ঢাকা ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

আন্তর্জাতিক নারী বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪ , ইউরোপে ইতিহাস গড়া বক্সার জিনাত

  • আপডেট সময় : ০৫:১৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

নারী ও কন্যাশিশু ডেস্ক: ইউরোপীয় বক্সিং কনফেডারেশনের আয়োজনে ২ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের গ্লিউইসে অনুষ্ঠিত হয় ১৯তম আন্তর্জাতিক সিলেসিয়ান নারী বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ১৭টি দেশ অংশ নেয় এ টুর্নামেন্টে। প্যারিস অলিম্পিকে খেলা অনেক বক্সার অংশ নেন এ প্রতিযোগিতায়। ৫২ কেজি এলিট ক্লাব ওজন শ্রেণিতে হাঙ্গেরির কাতা প্যাপকে দুই বাউটে ৫-০ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালে ইউক্রেনের দারিয়া ওলহার কাছে হেরে ব্রোঞ্জ জেতেন জিনাত।
পদক জিতে উচ্ছ্বসিত জিনাত বলেন, ‘ইউরোপিয়ান বক্সিং কনফেডারেশনে বাংলাদেশ এই প্রথম কোনো পদক জিতল। ভবিষ্যতে এ টুর্নামেন্টে ৫০ কেজিতে খেলব।’
জিনাত কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম বাউটে জিতেই পদক নিশ্চিত করে নেন। পোল্যান্ড থেকে পদক জিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন জিনাত ফেরদৌস। সেখানে ফেরার পর এ অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে জিনাত বলেন, ‘পোল্যান্ডের গ্লিউইসে একটি প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছি।
বক্সিং ফেডারেশনের একজন কর্মকর্তার তথ্য মতে, এটি ইউরোপীয় বক্সিং কনফেডারেশন থেকে জেতা বাংলাদেশের প্রথম পদক।’
আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালের জুনে নারী বক্সিংয়ে হেডগিয়ার বা মাথার সুরক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে। তাই কোনো ধরনের হেডগিয়ার ছাড়া প্রথম নারী বক্সিং প্রতিযোগিতা ছিল এটি।
গত ২৩ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আফ্রিকায় বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়লেন জিনাত ফিরদৌস। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত ম্যান্ডেলা কাপ আন্তর্জাতিক বক্সিং কম্পিটিশন ২০২৪-এর ফাইনালে ইথিওপিয়ার সেরা বক্সার গাজিয়া বেথেলহামকে হারিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জয় করেন জিনাত। ২৭ দেশের বক্সারদের অংশগ্রহণে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ টুর্নামেন্টে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জয় করেন তিনি। তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে যান তিনি। তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন তাকে বাংলাদেশি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন জিনাত ফেরদৌস।
জিন্নাত ফেরদৌসের বক্সিংয়ে আবির্ভাব ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই। ২০২৩ সালের মধ্য জুলাইয়ে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের আমন্ত্রণে ২৯ বছর বয়সী জিনাত এসেছিলেন ঢাকায়। রিংয়ে উঠে বাংলাদেশি বক্সারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তার পারফরম্যান্সে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। তাতে খুলে যায় স্বপ্নের দুয়ার। কিন্তু এশিয়ান গেমসে খেলতে হলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে। এর সঙ্গে লাগবে নিউইয়র্কের যেখানে বক্সিং খেলেন, সেখানকার অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি। তার স্বপ্নপূরণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জয়ের আশায় বিওএর কর্তারাও চালিয়ে যান সব চেষ্টা। প্রচেষ্টার ফল লাল-সবুজের হয়ে এশিয়াডে রিংয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিনাত। তবে প্রথম বিশ্বমঞ্চে তেমন ভালো কিছু করতে পারেননি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত কোচের কাছে ট্রেনিং চালিয়ে যান জিনাত। এ বছর তার ঝুলিতে ধরা দিয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক সাফল্য।
জিনাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাস্টোরিয়ায়। দুই ভাই-বোন। জিনাত ফেরদৌস ও নজমুল ফেরদৌস নাজ। বাবা বেলায়েত ফেরদৌস। মা শাহনাজ ফেরদৌস তুলি। বাবার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে এবং মায়ের বাড়ি পাবনায়। ১৯৮৭ সালে এ দম্পতি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে জন্ম নিলেও নিছক ঘোরাঘুরির জন্য পাঁচবার বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি।
জন্ম যে দেশেই হোক না কেন, জিনাত ফেরদৌসের পরিচয় এখন তিনি বাংলাদেশি। উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রবাস জীবনকে তুচ্ছ বানিয়ে নাড়ির টানই লাল-সবুজের দেশে নিয়ে এসেছে তাকে। মার্কিন প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস নিশ্চয়ই আগামীতে হয়ে উঠবেন দেশের বক্সিংয়ের পোস্টারগার্ল!
