কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: থাইল্যান্ডের বারোমাসি কাঁঠালের বাগান করে সাড়া ফেলেছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হাবিবুর রহমান খান। ছোট ছোট গাছে সারি সারি কাঁঠাল যেন নতুন সম্ভাবনার গল্প বলছে। আঠাবিহীন সুস্বাদু এই কাঁঠালের ফলন আসায় খুশি বাগানমালিক।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই কাঁঠাল বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে খাদ্য-পুষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপজেলার মশ্মিমনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান খান দেড় বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকার মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে দেড়শ বারোমাসি কাঁঠাল জাতের কলম আনেন। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগের অনুমতিতে এই চারা থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়। এরপর এলাকায় নিয়ে এক একর জমিতে রোপণ করেন।
কাঁঠাল বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, সরু সরু গাছ। বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা। সেই গাছের গোড়া থেকে ওপরের চিকন ডালে ঝুলছে কাঁঠাল। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত কাঁঠাল ঝুলে আছে। কাঁঠালের ভারে গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে পরিপক্ব হওয়ার আগেই কেটে ফেলছেন।
কাঁঠাল গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত হাফিজুর রহমান জানান, ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে জমি প্রস্তুত করে ১৮ মাস আগে ভাদ্র মাসে চারা রোপণ করা হয়। রোপণের ২ মাস পর গাছে কাঁঠালের মুচি আসা শুরু হয়। তবে গাছ ছোট হওয়ায় মুচি কেটে ফেলা হয়। তিনি জানান, এ বছর প্রতিটি গাছে ২০-৩০টি কাঁঠাল ধরেছে। ছোট গাছের মুচি কেটে ফেলা হয়েছে। তুলনামূলক একটু বড় গাছে কাঁঠাল রাখা হয়। চিকন ডালগুলো কাঁঠালের ভারে ভেঙে পড়ার উপক্রম হলে পরিপক্ব হওয়ার আগেই ইচড় হিসেবে ৪০ টাকা কেজি দরে ৫০০ কাঁঠাল বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এখনো অনেক কাঁঠাল ঝুলছে।
কৃষক হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কৃষি বিভাগের অনুমতি নিয়ে দেড়শ চারা দেশে আনা হয়। এই চারা জীবাণুমুক্ত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরপর এক একর জমিতে রোপণ করি।’ তিনি বলেন, ‘এই কাঁঠাল পাকার সপ্তাহখানেক আগেই সুগন্ধ ছড়ায়। আঠাবিহীন রসালো কোষ খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। আগামী বছর কলম উৎপাদন করে বাজারজাত করবো। কাঁঠালের কোয়া প্যাকেটজাত করে দেশের শপিংমলে পাঠাবো। এ ছাড়া আগামী বছর থেকে কাঁঠালের কলম সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
মণিরামপুরের মশ্মিমনগর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এ কাঁঠাল বাণিজ্যিকভাবে চাষের সুযোগ আছে। আঠার কারণে তরুণ প্রজন্ম কাঁঠাল খেতে চায় না। আঠা না থাকায় এটি সবাই খেতে পারবে। ফলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।’ তিনি বলেন, ‘বারোমাসি এ কাঁঠালে বছরে ৩-৪ বার ফুল আসার কথা। মাত্র একটি সিজন পার হওয়ায় সেভাবে এখনো দেখা হয়নি। তবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ কাঁঠাল চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে। নিয়মিত কাঁঠাল বাগানের খোঁজ রাখি। পরামর্শও দিয়ে থাকি।’
মণিরামপুর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শারমিন শাহানাজ বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগানটি দেখভাল করেন এবং খোঁজখবর রাখেন। এর পাশাপাশি কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেওয়া হয়।’
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