ঢাকা ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

আত্মহত্যা একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু, আসুন সচেতন হই

  • আপডেট সময় : ১০:২০:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৯২ বার পড়া হয়েছে

ইকবাল মাসুদ : আত্মহত্যা আমাদের প্রত্যেককে প্রভাবিত করতে পারে। প্রতিটি আত্মহত্যাই বিধ্বংসী এবং পাশের মানুষদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টার একটি প্রবল প্রভাব রয়েছে যা শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবার, সম্প্রদায় এবং সমাজকেও প্রভাবিত করে। আত্মহত্যার জন্য সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির কারণগুলি, যেমন চাকরি বা আর্থিক ক্ষতি, ট্রমা বা অপব্যবহার, মানসিক এবং মাদকদ্রব্য ব্যবহারের অসুস্থতা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বাধাগুলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব মতে বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে বছরে প্রায় ৬ জন আত্মহত্যা করে থাকেন। বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিষণœতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারিকালে এটি বেড়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পরে, বিভিন্ন দেশে জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্ধেকেরও বেশি লোক রিপোর্ট করেছে যে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়েছে। বছরে আনুমানিক ৭০৩,০০০ মানুষ বিশ্বে আত্মহত্যা করে। আরও অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং আত্মহত্যার চিন্তায় রয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তীব্র দুঃখ ভোগ করে বা অন্যথায় আত্মঘাতী আচরণের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। প্রতিটি আত্মহত্যার মৃত্যু একটি জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ যা তাদের আশেপাশের লোকদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। আত্মহত্যার চিন্তা জটিল। কোনো একক পদ্ধতি সবার জন্য কাজ করে না। আমরা হয়তো কিছু কারণ জানি এবং জীবনের এমন ঘটনা হতে পারে যে আত্মহত্যা এবং মানসিকভাবে কাউকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতাও হতে পারে। যারা বিষণœতায় ভোগেন, তাদের মধ্যে বরং যত দিন যায়, ততই কষ্টদায়ক চিন্তা, দৃশ্য আরো বেশি করে মনে আসে। যারা আত্মহত্যার চিন্তা করছে তারা অনুভব করতে পারে তারা কোথাও আটকা পড়েছে বা তাদের বন্ধু, পরিবার এবং তাদের জন্য বোঝার মতো এবং এইভাবে মনে হতে পারে যে তারা একা এবং আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যায়। মূল প্রমাণ-ভিত্তিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে আত্মহত্যার উপাদানের সরবরাহ সীমিত করা (যেমনÑ আগ্নেয়াস্ত্র, কীটনাশক ইত্যাদি), মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকদ্রব্য হ্রাস নীতি গ্রহণ, এবং আত্মহত্যার বিষয়ে দায়িত্বশীল মিডিয়া রিপোর্টিং প্রচার করা, সামাজিক কলঙ্ক বা স্টিগমা প্রতিরোধ ইত্যাদি। দেশব্যাপী আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় প্রচার এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে আত্মক্ষতি এবং আত্মহত্যাকে মোকাবিলা করার জন্য স্ব-ক্ষমতায়ন কার্যক্রম গ্রহণ যেমন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন অর্জন করা যেতে পারে, জনসাধারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী যেমন তরুণদের লক্ষ্য করে এবং বাড়িতে, স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খোলামেলা আলোচনার সুবিধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি। যারা আত্মহত্যার চিন্তা করছেন বা প্রভাবিত হয়েছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য চাইতে উৎসাহিত করা। