ফারজানা কাশেমী : দায়িত্ব শব্দটা এক বিশালতার ব্যপ্তি বিস্তৃত করে। যে কোন সম্পর্কের দৃশ্যমান ও অলিখিত পূর্ব শর্ত হচ্ছে দায়িত্ব। গতানুগতিক বোধ, বিকাশ, চিন্তাধারা, চর্চা, মূল্যবোধে দায়িত্ব শব্দ এক সুনিবিড় অর্থবহতা ধারণ করে। আবহমানকাল থেকে দায়িত্ব শব্দের শাব্দিক অর্থ স্বমহিমার ব্যাপকতায় বিস্তৃত। জীবন নামক যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব ও কর্তব্য এক পারস্পরিক দায়বদ্ধতা। অর্পিত দায়িত্বে কর্তব্য এক স্বপ্রনোদিত সমাচার। যে ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করে তার জন্য কর্তব্য পালন করা এক অর্পিত জীবন আচার। তবুও বাস্তবতার বিচ্ছিন্নতায় এক প্রাগৈতিহাসিক ভাবে মুষ্টিমেয় কিছু শ্রেণীর উপর দায়িত্ব অর্পন করে তথাকথিত বিধিব্যবস্থা। দায়িত্ব কখনো কোনব্যক্তি বিশেষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। দায়িত্ব সকল ব্যক্তির জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য। একটি শিশু যখন জন্মায় সে এক অসহায় সর্বোস। সেই মুহূর্তে বাবা মা তার শিশুটির স্ব উদ্দ্যোগে দায়িত্ব নেয়। পক্ষান্তরে এই শিশুটি যখন পরিনত বয়সে উপনীত হয় তার ও বাবা মায়ের জন্য কর্তব্য পালন এক অনিবার্য বিষয়বস্তু। তাই দায়িত্ব ও কর্তব্য যেন মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।
মিডিয়াম কল্যাণে আজ অনেক ঘটনা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক চিকিৎসক দম্পতি, তাদের বিয়ের কিছু দিন পর চিকিৎসক স্বামী নিজেই দুর্যরোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। অদ্যাবধি এই দম্পতির চিকিৎসক স্ত্রী গভীর যতœ,ত্যাগ ও নিরলস শ্রমে তার সহ মানুষ টিকে সুস্থ করার প্রয়াসে কর্তব্য পালন করে আসছে।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অধিকাংশ অংশ দায়িত্বের ধারক ও বাহক হিসেবে পুরুষ বা বাবা অথবা স্বামী কে চিহ্নিত করে। দায়িত্ব কখনো ব্যক্তি বিশেষের হয় না, দায়িত্ব হয় সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তির। আর যে পরম অনুগত্যে দায়িত্ব নিতে পারে সে সবাই কে বাধিত করে কর্তব্যের জালে। তাই দায়িত্ব ও কর্তব্য সমানুপাতিক। আজ যে অনুকট্য, আগ্রহ,অনুগ্রহে দায়িক হিসেবে দায়িত্ব কাধেঁ তুলে নেয় সে পরম দায়িক হয়ে কারো প্রতি কর্তব্য সমর্পন করে। বেশ কিছুদিন আগে রেলগাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে পথশিশুর ছুড়ে দেওয়া পাথরের আঘাতে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছে এক সদ্য বিবাহিত নারী। আজ অনেকসময় অতিবাহিত করছে এই নারী মৃত প্রায় মানুষের ন্যায়। শুধু চোখের পলক ফেলা ছাড়া দেহের বাকি অবশিষ্ট অংশ অচল, অসাঢ়। সেবা, যতেœ তাকে আগলে রেখেছেন তার স্বামী। এই নারীর স্বামী হয়ত প্রমাণ করেছেন দায়িত্ব নেয়া মানে অসহায়ত্বে ফেলা যাওয়া নয়।
ষাটোর্ধ এক অবসর প্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ব্যক্তিগত জীবনে বিপতœীক ছিলেন। শুধুমাত্র তাকে দেখাশোনার জন্য সে এক মধ্যবয়সী নারীকে পুনরায় বিয়ে করেছেন। মধ্যবয়সী সেই নারী তার স্বামীর দেখাশোনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন একটা সময় পযন্ত, আজ সে ব্যাধিজনিত কারণে যখন হাসপাতালে, তার বৃদ্ধ স্বামী রাতে ঘুমের পরির্বতে স্ত্রীর সেবায় ন্যস্ত। অর্পিত দায়িত্বের সাথে কর্তব্যের সমসূত্রে বাধা পড়ুক মানবিক সম্পর্ক। কর্তব্য যেন মাথা না ঠুকে বৃদ্ধাশ্রমে অথবা পরিত্যক্তের বিষাক্ত ছোবলের করুণ কাহিনীচিত্রে।
লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ
আনুগত্য বোধ নয় দায়িত্ব
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