জন্ম থেকেই স্বাধীনচেতা মা-বাবা জিনাতের ওপর কোনো ইচ্ছাই চাপিয়ে দেননি। মেয়ের ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তো জিনাত নিজ গরজে এবং নিজ ইচ্ছাতেই জীবনের মূল্যবান সময়কে ধারণ করে নিজের স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। মা-বাবা একসঙ্গে মেয়ের খেলা দেখেছেন ম্যানহাটান, ম্যাডিসন স্কয়ারের গার্ডেন ও টোলসা ওকলাহোমা সিটিতে।
ম্যানহাটানের ওই গ্যালারিতে যেখানে মুহুর্মুহু করতালিতে দুই রমণীকে মঞ্চে তোলা হলো। হলরুম পরিপূর্ণ। একজন জিনাত ফেরদৌস, অন্যজন মার্কিন জু হিক্স। বলতে গেলে দু’জনই মার্কিন। কারণ জিনাত জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। একজন করে ফাইটার রাউন্ডে নামতেই হলো করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে।
ম্যাডিসন স্কয়ারের গার্ডেন ওয়েস্টে জুয়ানা ডুলেকা ও জিনাত ফেরদৌসের ওই খেলাও চোখে পানি এনে দেয় মা-বাবার। যখন জয়ের ঘোষণা এলো, তখন জিনাতের চোখের পাতাও বারবার ভিজে উঠছিল। জয়ের আনন্দের যে আনন্দাশ্রু এত মধুর হয় জিনাতের রক্তিম মুখই তার প্রমাণ। এরপর যেদিন ন্যাশনাল গোল্ডেন ক্লোজে দ্বিতীয় স্থান পান, সেদিনের কথা মনে করে তো আজও স্মৃতিকাতর হন বাবা বেলায়েত ফেরদৌস ও মা শাহনাজ ফেরদৌস তুলি!
জিনাত বলেন, ‘এক সময় বাবা আমাকে রাগী মনে করলেও তিনি আমার বক্সিং দেখেন। একবার খেলা দেখে বাবা বলেন, মোহাম্মদ আলির মতো দেখাচ্ছে তোমাকে। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নিজের প্রথম পুরস্কারের টাকা ডোনেট করেছি ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য।’
জিনাত লাল-সবুজের হয়ে খেলতে চান আগামীতেও। জিনাতদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আন্তর্জাতিক নারী বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪ , ইউরোপে ইতিহাস গড়া বক্সার জিনাত

আপডেট সময় : ০৫:১৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নারী ও কন্যাশিশু ডেস্ক: ইউরোপীয় বক্সিং কনফেডারেশনের আয়োজনে ২ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের গ্লিউইসে অনুষ্ঠিত হয় ১৯তম আন্তর্জাতিক সিলেসিয়ান নারী বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ১৭টি দেশ অংশ নেয় এ টুর্নামেন্টে। প্যারিস অলিম্পিকে খেলা অনেক বক্সার অংশ নেন এ প্রতিযোগিতায়। ৫২ কেজি এলিট ক্লাব ওজন শ্রেণিতে হাঙ্গেরির কাতা প্যাপকে দুই বাউটে ৫-০ পয়েন্টে হারিয়ে সেমিফাইনালে ইউক্রেনের দারিয়া ওলহার কাছে হেরে ব্রোঞ্জ জেতেন জিনাত।
পদক জিতে উচ্ছ্বসিত জিনাত বলেন, ‘ইউরোপিয়ান বক্সিং কনফেডারেশনে বাংলাদেশ এই প্রথম কোনো পদক জিতল। ভবিষ্যতে এ টুর্নামেন্টে ৫০ কেজিতে খেলব।’
জিনাত কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম বাউটে জিতেই পদক নিশ্চিত করে নেন। পোল্যান্ড থেকে পদক জিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন জিনাত ফেরদৌস। সেখানে ফেরার পর এ অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে জিনাত বলেন, ‘পোল্যান্ডের গ্লিউইসে একটি প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছি।
বক্সিং ফেডারেশনের একজন কর্মকর্তার তথ্য মতে, এটি ইউরোপীয় বক্সিং কনফেডারেশন থেকে জেতা বাংলাদেশের প্রথম পদক।’
আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালের জুনে নারী বক্সিংয়ে হেডগিয়ার বা মাথার সুরক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে। তাই কোনো ধরনের হেডগিয়ার ছাড়া প্রথম নারী বক্সিং প্রতিযোগিতা ছিল এটি।
গত ২৩ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আফ্রিকায় বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়লেন জিনাত ফিরদৌস। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত ম্যান্ডেলা কাপ আন্তর্জাতিক বক্সিং কম্পিটিশন ২০২৪-এর ফাইনালে ইথিওপিয়ার সেরা বক্সার গাজিয়া বেথেলহামকে হারিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জয় করেন জিনাত। ২৭ দেশের বক্সারদের অংশগ্রহণে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ টুর্নামেন্টে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জয় করেন তিনি। তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে যান তিনি। তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন তাকে বাংলাদেশি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন জিনাত ফেরদৌস।
