ঢাকা ০১:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ বিশ্ব এইডস দিবস

  • আপডেট সময় : ১১:৪৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

প্রত্যাশা ডেস্ক: আজ ০১ ডিসেম্বর, সোমবার বিশ্ব এইডস দিবস। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর এ দিনে দিবসটি পালিত হয়। এটি আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয় যে এইচআইভি/এইডসের সমস্যা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ দিনটি সে সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ, যাদের আমরা এ রোগে হারিয়েছি এবং যারা এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন প্রকাশের দিন।

২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে, নতুনভাবে এইডস প্রতিরোধ গড়ে তোলা’ – যা দেখায় যে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ এবং স্বাস্থ্য খাতে অর্থের ঘাটতি আমাদের অগ্রগতিকে ধীর করে দিয়েছে। তবে এ বার্তা একই সঙ্গে আশা জাগায় যে আমরা চাইলে আরো শক্তিশালী ও আধুনিক এইডস প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য থেকে বোঝা যায় যে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, কিন্তু সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ আছে। ২০২৪ সালের শেষে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে ছিলেন। একই বছরে ১৩ লাখ নতুন সংক্রমণ এবং প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এইডস-সংক্রান্ত জটিলতায়। যদিও এ সংখ্যা আগের দশকের তুলনায় অনেক কমেছে, তবুও এখনো প্রায় ৯২ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে না।

বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বোঝা যায়, সমাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এখনো আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা।

দেশে এইচআইভি (এইডস) পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এক বছরে নতুন রোগী বেড়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। এসব রোগীর প্রায় অর্ধেকই পুরুষ সমকামী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলায়। এ জেলায় নতুন রোগী পাওয়া গেছে ৩৩৪ জন। এরপর কুমিল্লা জেলায় ১০৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রায় ১০০ জন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিভাগ হিসাবে চলতি বছর রাজশাহী বিভাগে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে সিরাজগঞ্জ জেলায়।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, এখন এইচআইভি চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। তারপরও আক্রান্ত ও মৃত্যু কমছে না। এর কারণ খোঁজা জরুরি। একটা কারণ হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত এবং যথাযথ চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তা কাজ করছে কি না সে বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার। এছাড়া সমকামীদের মধ্যে নতুন শনাক্তের হার যেভাবে বাড়ছে, তা এখনই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

২০২৫ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল আমাদের নতুন আশার আলো দেখায়। দীর্ঘমেয়াদি ইনজেকশন ভিত্তিক অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ এখন অনেকের জন্য সহজ ও টেকসই চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করছে। পাশাপাশি নতুন মডেলের গবেষণা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণের হার আরো নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করছে, যা সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছে যে অর্থসংকট ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ অগ্রগতিকে আটকে দিতে পারে, এবং বৈশ্বিক ৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথকে আরো কঠিন করে তুলতে পারে।

তাই ২০২৫ সালের বিশ্ব এইডস দিবস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতার কারণে আমরা অনেক সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু সমান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে এবং বৈষম্য দূর না হলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এইডস মোকাবিলা শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়- এটি মানবিক অধিকার, ন্যায়, সমতা এবং সম্মানের বিষয়।

এ দিনে আমরা সে সব মানুষকে স্মরণ করি যারা আর আমাদের মাঝে নেই, যারা এইচআইভি নিয়ে লড়াই করছেন তাদের পাশে দাঁড়াই, এবং প্রতিজ্ঞা করি যে একসঙ্গে কাজ করলে একদিন আমরা এইডস-মুক্ত পৃথিবী গড়তে পারব।

এসি/আপ্র/০১/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

আজ বিশ্ব এইডস দিবস

আপডেট সময় : ১১:৪৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: আজ ০১ ডিসেম্বর, সোমবার বিশ্ব এইডস দিবস। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর এ দিনে দিবসটি পালিত হয়। এটি আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয় যে এইচআইভি/এইডসের সমস্যা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ দিনটি সে সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ, যাদের আমরা এ রোগে হারিয়েছি এবং যারা এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন প্রকাশের দিন।

২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে, নতুনভাবে এইডস প্রতিরোধ গড়ে তোলা’ – যা দেখায় যে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ এবং স্বাস্থ্য খাতে অর্থের ঘাটতি আমাদের অগ্রগতিকে ধীর করে দিয়েছে। তবে এ বার্তা একই সঙ্গে আশা জাগায় যে আমরা চাইলে আরো শক্তিশালী ও আধুনিক এইডস প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য থেকে বোঝা যায় যে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, কিন্তু সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ আছে। ২০২৪ সালের শেষে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে ছিলেন। একই বছরে ১৩ লাখ নতুন সংক্রমণ এবং প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এইডস-সংক্রান্ত জটিলতায়। যদিও এ সংখ্যা আগের দশকের তুলনায় অনেক কমেছে, তবুও এখনো প্রায় ৯২ লাখ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে না।

বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বোঝা যায়, সমাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এখনো আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা।

দেশে এইচআইভি (এইডস) পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এক বছরে নতুন রোগী বেড়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। এসব রোগীর প্রায় অর্ধেকই পুরুষ সমকামী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলায়। এ জেলায় নতুন রোগী পাওয়া গেছে ৩৩৪ জন। এরপর কুমিল্লা জেলায় ১০৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রায় ১০০ জন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিভাগ হিসাবে চলতি বছর রাজশাহী বিভাগে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে সিরাজগঞ্জ জেলায়।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, এখন এইচআইভি চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। তারপরও আক্রান্ত ও মৃত্যু কমছে না। এর কারণ খোঁজা জরুরি। একটা কারণ হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত এবং যথাযথ চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তা কাজ করছে কি না সে বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার। এছাড়া সমকামীদের মধ্যে নতুন শনাক্তের হার যেভাবে বাড়ছে, তা এখনই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

২০২৫ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল আমাদের নতুন আশার আলো দেখায়। দীর্ঘমেয়াদি ইনজেকশন ভিত্তিক অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ এখন অনেকের জন্য সহজ ও টেকসই চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করছে। পাশাপাশি নতুন মডেলের গবেষণা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণের হার আরো নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করছে, যা সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছে যে অর্থসংকট ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ অগ্রগতিকে আটকে দিতে পারে, এবং বৈশ্বিক ৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথকে আরো কঠিন করে তুলতে পারে।

তাই ২০২৫ সালের বিশ্ব এইডস দিবস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতার কারণে আমরা অনেক সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু সমান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে এবং বৈষম্য দূর না হলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এইডস মোকাবিলা শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়- এটি মানবিক অধিকার, ন্যায়, সমতা এবং সম্মানের বিষয়।

এ দিনে আমরা সে সব মানুষকে স্মরণ করি যারা আর আমাদের মাঝে নেই, যারা এইচআইভি নিয়ে লড়াই করছেন তাদের পাশে দাঁড়াই, এবং প্রতিজ্ঞা করি যে একসঙ্গে কাজ করলে একদিন আমরা এইডস-মুক্ত পৃথিবী গড়তে পারব।

এসি/আপ্র/০১/১২/২০২৫