ঢাকা ০১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন কাটছে অনেকের

আট মাস বেতন পান না কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা

  • আপডেট সময় : ০৪:৫৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

সম্প্রতি আন্দোলনে সিএইচসিপি-কর্মীরা। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে প্রায় ১৪ হাজার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সেবা বাড়ানোর আরও প্রক্রিয়া চলছে। অপারেশন প্ল্যান (ওপি) অনুমোদন না হওয়ায় গত বছরের জুন থেকে এখন পর্যন্ত টানা আট মাস বেতন পাচ্ছেন না এখানে কাজ করা প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এতে করে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। তারপরও সেবা বন্ধ নেই। কবে বেতন হবে তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন এই হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, রাজস্বকরণ খাতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। যার ফলে তারা একসঙ্গে ৯ মাসের বেতন পাবেন। চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনও করেছেন তারা।

১৯৯৬ সালে গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূলত জনগণের অংশগ্রহণে গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পৌঁছে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। এটি একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। বর্তমানে সারা দেশে মোট ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এসব ক্লিনিকে সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেন সিএইচসিপি। সারা দেশে এমন কর্মী আছেন প্রায় ১৪ হাজার। তারা ৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আগে ২৭ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এখন ২২ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বাদ দেওয়া হয়েছে। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখান থেকেই রোগী রেফারেল শুরু হবে। সপ্তাহে দুই দিন দুজন করে ডাক্তারও বসবেন। তারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রেফারেল রোগী দেখবেন। টারসিয়ারি লেভেলে চাপ কমানোর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক শক্তিশালী করা হবে। সে জন্য যত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সিএইচসিপিদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে প্রথমে রাজস্বকরণ ও পরে পদায়নের কথা ভাবছে সরকার।

সারা দেশে বেশ কিছু সিএইচসিপি’র সঙ্গে কথা বলেছে একটি সংবাদসংস্থা। তাদের ভাষ্য, বরাবরই বেতন পাওয়ার আশ্বাস মিলছে। তবে কবে নাগাদ বেতন হতে পারে তার ধারণা কারও কাছে নেই। বেতনে না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি দীপন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি। বেতন না থাকায় খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার মধ্যেও সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ঋণ করে আর কতদিন চলতে হবে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, একবার শুনলাম ফেব্রুয়ারির শেষে বেতন হতে পারে। এখন শুনি মার্চে। নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না কিছু।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি বিশ্বজিত বাগচী বলেন, পরিবার নিয়ে বেতন ছাড়া চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে আমাদের। বেতনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি আমরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান আছে। এর মধ্যে কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার একটি। এগুলোর অপারেশনাল প্ল্যান হয় পাঁচ বছর মেয়াদি। এটি সবশেষ প্ল্যান। এরপর রাজস্ব খাতে যাবে। এতদিনে হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেরি হতে পারে। কারণ অনেক বিভাগেই যারা আছেন, তারা সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, রাজস্বকরণে শুধু একটা ধাপ বাকি আছে। ১৩ হাজার ৯২৬ জনের একটা তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপদেষ্টা সময় দিলে একটা মিটিং করা হবে। মিটিংয়ের পর নোটিফিকেশন হবে। নোটিফিকেশনের পর অর্থ মন্ত্রণালয় বেতনের টাকা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের ফান্ডে পাঠাবে। আশা করা যাচ্ছে এটা মার্চের মধ্যেই হবে। তখন বকেয়া সব বেতন তারা একবারে পাবেন। তারা আগে ১৪তম গ্রেডের বেতন পেতেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১৬তম গ্রেড করা হয়েছে। রাজস্বকরণ হলে তারা ১৬তম গ্রেডেই বেতন পাবেন।

সিএইচসিপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ -২০১৩ সালে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেওয়া সিএইচসিপিদের চাকরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজস্বভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালে এসেও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৪ সালের এপ্রিলের ১৭ ও ২২ তারিখে আমাদের এসিআর সংগ্রহ ও সার্ভিস বই খোলার পরেও রাজস্বভুক্তকরণ থমকে আছে।

তাদের মতে, দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সরকারের কমিটমেন্ট জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় এক অভাবনীয় সফলতা এনে দিয়েছে এই সিএইচসিপি’রা। প্রতিটি সিএইচসিপি তার শ্রম, মেধা, আন্তরিকতা আর দায়বদ্ধতাকে মাথায় নিয়ে বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে এসব ক্লিনিকের প্রতিটিতে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য প্রকল্পে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তা আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সুপারিশ করে তা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। তাদের ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে স্থানান্তর করে ১৫ মে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তাদের নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের আগেই রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এরপর ২২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায়ে রিট আবেদনকারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

২০১৭ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর চেয়ে সহিদুল ইসলাম, কামাল সরকার, জাহিদুল ইসলামসহ ১০ জন সিএইচসিপি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। শুনানি শেষে একই বছরের ২২ মার্চ বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনকারী ১০ জন সিএইচসিপির চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পরে একই বছরের সেপ্টেম্বরে ১০ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

এরপর একইভাবে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হাইকোর্টে ৭৬টি রিট দায়ের করেন দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার সিএইচসিপি। এর মধ্যে ৭৪টি রিটে সিএইচসিপিদের পক্ষে রায় হয়। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপক্ষ এসব রায়ের ৬২টির বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে মামলাগুলো চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আসে। সেসব আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৬ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে বলা হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে তাদের চাকরি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৬২টি আপিল নিষ্পত্তি করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই রায় দেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবন কাটছে অনেকের

