প্রযুক্তি ডেস্ক: পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা আন্দিজের উঁচু বিভিন্ন হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার ৯ কোটি মানুষের পানি সরবরাহ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২৫ সালের ২১ মার্চ প্যারিসে ইউনেস্কো আয়োজিত প্রথম বিশ্ব হিমবাহ দিবসে এই সতর্কতা জারি করেন তারা।
আর্জেন্টিনা, চিলি, বলিভিয়া, পেরু, একুয়েডর ও কলম্বিয়ার মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এ পর্বতমালাটির বিভিন্ন হিমবাহ।
এসব অঞ্চলের ঘরবাড়ি, খামার, গবাদি পশু, শিল্প ও পানি বিদ্যুতের জন্য পানির এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে এসব হিমবাহ। তবে জলবায়ু যত উষ্ণ হচ্ছে তত এসব হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘ফিউচার অফ দ্য অ্যান্ডিয়ান ওয়াটার টাওয়ার্স’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি একটি সম্মেলনে তুলে ধরেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড’ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল’-এর বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় উঠে এসেছে, আন্দিজ পর্বতমালার বিভিন্ন হিমবাহ প্রতি বছর ৭০ সেন্টিমিটার করে ছোট হচ্ছে, এই হার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের হিমবাহের তুলনায় ৩৫ শতাংশ দ্রুত।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আন্দিজের বিভিন্ন হিমবাহ, যা ২১০০ সালের মধ্যে প্রায় পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে অন্যান্য বিভিন্ন অংশের হিমবাহের অর্ধেকেরও বেশি বরফ গলে যেতে পারে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড’-এর বিজ্ঞানী ড. জেরেমি এলি বলেছেন, পরিস্থিতি হুমকির মুখে। বহু বছর ধরে এই বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে কার্বন নিঃসরণ কমাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তাপমাত্রা, কম তুষারপাত, খরা ও চরম বিভিন্ন আবহাওয়ার ঘটনা এসব হিমবাহের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার সীমা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার কথা হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালে বেশ কয়েক মাসেই এই সীমা পেরিয়ে গেছে। তাপমাত্রা ক্রমাগত এভাবে বাড়তে থাকলে ও এ সীমা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি পৌঁছে গেলে আন্দিজ পর্বতমালার অনেক হিমবাহ এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
আন্দিজের এ বরফগলা পানির ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন দরিদ্র দেশের কাছে হিমবাহের পানির ক্ষতি ঠেকাতে নতুন বাঁধ বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নাও থাকতে পারে। ফলে লাখ লাখ মানুষের জন্য বিশেষ করে শহর ও কৃষিক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ড. এলি। তিনি বলেছেন, হিমবাহ ও এদের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের রক্ষার জন্য আমাদের এখনই কার্বন নিঃসরণ ব্যাপকহারে কমাতে হবে। আন্দিজ ও বিশ্বের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পানি সংকট রোধে একমাত্র উপায় হচ্ছে বৈশ্বিক সহযোগিতা।


























