নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনী সফরে আজ মঙ্গলবার পীরগঞ্জ সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে তিনি পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিকেল ৩ টায় নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিবেন। আগামী ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট চাইতেই প্রধানমন্ত্রীর এ সফর।
এছাড়াও শেখ হাসিনা নিজ বাসভবন লালদীঘি ফতেহপুরে পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হয়ে স্বামীর কবর জিয়ারতসহ নিকট আত্মীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করবেন। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, সকালে বিমানযোগে সৈয়দপুর এসে তারাগঞ্জে দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক’র জনসভা শেষে গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে আসবেন। সেখানে স্বামীর কবর জিয়ারতের পর পরিবারের নিকট আত্মীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করে সময় কাটাবেন শেখ হাসিনা। এরপর বিকেলে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় যোগ দিবেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে বরণ এবং জনসভা সফল করতে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ জনসভায় প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মিছিল স্লোগানসহ ব্যাপক লোক সমাগম ঘটবে এবং নিকটবর্তী গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের ঢল নামবে জনসভায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর পীরগঞ্জে একই মাঠে জনসভা করেছেন। এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তরফমৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পথসভা ও লালদীঘির ফতেহপুরের জয়সদনে কর্মী সভা করেন। প্রধানমন্ত্রী ও পীরগঞ্জের পুত্রবধুর আগমনে গোটা উপজেলায় সাজ সাজ রব, চলছে পোস্টারিং ও মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারণা। শেখ হাসিনার জনসভা সফল করাসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুজিত রায় নন্দীর নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা বর্ধিত সভা করেছেন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে শনিবার রাত থেকে এসএসএফ, এনএসআই, ডিজিএফ, সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা কর্মীরা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের পুত্রবধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করে সড়কপথে সরাসরি তার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে আসবেন। সেখানে তার ছেলের অর্থায়নে নির্মিত ‘জয় সদন’ ভবনে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। প্রথমে তিনি তার প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবর জেয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কে নাতনী সাবাবা হোসেন ওহি জানান, তার দাদী, রংপুরের পুত্রবধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্বশুরবাড়িতে আগমন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিলবিলাতি আলু, খটখটিয়ার বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের ভর্তা , দেশী মাছ, পিঠাসহ ২০ ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি স্বজনদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিয়ের পর প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াসহ যে ঘরটিতে থাকতেন, সেটিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে এলেই প্রধানমন্ত্রী এই ঘরটির নানান স্মৃতি রোমন্থন করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’ এবার সময় কিছুটা কম পেলেও সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ড. ওয়াজেদ মিয়ার ভ্রাতুষ্পুত্র, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাদায়েত হোসেন বকুল জানান, তার বড় আব্বা মরহুম ড. ওয়াজেদের পারিবারিক বসতভিটায় তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটি তিন তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে জয় আসলে সেখানেই অবস্থান করেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী সেই বাড়িতেই অবস্থান করবেন।
সাদায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের অনেক স্বজন আছেন, যাদের সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারা সবাই আসবেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন।’ এ ছাড়াও পারিবারিক নানান বিষয়ে আলোচনাও হবে বলেও জানান তিনি। পৌর মেয়র এবং পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিবুল ইসলাম শামীম জানান, বেলা ৩টায় পীরগঞ্জ হাই স্কুল মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নিজের নির্বাচনি এলাকা রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জনসভা সফল করার জন্য চলছে ব্যাপক মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণা। জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মকবুল হোসেন সরদার জানান, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উপদেশ মোতাবেক মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। নারীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া দুটি মেডিক্যাল টিম জনসভাস্থলের দুপাশে অবস্থান করবে। তারা জনসভায় আগত কেউ অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।
জনসভায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হওয়ার আশা করছেন জানিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘পীরগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকেও মানুষের ঢল নামবে জনসভায়।’