বিশেষ সংবাদদাতা : পুলিশের আপত্তির মুখে আনসারকে তদন্ত ও গ্রেফতারের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। সংসদীয় কমিটি থেকেই সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’ বিল আইন হিসেবে সংসদের চলতি অধিবেশনে পাস হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপরই গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে খসড়া আইনটি বিল আকারে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সেই বিলে আনসারকে অপরাধী আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিলের যে অংশ নিয়ে আপত্তি পুলিশের:
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’ বিলে আনসার ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব ও কার্যাবলি নিয়ে ৭ ধারায় বলা হয়েছে—‘জননিরাপত্তামূলক কোনও কাজে সরকার বা সরকারের অনুমোদনক্রমে সরকারি কোনও কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদন করা। দুর্যোগ মোকাবিলায় ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। সরকারের নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদান করা। সরকারের নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা প্রদান করা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করা। সরকারি সম্পত্তি ও জনস্বার্থে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা এবং উপরিউক্ত বিধানের সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশকে সহায়তা করা। এছাড়াও সরকার কর্তৃক সময় সময় অর্পিত অন্য যেকোনও দায়িত্ব সম্পাদন করা।
ব্যাটালিয়ন সদস্যের এখতিয়ার ও ক্ষমতা হিসেবে ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ৭ ধারায় উল্লিখিত কার্যাবলি সম্পাদনকালে কোনও ব্যাটালিয়ন সদস্য তার সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধ সংঘটনকারীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে। ক্ষেত্রমতো, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা এ উদ্দেশ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে ওই আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, কোনও স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।
তদন্ত ও গ্রেফতারের দায়িত্ব পাচ্ছে না আনসার
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিলে আনসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কথা কোথাও উল্লেখ নাই। আনসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘এটা একটা অপপ্রচার। তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হবে না।’ বুধবার (২৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিলটি নিয়ে বৈঠকে বসেছে সংসদীয় কমিটি
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’ বিলটি নিয়ে বৈঠকে বসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ কমিটির একজন সদস্য। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ এ কমিটির সভাপতি। আনসার আইন নিয়ে পুলিশের আপত্তির জায়গাগুলো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে পুলিশের সাবেক আইজি, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। বলেন, ‘এগুলো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।’
আনসার আইন নিয়ে পুলিশ কী ভাবছে
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই পুলিশে অসন্তোষ দেখা দেয়। গ্রেফতার, আটক, তল্লাশি ছাড়াও তদন্তের দায়িত্ব না দিতে পুলিশ কর্মকর্তারা দফায় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মন্ত্রীর কাছে তারা তাদের মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। এমন কিছু হবে না বলে মন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের মনোভাব কী জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আনসার তো আনসারই। আনসারের অর্থই হচ্ছে সহযোগী বাহিনী। তারা শৃঙ্খলা রক্ষা করবে সহযোগিতা করে। তাদের গ্রেফতার বা আটকের দায়িত্ব দিলে বিশৃঙ্খলা হবেই। পুলিশের কাজ পুলিশ করবে। আনসারের কাজ আনসার করবে। প্রত্যেকটা কাজই আইন অনুযায়ী হয়। আইনের পথ ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সবাই কাজ করে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে এসব বর্ণনা করা আছে কে কী করতে পারবে। সবাই সবটা করতে পারে না। সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নি¤েœ নয় পুলিশের এমন সদস্যরাই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ বিষয়ে তো সাব-ইন্সপেক্টরদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ আছে। আর আনসারে তো অঙ্গীভূত আছে, ব্যাটালিয়ন আছে। অঙ্গীভূত আনসাররা মাত্র সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে আসে। বিভিন্ন প্রয়োজনে তারা দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালন শেষে তারা আবার চলে যায়। প্রয়োজনে ডাক দিলে আসে। অনেকে আসেই না। আমরা পুলিশের মনোভাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবকে জানিয়েছি। এখন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’