প্রত্যাশা ডেস্ক: আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকেই ভারতের ঘাড়ে চাপছে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যকে সহ্য করতে হবে মোট ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা। ভারত-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তি সইয়ের আশু কোনো সম্ভাবনাও নেই।
এ অবস্থায় ভারতের ব্যবসায়ীদের অভয়বাণী শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিজ রাজ্য গুজরাটে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ওপর প্রবল চাপ বাড়বে। কিন্তু তা আমরা সহ্য করব।’
বাড়তি শুল্কের নির্দেশিকার খসড়া গতকাল মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটে চলে এসেছে। আজ বুধবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তা কার্যকর হলো। সাত পৃষ্ঠার সেই নির্দেশিকায় কেন ও কী কারণে এত বাড়তি শুল্কের বোঝা ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর চাপানো হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে।
ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণগুলো এখন আর কারও অজানা নয়। প্রথম কারণ, ভারতে আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কারণে ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং’ বলেছেন। দ্বিতীয় কারণ, সস্তায় রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা, যা ইউক্রেন যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সাহায্য করছে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এ হুমকি ভারত যে মেনে নেবে না, তা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। একাধিকবার বলেছে, জাতীয় স্বার্থ ও নাগরিক স্বার্থ দেখা ভারত সরকারের কর্তব্য। রাশিয়া থেকে তেল কেনা সেই স্বার্থ রক্ষার জন্যই।
ভারত বলেছে, তা ছাড়া ওই তেল কেনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভারত যে সাহায্য করেছে, সে কথাও যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত এ কথাও জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রও তার স্বার্থে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করেছে।
গত সোমবার (২৫ আগস্ট) গুজরাটের আহমেদাবাদে এক অনুষ্ঠানে এ ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, যতই চাপ আসুক, তার মোকাবিলা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মনির্ভরতার কথা বারবার বলেছি। সংকল্প করেছি। সেই সংকল্প ধরে রেখে আমাদের আরও এগোতে হবে। দেশকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় ভারত স্পষ্ট করে দেয়, চাপের মুখে কৃষি ও দুগ্ধজাত শিল্প উন্মুক্ত করা হবে না। এ কথা প্রধানমন্ত্রী মোদি একাধিকবার বলেছেন। সোমবার আরেকবার সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি স্বদেশি মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
গুজরাটে মোদি বলেন, আমাদের আত্মনির্ভর আর্থিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক ও ব্যবসায়ীকে স্বদেশি পণ্য ব্যবহার করতে হবে। ভারতে তৈরি পণ্য কিনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোকানি ও ব্যাপারীদের বলব, বিদেশি পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিন। মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্য বিক্রি করুন। দোকানের বাইরে বোর্ড টাঙান, যাতে লেখা থাকবে, ‘এখানে শুধু স্বদেশি পণ্য বিক্রি হয়।’ কাউকে কিছু উপহার দিতে গেলে স্বদেশে তৈরি ও উৎপাদিত পণ্য উপহার দিন।’
তবে শুধু স্বদেশিয়ানার ডাক সংকট মোচনের একমাত্র উপায় নয়। পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাই প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, সে বৈঠকে কোন কোন ক্ষেত্রকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে, কী কী করা প্রয়োজন, সব বিস্তারিত আলোচনা হয়। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিল্পমহলের প্রাথমিক হিসাবে মনে করা হচ্ছে, এ শুল্কযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের মোট ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ৫৫ শতাংশ কমে যাবে।
ভারতের এ সর্বনাশের মুখে পৌষ মাসের সুখ অনুভব করবে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও চীন। ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্টস প্রমোশন কাউন্সিলের মতে, শুধু সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে দাঁড়াতে চলেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। প্রাথমিক হিসাবে বার্ষিক রপ্তানি কমতে পারে ৪ হাজার কোটি ডলার।
সবচেয়ে চিন্তায় রয়েছে পোশাক, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, জুয়েলারি, রত্ন, গয়নাশিল্প, চিংড়ি মাছ ও সামুদ্রিক খাবার, কার্পেট, অটোমোবাইল ক্ষেত্র।
গুজরাটের বিভিন্ন জেলায় শুধু গয়না ও জুয়েলারিশিল্পেই কাজ করেন ২২ লাখ দক্ষ, আধা দক্ষ শ্রমিক। এ সংকট দেশের বেকার সমস্যাকে তীব্রতর করে তুলতে পারে। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই পণ্য পরিষেবা করে (জিএসটি) বদল ঘটানোর কথা ভেবেছে। অভ্যন্তরীণ বাজার বৃদ্ধির পাশাপাশি চলছে বিকল্প বাজারের সন্ধান।
সানা/আপ্র/২৭/৮/২৫