নিজস্ব প্রতিবেদক : রাত পোহালেই শুভ বড়দিন। খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। দিনটি উদযাপনে রাজধানীর প্রতিটি চার্চ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। আলোকসজ্জা, গোশালা তৈরি, ক্রিসমাস ট্রি সাজানোসহ নানা প্রস্তুতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে সর্বত্র। টানা প্রায় তিন বছর পর অনেকটা বড় পরিসরেই এবার যিশু খ্রিস্ট্রের জন্মদিন পালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। গতকাল শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাঁকরাইল চার্চে গিয়ে দেখা গেছে বড়দিন পালনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বড়দিন উপলক্ষে সকল মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি।
এ বিষয়ে আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি বলেন, ‘যিশুর বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন সূর্যের আলো ও বৃষ্টি যেমন বর্ষিত হয়, তেমনি ঈশ্বরের ভালবাসা সকলের প্রতি বর্ষিত হয়। ঈশ্বর বলেছেন, আমরা মানুষের সেবা করতে পৃথিবীতে এসেছি। যিশু বলেছেন, পাপীকে নয় পাপকে ঘৃনা করও। তিনি সব ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। তিনি মৃত মানুষকে জীবন দান করেছিলেন। তিনি পৃথিবীতে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যিশুর দর্শন আমরা যেন সত্য ন্যায়ের পথে জীবনযাপন করি, যেন একে অপরকে ভালবাসি, সেবা করি। তিনি শিখিয়েছেন— আমি সেবা পেতে নই, সেবা করতে পৃথিবীতে এসেছি। তিনি অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছেন, প্রতিবন্ধীর হাঁটার পথ তৈরি করেছেন। বলেন, ধর্ম মানুষের কল্যানের জন্য। তিনি আমাদের মুক্তি দাতা। যে ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করে তার কখনো বিনাশ হবে না। যিশু ছিলেন একজন সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। তিনি সবার কল্যাণ ও মঙ্গল করেছেন। তিনি বুঝিয়েছেন ঈশ্বর সকলের।’
‘রাজধানীর ১০টা চার্চে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ খ্রিস্টযজ্ঞে অংশ নেবেন বলে মনে করি। অনেক চার্চে বিকালে হাজারও মানুষ আসে যারা নানা ধর্মের। আমরা মনে করি এতে একটা সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়’ বলেন আর্চ বিশপ বিজয়।
বড়দিনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসন আমাদের ডেকেছিলেন। তারা নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং সতর্ক আছি। পুলিশসহ নিজেদের ভলান্টিয়ারও নিরাপত্তায় কাজ করবে। আমাদের কোনো শঙ্কা নেই। প্রশাসন সজাগ।’ এদিকে বড়দিন উপলক্ষ্যে রাজধানীর প্রতিটি চার্চ বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদার
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস আজ ২৫ ডিসেম্বর। বড় দিনের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। যে কোনো ধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে র্যাবের স্পেশাল ফোর্স, হেলিকপ্টার, ডগ স্কোয়াড, ও বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট। গতকাল শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, র্যাব সবসময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও দিবসে নিরাপত্তা দেওয়া এবং বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বড়দিনে দেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব পালন করবে। এদিন সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। চার্চসমূহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র্যাবের স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স, ফুট ও মোবাইল পেট্রোল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, চেকপোস্ট, সিসিটিভি মনিটরিং-এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এছাড়া, রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র্যাবের চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়। এদিকে, বড়দিন উপলক্ষে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশিদ হোসেন বাংলাদেশে ও বিশ্বের সকল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশে খৃষ্টান ধর্মালম্বীসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকেও শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে বড়দিন উদযাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আজ বড়দিন, চার্চে চার্চে উৎসব
ট্যাগস :
আজ বড়দিন
জনপ্রিয় সংবাদ