জামালপুর সংবাদদাতা : বিখ্যাত ‘আজান’ কবিতাটি কবি কায়কোবাদ লিখেছিলেন পিংনার রসপাল জামে মসজিদের বারান্দায় বসে। পরে কায়কোবাদের নামানুসারে এ মসজিদের নামকরণ করা হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন মসজিদ। হারিয়ে গেছে কবি কায়কোবাদের স্মৃতি বিজড়িত সেই মসজিদ। মসজিদটি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে পিংনা ইউনিয়নের পিংনা বাজার সংলগ্ন রসপাল গ্রামে ছিল। আনুমানিক ১৪৪ বছর আগে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন এলাকাবাসী। লেখক ও সুফি সাধক অধ্যাপক শেখ মোস্তাক মোহাম্মদ মনির, মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মোয়াজ্জিন নিজাম উদ্দিন এবং এলাকাবাসীরা জানান, স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রথমে এ মসজিদটি চৌচালা টিনশেড হিসেবে নির্মাণ করলেও প্রায় ২০ বছর পর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। সৌদি পাথর ও কড়ি ব্যবহার করে একটি সুউচ্চ মিনার এবং ৫টি বড় ও ৮টি ছোট গম্বুজ তৈরি করা হয়। মসজিদটির দৈর্ঘ্যে ৯৩ ফুট ও প্রস্থে ছিল ৪২ ফুট। প্রথমদিকে এ মসজিদটি রসপাল জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পেলেও ধীরে ধীরে এটি কবি কায়কোবাদের নামানুসারে পরিচিতি লাভ করে। কায়কোবাদ ছাড়াও এ মসজিদে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি নামাজ আদায় করতেন। প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ ইব্রাহিম খাঁ ও কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী মাঝে মধ্যে পিংনা ইউনিয়ন এসে এ মসজিদে সময় কাটাতেন। অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ মসজিদে এসেছিলেন। এছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন পিংনা উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে এসে এ মসজিদে নামাজ আদায় করে এর স্থাপত্যশৈলীর প্রশংসা করেন। সারা জেলায় এ মসজিদটিই ছিল সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এ মসজিদে অনেক বিখ্যাত লোকের পদচারণায় মুখরিত ছিল। কবি কায়কোবাদ পিংনা ইউনিয়নে পোস্ট মাস্টার থাকাকালীন এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। মসজিদের সুমধুর আজানের ধ্বনি শুনে এ মসজিদের বারান্দায় বসে আজান কবিতাটি রচনা করেন। এছাড়াও কায়কোবাদের বিখ্যাত ‘মহাশ্মশান’ কাব্যগ্রন্থটি অধিকাংশ লেখাই অবসর সময়ে এ মসজিদে বসেই রচনা করেন। অথচ ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটিই আজ বিলুপ্ত। কোনো স্মৃতিচিহ্ন অবশিষ্ট নেই এখানে। মুসল্লিদের গোসল ও ওজুর জন্য ১৯৩৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হয় বিশালাকৃতির একটি পুকুর। পুকুরটি ছাড়া কবি কায়কোবাদের সব স্মৃতিই আজ বিলুপ্ত। বর্তমানে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশেই তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি মসজিদ। সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর জানান, কবি কায়কোবাদের কোনো স্মৃতিচিহ্ন মসজিদ এবং পোস্টঅফিসে বর্তমানে আর অক্ষত নেই। আধুনিক নির্মাণ স্থাপত্যের ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে কবির নামটিও। স্থানীয় প্রজন্ম জানেই না যে, এখানে কায়কোবাদ নামে একজন বিখ্যাত কবির পদচারণা ছিলো। যা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমান প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানাতে এখানে কবির নামফলক এবং কিছু স্মৃতিচিহ্ন পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন। পিংনা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, এ মসজিদ অনেক স্মৃতি বহন করে। এ মসজিদে বসেই কবি কায়কোবাদ তার বিখ্যাত আজান কবিতাটি রচনা করেন। কিন্তু এখন আর এখানে কবি কায়কোবাদের কোনো স্মৃতি অবশিষ্ট নেই। মসজিদটি অনেক পুরোনো হওয়ায় পলেস্তার খুলে পড়ছিল। পরে এলাকাবাসী মিলিত হয়ে এটিকে ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন।