ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০৩:০০:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির আন্দোলন থেকে কোনো ধরনের ‘ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি’ এলে বা ফের ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামতে চায়। আরো অনেকেই নামতে চায়। তারা আন্দোলন করুক এতে আমাদের কথা নাই। তারা যদি আবারো অগ্নিসন্ত্রাস করে, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি দুর্বৃত্তপরায়ণতা করে, আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না।”
গতকাল শনিবার ঢাকায় হাই কোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫ তলা ভবন উদ্বোধন শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। অতীতে আন্দোলনের সময় বিএনপি-জামায়াতের ‘অগ্নিসন্ত্রাসীদের’ দ্রুত বিচারের আওতায় এনে তাদের সাজা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের সাজা কেন দ্রুত হবে না। এই বিষয়ে আপনাদের (আইনজীবী) নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশয় দিলে তা বাড়বে।” বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘নির্যাতনের’ চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি আমাদের কত নেতাকর্মী হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে।”
অতীতে আইনজীবীদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের ‘হামলার’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা জেলায় যাতে আপনারা সুরক্ষিতভাবে বসবাস করতে পারেন, সেজন্য জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।”
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে: দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ‘লক্ষ্য রাখছে’ বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইন পাওয়া, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছি।” রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ- আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যাণে যাতে করতে পারি।” সেই সঙ্গে আইনজীবীদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যাতে সাজা পায় সেজন্য মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।”
আইনজীবীদের কল্যাণে সব ধরনের সযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আইনজীবী সমিতির ভবন শুধু বড় বড় শহরে না, জেলায়ও করা হবে। এজন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা কিছু ফান্ড তৈরি করেন। সরকারের পক্ষ থেকেও দেওয়া হবে।” প্রত্যেক জেলায় জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট ভবন করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইন ডিজিটাল, রায় ডিজিটাল, বাংলায় অনুবাদ করা, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ই-জুডিশিয়াল সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।” ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিচারের পথ রুদ্ধ করায় পরিবার যে দুর্দশার মধ্যে পড়েছিল, সে কথাও তুলে ধরেন জাতির পিতার কন্যা। তিনি বলেন ” বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোশতাক, জিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু থাকতে পারেনি। বেঈমানরা কখনো থাকে না। কাজেই মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের।
“তিনি ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে, বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চালু করেন ইনডেমনিটি আইন।… যে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান তাদের ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন পদ দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এরপর ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায় ৯৬ সালে। তখনই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার শুরু করি।”
জিয়াউর রহমানের আমলে হত্যাকা-ের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর সদস্যদের স্বজনদের বিচার না পাওয়ার ইতিহাসও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন তার বক্তৃতায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে ‘জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার জড়িত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সবচেয়ে সুবিধাভোগী তো সে (জিয়াউর রহমান)। ক্ষমতায় আসার পর অপরাধীদের পুরস্কৃত করেছে। তার হাতেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা হয়েছে। কি অন্যায়ভাবে… এমন দিনও গেছে ১০ জনকে ফাঁসি দিয়েছে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। আজকে সেই বিএনপি-জামায়াত এদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়।”
সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার সময় পাশে থাকায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান তিনি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার তাগিদ দেন সরকার প্রধান। বাংলাদেশে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ। প্রত্যেকে যে যার ধর্ম পালন করবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না।” আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আইনজীবীদের ফান্ডে ৩০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা: আইনজীবীদের ফান্ডে ৩০ কোটি টাকা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সরকারপ্রধান বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়। মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাই। আইনজীবীদের জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করে দেবো। আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের ফান্ড, যেটা জাতির পিতা করে দিয়েছেন, সেটাতে আমি ৩০ কোটি টাকা দেবো। আপনারাও সাধারণ আইনজীবীরা এতে কন্ট্রিবিউট করবেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নি¤œ আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। দুর্নীতি করতে তো আসিনি। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, স্মার্ট জুডিসিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিসিয়ারি চালু করেছি। জেলে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি একটি দাবি আছে। আইনজীবী ভবন করে দেওয়ার। আর্থিকভাবে যত স্বচ্ছলতা আসবে, ধীরে ধীরে সব জেলায় এটা করে দিতে পারবো। তবে এখানে একটা শর্ত আছে। সেখানে আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও ফান্ড থাকতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড গঠন করেন। সেখান থেকে কিছু দেন আমিও কিছু দেবো। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেইমান মোশতাক ক্ষমতা দখল করে। টিকতে পারেনি। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে জিয়া। ক্ষমতা দখল করে। ইনডেমনিটি জারি করে আমাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে। নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে ২/৩ শতাংশ মেজরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও তিনি শুরু করেছিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যান। বিচারকাজে নারীদের যাওয়ার পথ সুগম করেন জাতির পিতা। তার হাত ধরে আমরা সেটি আরও সহজ করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় বিচার বিভাগের দিকেও নজর দিয়েছেন। মাত্র ১০ মাসে একটি সংবিধান উপহার দেন। যেটা বিশ্বের কোনো দেশ দিতে পারে নাই। তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাস করতেন। তার হাত দিয়েই বাংলাদেশের বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন। তিনি ৭২ সালে বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৩ সালে তাদের ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন এবং আইনজীবীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ফা- গঠন করে দিয়ে যান। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধুর আইনি দর্শন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘ক্ষমতায় থাকতে’ ইউনূস মৌলবাদীদের ‘একখানে করেছেন’: গয়েশ্বর

