ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম নিদর্শন

  • আপডেট সময় : ০৮:১৩:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

রোববার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যতম নিদর্শন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতি প্রাচীন সময় থেকেই এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানকার বৌদ্ধবিহারগুলো আবির্ভূত হয়েছিল। এগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সভ্যতার নির্দশন। পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে ভিক্ষু ও ছাত্ররা এ বিহারগুলোতে আসতেন। মহামানব বুদ্ধের শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেন। শুধু ধর্মীয় আচার ও শিক্ষা নয়, সমাজে জনকল্যাণকর কর্মসূচিরও কেন্দ্র ছিল এদেশের বৌদ্ধ বিহারগুলো।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মহামানব গৌতম বুদ্ধ বিশ্বমানবতার কল্যাণে সম্প্রীতি ও সাম্যের বাণী প্রচার করেন। বৌদ্ধধর্ম জীবজগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করে। মহামানব বুদ্ধ বলেছেন, শান্তি, সুখ থেকে আমরা কাউকে বঞ্চিত করতে পারি না; এমনকি ক্ষুদ্র জীবও। এদেশের বৌদ্ধপণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববরেণ্য একজন মহাপণ্ডিত। মহামানব বুদ্ধের বাণী তিনি বহন করে নিয়েছিলেন সেই মহাচীনের তিব্বতে। চীনে এখনো তাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হয়। বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন, স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পণ্ডিতগণ মানবসভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমি বরাবরই বলে এসেছি, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী-সবমিলিয়ে এদেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। আগামীকাল (সোমবার) পহেলা বৈশাখ, আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। প্রত্যেকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী আগামীকালকে উদযাপন করবেন। সার্বজনীন এ উৎসবে অংশ নেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৌদ্ধবিহার গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যের বাণীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণকর কর্মসূচি পালন করে আসছে। আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের ‘সম্প্রীতি ভবন’ বাংলাদেশের সম্প্রীতি ও মানবতার ঐতিহ্যকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবময় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি। আমাদের সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের জয় হোক। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।

অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: এর আগে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। মেরুল বাড্ডায় ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার। বাংলাদেশে বৌদ্ধদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম নিদর্শন

আপডেট সময় : ০৮:১৩:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যতম নিদর্শন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতি প্রাচীন সময় থেকেই এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানকার বৌদ্ধবিহারগুলো আবির্ভূত হয়েছিল। এগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সভ্যতার নির্দশন। পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে ভিক্ষু ও ছাত্ররা এ বিহারগুলোতে আসতেন। মহামানব বুদ্ধের শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেন। শুধু ধর্মীয় আচার ও শিক্ষা নয়, সমাজে জনকল্যাণকর কর্মসূচিরও কেন্দ্র ছিল এদেশের বৌদ্ধ বিহারগুলো।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মহামানব গৌতম বুদ্ধ বিশ্বমানবতার কল্যাণে সম্প্রীতি ও সাম্যের বাণী প্রচার করেন। বৌদ্ধধর্ম জীবজগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করে। মহামানব বুদ্ধ বলেছেন, শান্তি, সুখ থেকে আমরা কাউকে বঞ্চিত করতে পারি না; এমনকি ক্ষুদ্র জীবও। এদেশের বৌদ্ধপণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববরেণ্য একজন মহাপণ্ডিত। মহামানব বুদ্ধের বাণী তিনি বহন করে নিয়েছিলেন সেই মহাচীনের তিব্বতে। চীনে এখনো তাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় শ্রদ্ধা জানানো হয়। বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন, স্থাপনা, ঐতিহ্য ও পণ্ডিতগণ মানবসভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমি বরাবরই বলে এসেছি, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী-সবমিলিয়ে এদেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। আগামীকাল (সোমবার) পহেলা বৈশাখ, আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক। প্রত্যেকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী আগামীকালকে উদযাপন করবেন। সার্বজনীন এ উৎসবে অংশ নেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৌদ্ধবিহার গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যের বাণীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং কারিগরি শিক্ষাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণকর কর্মসূচি পালন করে আসছে। আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের ‘সম্প্রীতি ভবন’ বাংলাদেশের সম্প্রীতি ও মানবতার ঐতিহ্যকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবময় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি। আমাদের সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের জয় হোক। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।

অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: এর আগে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনে সম্প্রীতি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। মেরুল বাড্ডায় ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার। বাংলাদেশে বৌদ্ধদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।