আট মাস বেতন পান না কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা

আপডেট সময় : ০৪:৫৫:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে প্রায় ১৪ হাজার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সেবা বাড়ানোর আরও প্রক্রিয়া চলছে। অপারেশন প্ল্যান (ওপি) অনুমোদন না হওয়ায় গত বছরের জুন থেকে এখন পর্যন্ত টানা আট মাস বেতন পাচ্ছেন না এখানে কাজ করা প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এতে করে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। তারপরও সেবা বন্ধ নেই। কবে বেতন হবে তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন এই হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, রাজস্বকরণ খাতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। যার ফলে তারা একসঙ্গে ৯ মাসের বেতন পাবেন। চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনও করেছেন তারা।

১৯৯৬ সালে গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূলত জনগণের অংশগ্রহণে গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পৌঁছে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। এটি একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম যার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক হতে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। বর্তমানে সারা দেশে মোট ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এসব ক্লিনিকে সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেন সিএইচসিপি। সারা দেশে এমন কর্মী আছেন প্রায় ১৪ হাজার। তারা ৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আগে ২৭ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এখন ২২ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বাদ দেওয়া হয়েছে। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখান থেকেই রোগী রেফারেল শুরু হবে। সপ্তাহে দুই দিন দুজন করে ডাক্তারও বসবেন। তারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রেফারেল রোগী দেখবেন। টারসিয়ারি লেভেলে চাপ কমানোর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক শক্তিশালী করা হবে। সে জন্য যত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সিএইচসিপিদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে প্রথমে রাজস্বকরণ ও পরে পদায়নের কথা ভাবছে সরকার।

সারা দেশে বেশ কিছু সিএইচসিপি’র সঙ্গে কথা বলেছে একটি সংবাদসংস্থা। তাদের ভাষ্য, বরাবরই বেতন পাওয়ার আশ্বাস মিলছে। তবে কবে নাগাদ বেতন হতে পারে তার ধারণা কারও কাছে নেই। বেতনে না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি দীপন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি। বেতন না থাকায় খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার মধ্যেও সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পরিবার নিয়ে চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ঋণ করে আর কতদিন চলতে হবে বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, একবার শুনলাম ফেব্রুয়ারির শেষে বেতন হতে পারে। এখন শুনি মার্চে। নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না কিছু।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি বিশ্বজিত বাগচী বলেন, পরিবার নিয়ে বেতন ছাড়া চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে আমাদের। বেতনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি আমরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান আছে। এর মধ্যে কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার একটি। এগুলোর অপারেশনাল প্ল্যান হয় পাঁচ বছর মেয়াদি। এটি সবশেষ প্ল্যান। এরপর রাজস্ব খাতে যাবে। এতদিনে হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেরি হতে পারে। কারণ অনেক বিভাগেই যারা আছেন, তারা সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, রাজস্বকরণে শুধু একটা ধাপ বাকি আছে। ১৩ হাজার ৯২৬ জনের একটা তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপদেষ্টা সময় দিলে একটা মিটিং করা হবে। মিটিংয়ের পর নোটিফিকেশন হবে। নোটিফিকেশনের পর অর্থ মন্ত্রণালয় বেতনের টাকা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের ফান্ডে পাঠাবে। আশা করা যাচ্ছে এটা মার্চের মধ্যেই হবে। তখন বকেয়া সব বেতন তারা একবারে পাবেন। তারা আগে ১৪তম গ্রেডের বেতন পেতেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১৬তম গ্রেড করা হয়েছে। রাজস্বকরণ হলে তারা ১৬তম গ্রেডেই বেতন পাবেন।

সিএইচসিপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ -২০১৩ সালে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেওয়া সিএইচসিপিদের চাকরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজস্বভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালে এসেও বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৪ সালের এপ্রিলের ১৭ ও ২২ তারিখে আমাদের এসিআর সংগ্রহ ও সার্ভিস বই খোলার পরেও রাজস্বভুক্তকরণ থমকে আছে।

তাদের মতে, দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সরকারের কমিটমেন্ট জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় এক অভাবনীয় সফলতা এনে দিয়েছে এই সিএইচসিপি’রা। প্রতিটি সিএইচসিপি তার শ্রম, মেধা, আন্তরিকতা আর দায়বদ্ধতাকে মাথায় নিয়ে বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে এসব ক্লিনিকের প্রতিটিতে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য প্রকল্পে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তা আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সুপারিশ করে তা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। তাদের ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে স্থানান্তর করে ১৫ মে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তাদের নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের আগেই রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এরপর ২২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায়ে রিট আবেদনকারীদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

২০১৭ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর চেয়ে সহিদুল ইসলাম, কামাল সরকার, জাহিদুল ইসলামসহ ১০ জন সিএইচসিপি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। শুনানি শেষে একই বছরের ২২ মার্চ বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনকারী ১০ জন সিএইচসিপির চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পরে একই বছরের সেপ্টেম্বরে ১০ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

এরপর একইভাবে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হাইকোর্টে ৭৬টি রিট দায়ের করেন দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার সিএইচসিপি। এর মধ্যে ৭৪টি রিটে সিএইচসিপিদের পক্ষে রায় হয়। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপক্ষ এসব রায়ের ৬২টির বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। পরে মামলাগুলো চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আসে। সেসব আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৬ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে বলা হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে তাদের চাকরি ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৬২টি আপিল নিষ্পত্তি করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই রায় দেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।