রুস্তম আলী : এই প্রথম নিতান্তই অজগাঁমের ছেলে সুজন আমেরিকা থেকে ডাক্তারি পাশ করে ঘরে ফিরছে। এই কথা শুনে গ্রামের কারই বা গর্ব না হয়। তাই মা খুশি হয়ে মারুতি নিয়ে সূজনকে ষ্টেশনে নিতে এগিয়ে এসেছে। তার সঙ্গে গ্রামের মানুষ অনেকেই আছে। আর খুশি হবেই না বা কেন গ্রামে কোনও সরকারি বা বেসরকারী চিকিৎসার ব্যাবস্থা ছিল না প্রাই আট কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল বা পায়ে হেঁটে রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে হত। পিচ হওয়া তো দূরের কথা লাল মাটির মোডাম বা বালি পাথর সিমেন্টর ঢালাই পর্যন্ত ছিল না।
এই ভাঙা-চোরা রাস্তায় বর্ষায় জল জমে কাঁদা হয়ে যেত বলে গাড়ী ঘোড় বা যানবাহনের কোনও ব্যাবস্থা ছিল না। অনেক সময় ডাক্তারের কাছে রোগী নিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পৌছতে কয়েকমিনিটের বিলম্বে রোগী রাস্তাতেই মারা যেত। তাই সূজনের মনে প্রবল জেদ সে ভালো পড়াশোনা করবে। বড় হয়ে প্রসিদ্ধ ডাক্তার হবে। আর ডাক্তারি পাশ করে গ্রামে আজীবন থেকে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা করবে। বিনা চিকিৎসায় গ্রামের আর কাউকে ফের মরতে দিবে না এই দৃঢ় সংকল্প তার মনে।
গ্রামের মানুষ যারা সূজনকে এগিয়ে নিতে ষ্টেশনে এসেছিল তারা বাদে অবশিষ্টরা পরের দিন দলে দলে সূজনকে দেখতে বাড়িতে এসে উপস্থিত হল। তাদের সঙ্গে তার মামাতো বোন রোমানাও। সূজনের ছোট থেকে এই রোমানার সাথেই বিয়ের কথা হয়ে আছে। সে কথা সূজন মাথায় না রাখলেও রোমানা তার সবটাই অন্তরে ধরে রেখে ঘর বাঁধার প্রত্যাশায় সে এখনও দৈনন্দিন মনে মনে বাসনার জাল বোনে। তাই অনেক দিন পর সৃজনের ঘরে ফেরার কথা শ্রবণ করে রোমানা খুশিতে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। সে সৃজনের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে ঈষৎ মুচকি হেসে বলল, “আমার কথা তোমার খুব মনে পড়ত তাইনা সূজন’দা?”
এই এই কথা শুনে সূজন বলল, “শুধু তোর কথা নয় গ্রামের মানুষ বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন সবার কথায় আমার মনে পড়ত।
কিন্তু মনে পড়লেই তো ফের চলে আসতে পারিনা পড়া রেখে। সূজনের এই কথার পর রোমানা ঈষৎ মুচকি হেসে ফের বলল, “আচ্ছা সূজন’দা শুনেছি আমেরিকা পড়তে গেলে সেখানকার মেয়েরা নাকি বিয়ে করে সঙ্গে চলে আসে কিন্তু তোমার সঙ্গে কেউ আসেনি?” সুজন এই কথার প্রতুত্তরে বলল, “আমি তো আমেরিকা মেয়ে আনতে যাইনি, ডাক্তারি পড়তে গিয়েছি। আমার সাথে মেয়ে আসবে কেন?” রোমানা-“আমি জানি তুমি আমার জন্যই কাউকে সঙ্গে নিয়ে আসনি।”
সুজন- “আরে ধ্যাৎ এ’সব কি বলছিস।”
রোমানা – “যেটা বাস্তব সেটাই বলেছি।”
রোমানা এই কথা পরিসমাপ্তিা করে আগামী পরশু
ভায়ের বিয়ে তোমাকে নিমন্ত্রণ করে গেলাম যাবে কিন্তু হয়ত ফের কারও ডাকতে আসার সূযোগ হবেনা তাই বিয়ের দিনটা মনে রেখে সকাল সকাল যাবে তুমি। আমি সারাদিন তোমার অপেক্ষায় থাকব। তুমি গেলে সেখানেই আরও অনেক কথা হবে।
এই বলে রোমানা তথাস্থান হতে তার বাড়ির দিকে রওনা হল।
তারপর বিয়ের দিন ঘণিয়ে এলে সূজন যথা সময়ে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হল। তারপর দেখল চারিদিক আমন্ত্রিত লোকজন আসতে শুরু করেছে। বাইরে প্যান্ডেলের ভিতর ও বাডির ভিতর পৃথকভাবে খাওয়া দাও ভরপুর চলজে। বিয়ে বাড়িতে অনেক দূর দূরান্ত থেকে আত্মীয-স্বজনেরা এসেছে তাদের সাথে দেখা হল সূজনের।
সুজনকে পেয়ে তারা সবাই খূশিতে হর্ষিত। বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই স্বঝনকে সবাই খেতে বসতে বলে সূজন সেই কথা মত বিয়ে বাড়ির আত্মীয়-
সুজন ও তার পরিচিত লোকজনদের সাথে দেখা সেওে বাইরের প্যান্ডেলে খেতে বসে যায়। তখন সূজনকে বলে আপনাদের জায়গা এখানে নয় বাড়িতে ঘরের ভিতর আপনি সেখানে গিয়ে খেতে বসুন।
ভিন্ন খাবারের ব্যাবস্থা আছে। এখানে গ্রামের লোকের জন্য সাধারণ খাবার। তাদের খাওয়ানোর এই দু’জায়গায় দুরকম ব্যাবস্থা সূজনের ন্যায় পরায়ন বিবেক মেনে নিতে পারল না। তাই সে সেখান থেকে উঠে বাড়িতে খেতে না বসে কাউকে কিছু না বলেই সোজা বাড়ি চলে এল। সুজনে বাড়িতে গিয়ে গেটে ঢুকতেই তার মা বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরুচ্ছেন।
সূজনকে দেখে আৎকে উঠে বললেন, “তুই চলে এলি কেন বাবা? বাড়িতে বসবি। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করবি। কথা বলবি তাদের সাথে। তোকে পেয়ে ওরা সবাই খুশি হবে।
সূজন বলল, “মা তাদের খাবারের দু’রকম ব্যাবস্থা- গ্রামের মানুষদের বাইরের প্যান্ডেল আর দূর দূরান্তের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের জন্য বাড়ির ভিতর ঘওে সেখানে খুব উন্নতমানের খাবারের ব্যাবস্থা। তাই আমি অমানবিকতা মেনে নিতে পারিনি বলে না খেয়ে চলে এসেছি। মা খুশি হয়ে বললেন তুই ঠিক করেছিস বাবা এই না হলে আমার আদর্শ ছেলে।
ভাগ্যিস্ তুই তাড়াতাড়ি ফিরে এলি নইলে আমিও চলে যেতাম। তবে আর যাচ্ছি না।
ং