বিশেষ সংবাদদাতা: মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হল শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় মহালয়ার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। হিন্দু আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। প্রথমে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। এ সময় মঙ্গলঘট স্থাপন করে তাতে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে করা হয় পূজা।
মহালয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ হল তর্পণ শ্রাদ্ধ। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে।
পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন। এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন। তর্পনের মাধ্যমে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে, শুরু হয় দেবীপক্ষের। ঘট স্থাপনের পর নানা স্তব-স্তুতিতে দেবীকে মর্তে আহ্বান জানানো হয়।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের হৃদয় সরকার একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সরকারি ছুটি না থাকার কারণে মহালয়া অনুষ্ঠানে সাধারণত অংগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তবে এ বছর পরিবার নিয়ে বের হলাম। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ঘুরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করবো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও মহালয়ার আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
জগন্নাথে মহালয়ার আয়োজক কমিটির সদস্য রুপ কুমার সরকার বলেন, দবী দুর্গার আগমনী উপলক্ষে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থীরা খুবই উৎসবমুখর থাকি। মহালয়ায় আয়োজন উপলক্ষে আমরা গত সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে আমাদের এ আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী।
পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার মহালয়ার সপ্তম দিন আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, অক্টোবরের ১ তারিখ নবমী এবং ২ অক্টোবর দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।
এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়। দশমীতে দেবীর মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলায় চড়ে। আর দোলায় দেবীর গমনকে মহামারী বা মড়কের ইংগিত ধরা হয়।
এখন দুর্গাপূজার আয়োজন সম্পন্ন করতে শেষদিকের প্রস্তুতি চলছে। রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলছেন প্রতিমা শিল্পীরা। পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার দুর্গাপূজা হবে এবার ৩৩ হাজার ৫৭৬টি মণ্ডপে।এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২৫৫টি মণ্ডপে পূজা হওয়ার কথা রয়েছে।
এসি/সানা/আপ্র/২১/০৯/২০২৫