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে, আত্মহত্যার চারপাশে স্টিগমা কমিয়ে এবং সুপরিচিত পদক্ষেপকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, আমরা আত্মহত্যার ঘটনা কমাতে পারি। যারা আত্মহত্যা নিয়ে চিন্তা করে বা আত্মঘাতী সংকটের সম্মুখীন তাদের মধ্যে আশা তৈরি করা যে আত্মহত্যার বিকল্প রয়েছে এবং এর লক্ষ্য আত্মবিশ্বাস তৈরী এবং আশার আলোকে অনুপ্রাণিত করা। আশা তৈরির মাধ্যমে, আমরা আত্মঘাতী চিন্তার সম্মুখীন হওয়া মানুষদের কাছে তথ্য দিতে পারি যে আশা আছে এবং আমরা তাদের সাথে সমব্যাথি ও তাদের প্রতি আমাদের সমানুভূতি আছে এবং তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আরও পরামর্শ দেওয়া যে আমাদের কাজগুলো, যত বড় বা ছোট হোক না কেন, যারা আত্মঘাতী চিন্তা করছে তাদের আশা দিতে পারে। সবশেষে, বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার হিসাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধকে নির্ধারণ করার গুরুত্ব তুলে ধরা, বিশেষ করে সবখানে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাসমূহ সহজলভ্য করা এবং প্রমাণভিত্তিক কার্যক্রমগুলোর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এমন একটি সমাজ কল্পনা করা যেতে পারে যেখানে আত্মহত্যা এতটা প্রচলিত নয়।
সমাজের একজন সদস্য হিসেবে, একজন তরুণ হিসেবে, একজন পিতামাতা হিসেবে, একজন বন্ধু হিসেবে, একজন সহকর্মী হিসেবে বা জীবিত অভিজ্ঞতার একজন ব্যক্তি হিসেবে যারা আত্মহত্যার সংকটে পড়েছে বা যারা আত্মহত্যার কারণে শোকাহত তাদের সমর্থনে আমরা সবাই ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা সবাই সমস্যাটি সম্পর্কে বোঝার জন্য উৎসাহিত করতে পারি, যারা সংগ্রাম করছেন তাদের কাছে পৌঁছাতে এবং আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে আশা তৈরি করতে পারি এবং মানুষকে আলো দেখাতে পারি। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে ঘটনা বা পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা, ইতিবাচকভাবে দেখা। একে বলা হয় ঈড়মহরঃরাব জবভৎধসরহম। কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভেঙে গেলে, মানুষ শোকাহত হবো এটি স্বাভাবিক। এতে দুঃখ ও ব্যথা আত্ম-করুণামূলক চিন্তা আসবে সেটিও স্বাভাবিক। কিন্তু ‘আমি সবসময় একাকী থাকবো’ এরকম ত্রুটিমূলক চিন্তাকে পুনঃমূল্যায়ন করে, বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করে, এর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে, আমরা পরিস্থিতি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারি। যে ঘটনার সাথে খাপ খায়নি, পূর্ণ সঠিক ছিল না, তার যে ভালো বিকল্প রয়েছে তা ভাবা এবং পুনঃমূল্যায়ন করে ঘটনাটিকে দেখা, ভাবার আঙ্গিক বদল করা যায়। এক কথায়, পরিস্থিতিকে ‘ভিন্ন দৃষ্টিতে’ মূল্যায়ন করে, আমরা আশার আলো দেখতে পারি।
আপনি কাউকে আশা জাগিয়ে সাহায্য করতে পারেন এবং আপনি তার প্রতি যতœশীল। যত ছোটই হোক না কেন আপনি ভূমিকা রাখতে পারেন। কি করতে হবে বা কি সমাধান আছে বলুন পাশাপাশি কি করতে হবে না তাও বলুন। ছোট ছোট কথাও একজনকে অনুপ্রাণিত করতে পারে বা বাঁচাতে পারে। ‘আশা’- যা জীবনের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, ব্যর্থতা, হতাশার পরেও মানুষের জীবনে টিকে থাকে। মানুষকে নতুন পথ, নতুন জীবনের আলো দেখায়। আধুনিক গবেষকরা দেখেছেন, উৎপীড়িত, পরাজিত মানুষকে সান্ত¡না, প্রবোধ দেওয়ার চেয়ে তাদের মধ্যে “আশার” সঞ্চার করতে পারলে সেটি ভালো কাজ দেয়।
যারা আত্মহনন বা আত্মহত্যার চিন্তা করছে তাদের কাউন্সিলিং গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে সে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ব্যক্তির মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ধারাবাহিক কাউন্সেলিং প্রয়োজন এবং এই কাউন্সেলিং শুধু একবারের জন্য নয় ধারাবহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজন হতে পারে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীল, আত্মনিয়ন্ত্রিত করে তোলা যায় এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ও সমস্যার সঙ্গে যথোপযুক্ত খাপ খাইয়ে কার্যকরভাবে জীবনযাপন করতে সক্ষম করে তোলা সম্ভব।
