নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে গেলে এ আগ্রহের কথা তারা জানিয়েছে বলে জানান সফরের প্রতিনিধি দলের প্রধান দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকালে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি’র আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল গত ৬ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফর করে। সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সফরে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন— দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আরমা দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান। লিখিত বক্তব্যে ড. রাজ্জাক সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৭ আগস্ট সফরের প্রথম দিনে সকালে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি’র প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা, জেনারেল সেক্রেটারি বিনোদ তড়ে এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয় শঙ্করের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৮ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টের লিডার অব দি আপার হাউজ (রাজ্যসভা) ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ভারতে জি-২০ সম্মেলনের কো-অর্ডিনেটর ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারত সফরকালে বিজেপির মহিলা সংগঠন মহিলা মোর্চা, যুব সংগঠন যুব মোর্চা ও ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বিজেপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি আয়োজিত ভোজ সভায় যোগদান করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নয়া দিল্লীর ওয়ার মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। রাজ্জাক বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির প্রেসিডেন্ট জগত প্রকাশ নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বিষয়ের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ওই বৈঠকে বিজেপি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তার দল এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ বিজেপির জেনারেল সেক্রেটারি বিনোদ তড়ে তার বৈঠকে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দল এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয় শঙ্কর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দুদেশের মধুর সম্পর্ক যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি উচ্চতায়। রাজ্য সভায় বিজেপির দলনেতা পীযূষ গয়াল বৈঠকে আশা প্রকাশ করেন যে, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, খাদ্যশস্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি ভারত সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। একইসাথে ভারত যাতে বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারে, সেজন্য তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের তালিকা প্রস্তাবের অনুরোধ জানান। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ ফোরামের ভারতের কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চলাকালে আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের কিছু করণীয় নেই: আব্দুর রাজ্জাক
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের কোনও আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন ভারত সফর করে আসা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের প্রধান ও দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকালে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভূমিকা কী থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের কানেকটিভিটি অনেক বেশি। পার্সন টু পার্সন কানেকশন, আপনারা জানেন। বাংলাদেশে কী হচ্ছে তারা সব কিছু জানে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কিছু বিষয়ে তারা জানে, তাদের আগ্রহ আছে। তিনি বলেন, নির্বাচন করবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সরকার। এখানে ভারতের কিছু করার নাই। তারা কোনও মন্তব্য করে নাই। সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারতের জন্য চীন সবসময় দুশ্চিন্তার ফ্যাক্টর। সে জন্যই তাদের সীমান্তে মাঝে মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়। আমরা বলেছি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। সেই নীতি নিয়েই আমরা চলি। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা। এই সম্পর্কের সাথে কারো সম্পর্ক তুলনীয় নয়। সেই প্রসঙ্গে এই বিষয়টি এসেছে। আগামী নির্বাচনে সহিংসতা বিষয়ে ভারতের ধারণা আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব, আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। দুই দেশেরই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ আছে, তথ্য আদান প্রদান হয়। বিএনপির প্রসঙ্গ তুলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, তারা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে এখন দেখেছে যে কিছু নাই, পানিতে ডুবে যাবে। বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যত রাজনীতি কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। ভারত সফর করা তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি’র বিদেশ প্রীতি আছে, তাদের ধর্না দেওয়া কমে নাই। সেটি করে যে কোনও লাভ হচ্ছে না, সেটা অনুধাবন করতে পেরেছে। সে জন্য এই সুরে কথা বলছে। আমরা ভারত গেছি আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের অফিসে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তারা নিজেরা ধর্না দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যায়। ধর্না দিয়েও লাভ হচ্ছে না, তাই এখন উল্টা কথা বলা শুরু করেছে। ড. হাসান বলেন, আমরা যাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বাংলাদেশে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। এখানে যে সমস্ত দাবি আছে সেগুলোর প্রয়োজন নাই, এটা তারা বুঝে। তারা মনে করে সংবিধান আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট বাংলাদেশ হবে। তিনি বলেন, তবে আমাদের সঙ্গে জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জঙ্গিদের একটি ক্রস বর্ডার কানেকশন রয়েছে, এটা নিয়ে তারা ওয়াকিবহাল আছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।