জিন্নাত ফেরদৌসের বক্সিংয়ে আবির্ভাব ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই। ২০২৩ সালের মধ্য জুলাইয়ে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের আমন্ত্রণে ২৯ বছর বয়সী জিনাত এসেছিলেন ঢাকায়। রিংয়ে উঠে বাংলাদেশি বক্সারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তার পারফরম্যান্সে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। তাতে খুলে যায় স্বপ্নের দুয়ার। কিন্তু এশিয়ান গেমসে খেলতে হলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে। এর সঙ্গে লাগবে নিউইয়র্কের যেখানে বক্সিং খেলেন, সেখানকার অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি। তার স্বপ্নপূরণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জয়ের আশায় বিওএর কর্তারাও চালিয়ে যান সব চেষ্টা। প্রচেষ্টার ফল লাল-সবুজের হয়ে এশিয়াডে রিংয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিনাত। তবে প্রথম বিশ্বমঞ্চে তেমন ভালো কিছু করতে পারেননি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত কোচের কাছে ট্রেনিং চালিয়ে যান জিনাত। এ বছর তার ঝুলিতে ধরা দিয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক সাফল্য।
জিনাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাস্টোরিয়ায়। দুই ভাই-বোন। জিনাত ফেরদৌস ও নজমুল ফেরদৌস নাজ। বাবা বেলায়েত ফেরদৌস। মা শাহনাজ ফেরদৌস তুলি। বাবার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে এবং মায়ের বাড়ি পাবনায়। ১৯৮৭ সালে এ দম্পতি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে জন্ম নিলেও নিছক ঘোরাঘুরির জন্য পাঁচবার বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি।
জন্ম যে দেশেই হোক না কেন, জিনাত ফেরদৌসের পরিচয় এখন তিনি বাংলাদেশি। উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রবাস জীবনকে তুচ্ছ বানিয়ে নাড়ির টানই লাল-সবুজের দেশে নিয়ে এসেছে তাকে। মার্কিন প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস নিশ্চয়ই আগামীতে হয়ে উঠবেন দেশের বক্সিংয়ের পোস্টারগার্ল!
জন্ম থেকেই স্বাধীনচেতা মা-বাবা জিনাতের ওপর কোনো ইচ্ছাই চাপিয়ে দেননি। মেয়ের ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তো জিনাত নিজ গরজে এবং নিজ ইচ্ছাতেই জীবনের মূল্যবান সময়কে ধারণ করে নিজের স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। মা-বাবা একসঙ্গে মেয়ের খেলা দেখেছেন ম্যানহাটান, ম্যাডিসন স্কয়ারের গার্ডেন ও টোলসা ওকলাহোমা সিটিতে।
ম্যানহাটানের ওই গ্যালারিতে যেখানে মুহুর্মুহু করতালিতে দুই রমণীকে মঞ্চে তোলা হলো। হলরুম পরিপূর্ণ। একজন জিনাত ফেরদৌস, অন্যজন মার্কিন জু হিক্স। বলতে গেলে দু’জনই মার্কিন। কারণ জিনাত জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। একজন করে ফাইটার রাউন্ডে নামতেই হলো করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে।
ম্যাডিসন স্কয়ারের গার্ডেন ওয়েস্টে জুয়ানা ডুলেকা ও জিনাত ফেরদৌসের ওই খেলাও চোখে পানি এনে দেয় মা-বাবার। যখন জয়ের ঘোষণা এলো, তখন জিনাতের চোখের পাতাও বারবার ভিজে উঠছিল। জয়ের আনন্দের যে আনন্দাশ্রু এত মধুর হয় জিনাতের রক্তিম মুখই তার প্রমাণ। এরপর যেদিন ন্যাশনাল গোল্ডেন ক্লোজে দ্বিতীয় স্থান পান, সেদিনের কথা মনে করে তো আজও স্মৃতিকাতর হন বাবা বেলায়েত ফেরদৌস ও মা শাহনাজ ফেরদৌস তুলি!
জিনাত বলেন, ‘এক সময় বাবা আমাকে রাগী মনে করলেও তিনি আমার বক্সিং দেখেন। একবার খেলা দেখে বাবা বলেন, মোহাম্মদ আলির মতো দেখাচ্ছে তোমাকে। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নিজের প্রথম পুরস্কারের টাকা ডোনেট করেছি ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য।’
জিনাত লাল-সবুজের হয়ে খেলতে চান আগামীতেও। জিনাতদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।