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৩:০০:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির আন্দোলন থেকে কোনো ধরনের ‘ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি’ এলে বা ফের ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামতে চায়। আরো অনেকেই নামতে চায়। তারা আন্দোলন করুক এতে আমাদের কথা নাই। তারা যদি আবারো অগ্নিসন্ত্রাস করে, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি দুর্বৃত্তপরায়ণতা করে, আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না।”
গতকাল শনিবার ঢাকায় হাই কোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫ তলা ভবন উদ্বোধন শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। অতীতে আন্দোলনের সময় বিএনপি-জামায়াতের ‘অগ্নিসন্ত্রাসীদের’ দ্রুত বিচারের আওতায় এনে তাদের সাজা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের সাজা কেন দ্রুত হবে না। এই বিষয়ে আপনাদের (আইনজীবী) নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশয় দিলে তা বাড়বে।” বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘নির্যাতনের’ চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি আমাদের কত নেতাকর্মী হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে।”
অতীতে আইনজীবীদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের ‘হামলার’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা জেলায় যাতে আপনারা সুরক্ষিতভাবে বসবাস করতে পারেন, সেজন্য জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।”
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে: দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ‘লক্ষ্য রাখছে’ বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইন পাওয়া, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছি।” রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ- আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যাণে যাতে করতে পারি।” সেই সঙ্গে আইনজীবীদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যাতে সাজা পায় সেজন্য মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।”
আইনজীবীদের কল্যাণে সব ধরনের সযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আইনজীবী সমিতির ভবন শুধু বড় বড় শহরে না, জেলায়ও করা হবে। এজন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা কিছু ফান্ড তৈরি করেন। সরকারের পক্ষ থেকেও দেওয়া হবে।” প্রত্যেক জেলায় জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট ভবন করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইন ডিজিটাল, রায় ডিজিটাল, বাংলায় অনুবাদ করা, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ই-জুডিশিয়াল সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।” ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিচারের পথ রুদ্ধ করায় পরিবার যে দুর্দশার মধ্যে পড়েছিল, সে কথাও তুলে ধরেন জাতির পিতার কন্যা। তিনি বলেন ” বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোশতাক, জিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু থাকতে পারেনি। বেঈমানরা কখনো থাকে না। কাজেই মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের।
“তিনি ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে, বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চালু করেন ইনডেমনিটি আইন।… যে যুদ্ধপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান তাদের ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন পদ দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এরপর ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায় ৯৬ সালে। তখনই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার শুরু করি।”
জিয়াউর রহমানের আমলে হত্যাকা-ের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর সদস্যদের স্বজনদের বিচার না পাওয়ার ইতিহাসও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন তার বক্তৃতায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে ‘জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার জড়িত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সবচেয়ে সুবিধাভোগী তো সে (জিয়াউর রহমান)। ক্ষমতায় আসার পর অপরাধীদের পুরস্কৃত করেছে। তার হাতেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা হয়েছে। কি অন্যায়ভাবে… এমন দিনও গেছে ১০ জনকে ফাঁসি দিয়েছে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। আজকে সেই বিএনপি-জামায়াত এদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়।”
সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার সময় পাশে থাকায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান তিনি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার তাগিদ দেন সরকার প্রধান। বাংলাদেশে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ। প্রত্যেকে যে যার ধর্ম পালন করবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না।” আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আইনজীবীদের ফান্ডে ৩০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা: আইনজীবীদের ফান্ডে ৩০ কোটি টাকা দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সরকারপ্রধান বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়। মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাই। আইনজীবীদের জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করে দেবো। আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের ফান্ড, যেটা জাতির পিতা করে দিয়েছেন, সেটাতে আমি ৩০ কোটি টাকা দেবো। আপনারাও সাধারণ আইনজীবীরা এতে কন্ট্রিবিউট করবেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নি¤œ আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল, আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। দুর্নীতি করতে তো আসিনি। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, স্মার্ট জুডিসিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিসিয়ারি চালু করেছি। জেলে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করে দিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি একটি দাবি আছে। আইনজীবী ভবন করে দেওয়ার। আর্থিকভাবে যত স্বচ্ছলতা আসবে, ধীরে ধীরে সব জেলায় এটা করে দিতে পারবো। তবে এখানে একটা শর্ত আছে। সেখানে আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও ফান্ড থাকতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড গঠন করেন। সেখান থেকে কিছু দেন আমিও কিছু দেবো। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেইমান মোশতাক ক্ষমতা দখল করে। টিকতে পারেনি। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে জিয়া। ক্ষমতা দখল করে। ইনডেমনিটি জারি করে আমাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে। নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে ২/৩ শতাংশ মেজরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও তিনি শুরু করেছিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যান। বিচারকাজে নারীদের যাওয়ার পথ সুগম করেন জাতির পিতা। তার হাত ধরে আমরা সেটি আরও সহজ করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় বিচার বিভাগের দিকেও নজর দিয়েছেন। মাত্র ১০ মাসে একটি সংবিধান উপহার দেন। যেটা বিশ্বের কোনো দেশ দিতে পারে নাই। তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাস করতেন। তার হাত দিয়েই বাংলাদেশের বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন। তিনি ৭২ সালে বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৩ সালে তাদের ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন এবং আইনজীবীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ফা- গঠন করে দিয়ে যান। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধুর আইনি দর্শন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।