ঢাকা ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আত্মহনন নাকি পুশ ফ্যাক্টর

  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১৫৭ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব আতœহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবার ওই দিবসে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। ধর্মীয় তত্ত্বে আতœহত্যা মহাপাপ। রাষ্ট্রীয় বিচার কাঠামোতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে দৈনিক ঘটে যাওয়া সমাচারে আতœহত্যা ব্যাধিজনিত পক্ষাঘাত। এ যেন ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়।
মানসিক ব্যাধি, বিকারগ্রস্ত ও ব্যক্তিগত হতাশা খুব পরিচিত পরিসরে প্রায়শই বিস্তার করছে। উল্লেখিত ব্যাধিসমূহ শুধুমাত্র জিনগত প্রভাবক-এর কারণেই প্রকাশ পায় এমনটি নয়। সামাজিক অবকাঠামো, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, অপ্রতুল সুযোগ সুবিধা, রাষ্ট্রীয় বিধি, রীতির নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা ও কুসংস্কার কিছু অংশে অপমৃত্যুকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে ২৬ লক্ষ শিক্ষিত বেকার। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বোঝা হয়ে এই বেকারত্বের অভিশাপ বহন করছে লাখো পরিবার। তাদের আহাজারি সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছে না। দারিদ্রপীড়িত এই ভূমিতে সম্পদের সুষম বণ্টন হয়তো হয় না। মানবসম্পদের অব্যবস্থাপনা যত্রতত্র।
পারিবারিক ভাঙনের করুণ সুর প্রতিনিয়ত বাজে চেনা গলিতে, পাড়াতে। সেই সব পরিবারের সদস্যদের সামাজিক অবস্থান ও মানসিক যন্ত্রণা অস্পর্শ। কতিপয় ব্যক্তি সহানুভূতি নিয়ে পীড়িত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে অজগরের ভূমিকায় এগিয়ে আসে নিজ উদ্যামে। পরিস্থিতি শোচনীয় রূপে পৌছে দেয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। বিনা আমন্ত্রণেই এই অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তিদের আগমন ও অবস্থান।
কখনো আবার ব্যক্তিগত সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বাস, আস্থা, দায়িত্বশীলতার চরমদশায় উপনীত একরূপ। ধুসর, বিবর্ণ হয় মায়াময় মায়ার জাল। কখনো ব্যক্তিগত অস্তিত্ব হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায়, দায়িত্বহীন আচরণে অপরপক্ষের আত্মহননের কারণ হিসেবে মূখ্য হয়।
পারিবারিক সদস্যদের বিচার সুলভ আচরণ, রক্ষণশীলতা, রুক্ষপ্রকৃতি ও আত্মনাশ-এর কিছু কারণ। নিজের অথবা কাছের মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়কে উপেক্ষা করে অন্যের মতামতকে গুরুত্ববহ হিসেবে গ্রহণও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
জীবনের করুণ বিনাশ রোধে শুধু মানসিক চিকিৎসা হয়তো যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দায়িত্বশীল আচরণ, মানবিক মূল্যবোধ ও সদাচরণ। অন্যের জীবনাচারে অযাচিত হস্তক্ষেপ-এর অনুপ্রবেশ রহিত হলে কিছুক্ষেত্রে হয়তো আত্মহত্যার গতিও স্লথ হতো। এক জীবনের ক্ষুদ্র আয়োজনে বেঁচে থাকা হোক স্বস্তির। অতএব, নিরুপায়ের আত্মহত্যায় যেন মলিন না হয় আমাদের প্রতিদিনকার জীবন।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আত্মহনন নাকি পুশ ফ্যাক্টর

আপডেট সময় : ০৯:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফারজানা কাশেমী : প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব আতœহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবার ওই দিবসে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। ধর্মীয় তত্ত্বে আতœহত্যা মহাপাপ। রাষ্ট্রীয় বিচার কাঠামোতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে দৈনিক ঘটে যাওয়া সমাচারে আতœহত্যা ব্যাধিজনিত পক্ষাঘাত। এ যেন ব্যাধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়।
মানসিক ব্যাধি, বিকারগ্রস্ত ও ব্যক্তিগত হতাশা খুব পরিচিত পরিসরে প্রায়শই বিস্তার করছে। উল্লেখিত ব্যাধিসমূহ শুধুমাত্র জিনগত প্রভাবক-এর কারণেই প্রকাশ পায় এমনটি নয়। সামাজিক অবকাঠামো, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, অপ্রতুল সুযোগ সুবিধা, রাষ্ট্রীয় বিধি, রীতির নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা ও কুসংস্কার কিছু অংশে অপমৃত্যুকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে ২৬ লক্ষ শিক্ষিত বেকার। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বোঝা হয়ে এই বেকারত্বের অভিশাপ বহন করছে লাখো পরিবার। তাদের আহাজারি সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছে না। দারিদ্রপীড়িত এই ভূমিতে সম্পদের সুষম বণ্টন হয়তো হয় না। মানবসম্পদের অব্যবস্থাপনা যত্রতত্র।
পারিবারিক ভাঙনের করুণ সুর প্রতিনিয়ত বাজে চেনা গলিতে, পাড়াতে। সেই সব পরিবারের সদস্যদের সামাজিক অবস্থান ও মানসিক যন্ত্রণা অস্পর্শ। কতিপয় ব্যক্তি সহানুভূতি নিয়ে পীড়িত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে অজগরের ভূমিকায় এগিয়ে আসে নিজ উদ্যামে। পরিস্থিতি শোচনীয় রূপে পৌছে দেয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। বিনা আমন্ত্রণেই এই অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তিদের আগমন ও অবস্থান।
কখনো আবার ব্যক্তিগত সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বাস, আস্থা, দায়িত্বশীলতার চরমদশায় উপনীত একরূপ। ধুসর, বিবর্ণ হয় মায়াময় মায়ার জাল। কখনো ব্যক্তিগত অস্তিত্ব হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায়, দায়িত্বহীন আচরণে অপরপক্ষের আত্মহননের কারণ হিসেবে মূখ্য হয়।
পারিবারিক সদস্যদের বিচার সুলভ আচরণ, রক্ষণশীলতা, রুক্ষপ্রকৃতি ও আত্মনাশ-এর কিছু কারণ। নিজের অথবা কাছের মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়কে উপেক্ষা করে অন্যের মতামতকে গুরুত্ববহ হিসেবে গ্রহণও আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
জীবনের করুণ বিনাশ রোধে শুধু মানসিক চিকিৎসা হয়তো যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দায়িত্বশীল আচরণ, মানবিক মূল্যবোধ ও সদাচরণ। অন্যের জীবনাচারে অযাচিত হস্তক্ষেপ-এর অনুপ্রবেশ রহিত হলে কিছুক্ষেত্রে হয়তো আত্মহত্যার গতিও স্লথ হতো। এক জীবনের ক্ষুদ্র আয়োজনে বেঁচে থাকা হোক স্বস্তির। অতএব, নিরুপায়ের আত্মহত্যায় যেন মলিন না হয় আমাদের প্রতিদিনকার জীবন।
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