতার মধ্যে পড়ে? পড়ে না।

মমতা ব্যানার্জী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের হাত আছে। বিএসএফ তো বর্ডার সামলায়। যেখানে কোনো অধিকার আমার নেই। রাজ্য সরকারের কাছে নেই। আপনি কেন ঢুকতে দিলেন। কৈফত আপনাকে দিতে হবে। আপনারা চান হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ তৈরি করতে। আপনি দেশকে একত্রিত করুন। দেশ একত্রিত না হলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস যদি অশান্তি করতো তাহলে তৃণমূলের তিন বিধায়কের বাড়ি আক্রান্ত হতো না। পার্টি অফিসও ভাঙা হতো না। কিছু প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে, সেটা মুর্শিদাবাদ আসন নয়, মালদহের আসন। কংগ্রেসের জেতা আসন। জেতার সময় জিতবে। দাঙা হলে রাস্তায় বেরোবে না, এটা আশা করি না। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে থাকতে হবে।