লেখক : পরিচালক, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মহত্যা একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু, আসুন সচেতন হই

আপডেট সময় : ১০:২০:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

ইকবাল মাসুদ : আত্মহত্যা আমাদের প্রত্যেককে প্রভাবিত করতে পারে। প্রতিটি আত্মহত্যাই বিধ্বংসী এবং পাশের মানুষদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টার একটি প্রবল প্রভাব রয়েছে যা শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবার, সম্প্রদায় এবং সমাজকেও প্রভাবিত করে। আত্মহত্যার জন্য সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির কারণগুলি, যেমন চাকরি বা আর্থিক ক্ষতি, ট্রমা বা অপব্যবহার, মানসিক এবং মাদকদ্রব্য ব্যবহারের অসুস্থতা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বাধাগুলো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব মতে বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে বছরে প্রায় ৬ জন আত্মহত্যা করে থাকেন। বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিষণœতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারিকালে এটি বেড়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পরে, বিভিন্ন দেশে জরিপে অংশগ্রহণকারী অর্ধেকেরও বেশি লোক রিপোর্ট করেছে যে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়েছে। বছরে আনুমানিক ৭০৩,০০০ মানুষ বিশ্বে আত্মহত্যা করে। আরও অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং আত্মহত্যার চিন্তায় রয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তীব্র দুঃখ ভোগ করে বা অন্যথায় আত্মঘাতী আচরণের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। প্রতিটি আত্মহত্যার মৃত্যু একটি জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ যা তাদের আশেপাশের লোকদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। আত্মহত্যার চিন্তা জটিল। কোনো একক পদ্ধতি সবার জন্য কাজ করে না। আমরা হয়তো কিছু কারণ জানি এবং জীবনের এমন ঘটনা হতে পারে যে আত্মহত্যা এবং মানসিকভাবে কাউকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতাও হতে পারে। যারা বিষণœতায় ভোগেন, তাদের মধ্যে বরং যত দিন যায়, ততই কষ্টদায়ক চিন্তা, দৃশ্য আরো বেশি করে মনে আসে। যারা আত্মহত্যার চিন্তা করছে তারা অনুভব করতে পারে তারা কোথাও আটকা পড়েছে বা তাদের বন্ধু, পরিবার এবং তাদের জন্য বোঝার মতো এবং এইভাবে মনে হতে পারে যে তারা একা এবং আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যায়। মূল প্রমাণ-ভিত্তিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে আত্মহত্যার উপাদানের সরবরাহ সীমিত করা (যেমনÑ আগ্নেয়াস্ত্র, কীটনাশক ইত্যাদি), মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকদ্রব্য হ্রাস নীতি গ্রহণ, এবং আত্মহত্যার বিষয়ে দায়িত্বশীল মিডিয়া রিপোর্টিং প্রচার করা, সামাজিক কলঙ্ক বা স্টিগমা প্রতিরোধ ইত্যাদি। দেশব্যাপী আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় প্রচার এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে আত্মক্ষতি এবং আত্মহত্যাকে মোকাবিলা করার জন্য স্ব-ক্ষমতায়ন কার্যক্রম গ্রহণ যেমন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন অর্জন করা যেতে পারে, জনসাধারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী যেমন তরুণদের লক্ষ্য করে এবং বাড়িতে, স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খোলামেলা আলোচনার সুবিধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি। যারা আত্মহত্যার চিন্তা করছেন বা প্রভাবিত হয়েছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য চাইতে উৎসাহিত করা। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে, আত্মহত্যার চারপাশে স্টিগমা কমিয়ে এবং সুপরিচিত পদক্ষেপকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, আমরা আত্মহত্যার ঘটনা কমাতে পারি। যারা আত্মহত্যা নিয়ে চিন্তা করে বা আত্মঘাতী সংকটের সম্মুখীন তাদের মধ্যে আশা তৈরি করা যে আত্মহত্যার বিকল্প রয়েছে এবং এর লক্ষ্য আত্মবিশ্বাস তৈরী এবং আশার আলোকে অনুপ্রাণিত করা। আশা তৈরির মাধ্যমে, আমরা আত্মঘাতী চিন্তার সম্মুখীন হওয়া মানুষদের কাছে তথ্য দিতে পারি যে আশা আছে এবং আমরা তাদের সাথে সমব্যাথি ও তাদের প্রতি আমাদের সমানুভূতি আছে এবং তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আরও পরামর্শ দেওয়া যে আমাদের কাজগুলো, যত বড় বা ছোট হোক না কেন, যারা আত্মঘাতী চিন্তা করছে তাদের আশা দিতে পারে। সবশেষে, বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার হিসাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধকে নির্ধারণ করার গুরুত্ব তুলে ধরা, বিশেষ করে সবখানে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাসমূহ সহজলভ্য করা এবং প্রমাণভিত্তিক কার্যক্রমগুলোর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এমন একটি সমাজ কল্পনা করা যেতে পারে যেখানে আত্মহত্যা এতটা প্রচলিত নয়।
সমাজের একজন সদস্য হিসেবে, একজন তরুণ হিসেবে, একজন পিতামাতা হিসেবে, একজন বন্ধু হিসেবে, একজন সহকর্মী হিসেবে বা জীবিত অভিজ্ঞতার একজন ব্যক্তি হিসেবে যারা আত্মহত্যার সংকটে পড়েছে বা যারা আত্মহত্যার কারণে শোকাহত তাদের সমর্থনে আমরা সবাই ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা সবাই সমস্যাটি সম্পর্কে বোঝার জন্য উৎসাহিত করতে পারি, যারা সংগ্রাম করছেন তাদের কাছে পৌঁছাতে এবং আমাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে আশা তৈরি করতে পারি এবং মানুষকে আলো দেখাতে পারি। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে ঘটনা বা পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা, ইতিবাচকভাবে দেখা। একে বলা হয় ঈড়মহরঃরাব জবভৎধসরহম। কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভেঙে গেলে, মানুষ শোকাহত হবো এটি স্বাভাবিক। এতে দুঃখ ও ব্যথা আত্ম-করুণামূলক চিন্তা আসবে সেটিও স্বাভাবিক। কিন্তু ‘আমি সবসময় একাকী থাকবো’ এরকম ত্রুটিমূলক চিন্তাকে পুনঃমূল্যায়ন করে, বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করে, এর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে, আমরা পরিস্থিতি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারি। যে ঘটনার সাথে খাপ খায়নি, পূর্ণ সঠিক ছিল না, তার যে ভালো বিকল্প রয়েছে তা ভাবা এবং পুনঃমূল্যায়ন করে ঘটনাটিকে দেখা, ভাবার আঙ্গিক বদল করা যায়। এক কথায়, পরিস্থিতিকে ‘ভিন্ন দৃষ্টিতে’ মূল্যায়ন করে, আমরা আশার আলো দেখতে পারি।
আপনি কাউকে আশা জাগিয়ে সাহায্য করতে পারেন এবং আপনি তার প্রতি যতœশীল। যত ছোটই হোক না কেন আপনি ভূমিকা রাখতে পারেন। কি করতে হবে বা কি সমাধান আছে বলুন পাশাপাশি কি করতে হবে না তাও বলুন। ছোট ছোট কথাও একজনকে অনুপ্রাণিত করতে পারে বা বাঁচাতে পারে। ‘আশা’- যা জীবনের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, ব্যর্থতা, হতাশার পরেও মানুষের জীবনে টিকে থাকে। মানুষকে নতুন পথ, নতুন জীবনের আলো দেখায়। আধুনিক গবেষকরা দেখেছেন, উৎপীড়িত, পরাজিত মানুষকে সান্ত¡না, প্রবোধ দেওয়ার চেয়ে তাদের মধ্যে “আশার” সঞ্চার করতে পারলে সেটি ভালো কাজ দেয়।
যারা আত্মহনন বা আত্মহত্যার চিন্তা করছে তাদের কাউন্সিলিং গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে সে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ব্যক্তির মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ধারাবাহিক কাউন্সেলিং প্রয়োজন এবং এই কাউন্সেলিং শুধু একবারের জন্য নয় ধারাবহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজন হতে পারে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীল, আত্মনিয়ন্ত্রিত করে তোলা যায় এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে ও সমস্যার সঙ্গে যথোপযুক্ত খাপ খাইয়ে কার্যকরভাবে জীবনযাপন করতে সক্ষম করে তোলা সম্ভব।
লেখক : পরিচালক, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন